,

দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে সরকার সম্পূর্ণভাবে ব্যর্থ

‘তিনটি পণ্যের মূল্য বেধে দিয়ে কোনো লাভ হবে না, দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে সরকার সম্পূর্ণভাবে ব্যর্থ হয়েছে। দ্রব্যমূল্য সহনীয় পর্যায়ে রাখতে আমি ব্যবস্থা নিয়েছিলাম। যখন বেড়েছে, তখন জনগণ জানতো যে বেড়েছে। যখম কমেছে বা কমা উচিত ছিল তখনও তা জনগণ জেনেছে। তখন মানুষের আস্থা ছিল।’

শুক্রবার (১৫ সেপ্টেম্বর) বেলা পৌনে ১টায় রংপুর নগরীর দর্শনাস্থ পল্লী নিবাসে জাতীয় পার্টির প্রতিষ্ঠাতা ও সাবেক রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের কবর জিয়ারত শেষে সাংবাদিকদের একথা বলেন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদের।

জি এম কাদের বলেন, ‘আমার মনে হয় বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সম্পূর্ণভাবে ব্যর্থ হয়েছে। সরকার সম্পূর্ণভাবে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হয়েছে। এখন নানান অজুহাত দিয়ে দাম একেবারেই নিয়ন্ত্রণহীন করা হচ্ছে।’

সরকারিভাবে তিন পণ্যের দাম বেধে দেয়া প্রসঙ্গে সাবেক এই বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, ‘দাম যেটা বেধে দেয়া হয়েছে, আমি মনে করি এটা কখনোই সফল হওয়া সম্ভব নয়। দাম বেধে দেয়ার একটা নিয়ম ছিল, কতটুকু দাম রিজেনবেল হতে পারে। হিসাব-নিকাশ করে সেটা জানানো হয়। রিজেনবলের বাইরে কেউ নিলে একটা শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে হয়। রিজেনবেল যেটাকে বলা হবে তা যুক্তিসঙ্গত দাম। সেটার জন্য অনেক পরিশ্রম করতে হয়, যথেষ্ট ঘাটঘাটি করতে হয়, ডাটা নিতে হয়, ইভেন ডিমান্ড অ্যান্ড সাপ্লাইয়ের ওপর তা নির্ধারণ হয়। যদি সেটা ঠিক না থাকে, তাহলে আমি যতই চাপাচাপি করি এটা স্বাভাবিকভাবে ঠিক হবে না।’

যাছাই-বাছাই না করেই তিন পন্যের দাম বেধে দেয়া হয়েছে উল্লেখ করে জি এম কাদের বলেন, ‘ওনারা এসব যাচাই-বাছাই করেছেন কি-না আমি জানি না। আমার সন্দেহ, এটা ওনারা করেননি। সঠিকভাবে না বুঝেই কিছু একটা দাম নির্ধারণ করেছেন। প্রয়োজন সাপ্লাই ঠিক রাখা। রিজেনবেল প্রাইজ দাও। প্রাইজ ততটুকু নিচে নামাও ঠিক নয়, যাতে ব্যবসায়ীরা লোকসান করবে। আবার বেশি হওয়ায় ঠিক নয়, তাতে ব্যবাসীয়ারা অধিক মুনাফা করবে এবং জনগণ সাফার করবে। এটা দেখার যাদের দায়িত্ব তারা সঠিকভাবে করছেন বলে আমার মনে হচ্ছে না। এ কারণে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রিত হচ্ছে না। আমার সময়ে এটা রিফলেকশন হতো। কিন্তু এখন তারা জিনিসটাকে সঠিকভাবে হ্যান্ডেল করতে পারছে না।’

সিন্ডিকেট সরকারকে কোনো পাত্তা দিচ্ছে না উল্লেখ করে জি এম কাদের বলেন, ‘যেখানে সরকারের ইনন্টারফেয়ার করার কথা, সরকারের কিছু দায়িত্ব থাকে। ওই সব জায়গায় তারা সঠিকভাবে কিছু করছে, এ ধরনের কোনো প্রমাণ আমরা পাইনি। এ কারণে দ্রব্যমূল্য সরকার যাই বেধে দিয়ে থাকুক, বাজারে এর চেয়ে মূল্য বেশি। কৃষকরা অনেক সময় কম দামে দিচ্ছে শহরে তা অনেক বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে এবং সেটা করা হচ্ছে অযৌক্তিকভাবে। তা নিয়ন্ত্রণে সরকারের কোনো রকম কোনো বন্দোবস্ত বা পদক্ষেপ জনগণের চোখে পড়ছে না। দ্রব্যমূল্যের চাপে মানুষ অত্যন্ত খারাপ অবস্থায় আছে। এটা একটা দুর্বিসহ অবস্থা।’

জাতীয় নির্বাচন প্রসঙ্গে সংসদের বিরোধী দলীয় উপনেতা বলেন, ‘আমরা এখন পর্যন্ত চিন্তা করছি ৩০০ আসনে নির্বাচন করব। ভবিষ্যতে অবস্থা বুঝে ব্যবস্থা হবে। যেহেতু এখনো রাজনৈতিক পরিস্থিতি অনেক অস্থিতিশীল, অনিশ্চিত, অস্বচ্ছ। সবকিছু জেনে বিবেচনায় নিতে হবে। সবাই আমার মনে হয় এই অনিশ্চয়তার দিকে তাকিয়ে আছে।’

তিনি বলেন, সরকার এক ধরনের নির্বাচন করতে চাচ্ছে, সরকারের বিপক্ষ আরেক ধরনের নির্বাচন করতে চাইছে। কোন পদ্ধতিতে আসলে নির্বাচন হবে, সেটাই আমরা জানি না। নির্বাচন সঠিক পথে সঠিক সময়ে হবে কি-না, এটা নিয়ে জনগণের মধ্যে অনেক কানাঘুষা আছে সন্দেহ আছে, আশঙ্কা আছে। সব মিলিয়ে আমরা এখনই কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারছি না সঠিকভাবে। শেষ পর্যন্ত কে লড়বেন আর কে থাকবেন সেটাও অনিশ্চিত। রংপুর-৩ আসনে প্রার্থী চূড়ান্ত নিয়েও কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি।’

সম্প্রতি রওশন এরশাদ ৩০০ আসনে সংসদ নির্বাচনে অংশ নেয়া প্রসঙ্গে জি এম কাদের বলেন, ‘উনি (রওশন এরশাদ) যে কেন বলেছেন তা আমি জানি না। ওনার এ ধরনের সিদ্ধান্তের কথা বলার কোনো অথরিটি নেই, কর্তৃত্ব নেই। সেই ক্ষমতাও নেই। একজন সম্মানি ব্যক্তি হিসেবে আমরা ওনাকে পৃষ্ঠপোষক করে রেখেছি। ওনার কোনো ডিসিশন মেকিংয়ের ক্ষমতা নেই। ওনি মাঝে মাঝে আমাদের বলতে পারেন, ওনার কথাগুলো আমরা গ্রহণ করতেও পারি, নাও করতে পারি। এ ধরনের কোনো বাধ্যবাধকতা নেই। আমাদের দলের কোনো সিদ্ধান্ত হলে সেটা প্রেসিডিয়ামের সিদ্ধান্তের আলোকেই হবে। প্রেসিডিয়ামের সিদ্ধান্তে বলা হয়েছে, যে কোনো সিদ্ধান্ত চেয়ারম্যান অথবা মহাসচিব জানাবেন। অন্য কেউ যদি কোনো কিছু বলেন সেটা তার ব্যক্তিগত মতামত।’

 

এই বিভাগের আরও খবর