,

সোনার বাংলা গড়ার ‘সোনার মানুষ’ তৈরি হচ্ছে: প্রধানমন্ত্রী

ফাইল ফটো

বিডিনিউজ ১০ ডটকম: ১৩ বছর ধরে একটানা ক্ষমতায় থাকার কারণে দেশের এবং জনগণের জীবনমানের যে উন্নয়ন করা সম্ভব হয়েছে, তা বড় অর্জন হিসেবে দেখছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ ধারাবাহিকতা ধরে রেখে দেশকে উন্নত করাই নিজের লক্ষ্য বলেও জানান তিনি।

রাজধানীর সেগুনবাগিচার আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটে বৃহস্পতিবার সকালে মুজিববর্ষ উপলক্ষে জাতীয় বাস্তবায়ন কমিটির প্রকাশিত গ্রন্থের প্রকাশনা উৎসব, বঙ্গবন্ধু স্কলার বৃত্তি প্রদান এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব কুইজের পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন।

গণভবন প্রান্ত থেকে ভিডিও কনফারেন্সে যুক্ত ছিলেন সরকারপ্রধান।

সোনার বাংলা গড়তে জাতির পিতা বঙ্গববন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যে সোনার মানুষ চেয়েছেন, সেই মানুষ এখন তৈরি হচ্ছে বলেও মনে করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তার আশা, নতুন প্রজন্ম ২০৪১ সালের সৈনিক হিসেবে নিজেদের বঙ্গবন্ধুর আদর্শে গড়ে তুলে দেশকে করবে উন্নত, সমৃদ্ধ।

শেখ হাসিনা বলেন, ‘বাংলাদেশের মানুষের এখন যে অবস্থা, সেই অবস্থা কিন্তু ১৩/১৪ বছর আগেও এমন ছিল না, এটা হচ্ছে বাস্তবতা। আমরা সেই পরিবর্তন আনতে পেরেছি। এটাই আমাদের সব থেকে বড় পাওয়া। এটা অব্যাহত রাখতে হবে। আমরা উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা পেয়েছি।’

জাতির পিতাসহ যারা দেশের স্বাধীনতায় আত্মত্যাগ করেছেন, তাদের সেই ত্যাগ বৃথা যেতে পারে না বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘একটাই তো আদর্শ, লক্ষ্য, বাংলাদেশ হবে উন্নত-সমৃদ্ধ দেশ। অসাম্প্রদায়িক চেতনার দেশ। শিক্ষায়, জ্ঞানে-বিজ্ঞানে, অর্থনৈতিকভাবে বাংলাদেশের মানুষ উন্নত হবে, সমৃদ্ধ জাতি হিসেবে বিশ্ব দরবারে মাথা উঁচু করে চলবে।’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমার টার্গেট ছিল ২০২১ সাল অর্থাৎ স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর সময়কালের মধ্যে বাংলাদেশকে একটি অবস্থানে নিয়ে আসার। এরপর আমরা দিয়েছি ২০৪১ সাল। নতুন প্রজন্ম ৪১ সালের সৈনিক হবে, দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাবে। উন্নয়নশীল দেশ থেকে ধাপে ধাপে আমরা উন্নত দেশে উন্নীত হব এবং সেটা করা খুব কঠিন কাজ না। ইনশাল্লাহ আমরা করতে পারব।’

তিনি বলেন, ‘জাতির পিতার সোনার বাংলা গড়ার জন্য সোনার মানুষ চেয়েছেন সোনার মানুষ এখন তৈরি হচ্ছে। সেটাই হচ্ছে সবথেকে বড় কথা।’

গত ১৩ বছর ধরে টানা ক্ষমতায় থাকার কারণে দেশে ‘একটি বিরাট পরিবর্তন’ এসেছে বলে মনে করেন বঙ্গবন্ধুকন্যা।

তিনি বলেন, ‘একদিকে যেমন দারিদ্র্যের হার আমরা কমাতে পেরেছি, আরেকদিকে সাক্ষরতার হার বাড়াতে পেরেছি। মানুষের খাদ্য নিরাপত্তা দিতে পেরেছি, পুষ্টি নিরাপত্তা দিতে পেরেছি। সেই সঙ্গে সঙ্গে আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারের ওপর যে গুরত্ব গিয়েছিলাম সেখানে আমরা যথেষ্ট সফল হয়েছি। আজকে মানুষ প্রযুক্তির ব্যবহার করছে এবং এই প্রযুক্তির মাধ্যমে পুরো বিশ্ব সবার হাতের মুঠোয় চলে আসছে। বিশ্বকে জানার সুযোগ পাচ্ছে। বাংলাদেশ এখন আর অন্ধকারে পড়ে থাকছে না।’

নিজের উন্নয়ন দর্শন নিয়ে সরকারপ্রধান বলেন, ‘আমাদের উন্নয়ন কিন্তু শুধু শহরভিত্তিক না, আমরা তৃণমূল থেকে উন্নয়নটা করে যাচ্ছি।’

২০২০ সাল জাতীয় জীবনের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সময় বলে মনে করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন করতে পেরেছি। ব্যক্তিগতভাবে আমি বলতে পারি, আমি এবং আমার ছোটবোন শেখ রেহেনার জন্য এটা কত বড় পাওয়া, তা ভাষায় বলে প্রকাশ করতে পারব না।’

করোনভাইরাস মহামারি বাধা হয়ে দাঁড়ানোর পরও বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন করতে পারায় দেশের জনগণের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘ভোট দিয়ে তারা নির্বাচিত করেছিল বলেই আজকে আমরা সরকার গঠন করতে পেরেছি এবং এই বিরল সুযোগটা পেয়েছি।’

বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে স্মারকগ্রন্থের মোড়ক উন্মোচন

অনুষ্ঠানে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকীতে জাতীয় বাস্তবায়ন কমিটির উদ্যোগে প্রকাশিত বিভিন্ন স্মারকগ্রন্থগুলোর মোড়ক উন্মোচন করেন প্রধানমন্ত্রী।

এ প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমি মনে করি এ প্রকাশনাগুলো শিশু, কিশোর, যুবক, বয়োবৃদ্ধ সবার জন্য। এই লেখাগুলো পড়লে পর তারা জাতির পিতা সম্পর্কে জানতে পারবেন, ইতিহাস সম্পর্কে জানতে পারবেন।’

১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের পর জাতির পিতার নাম মুছেই ফেলা হয়েছে বলেও জানান প্রধানমন্ত্রী। বলেন, ‘আমাদের ভাষা আন্দোলন, স্বাধীনতা সংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধে বিজয়ের পর- আমাদের বিজয়গাঁথা, বিজয়ের ইতিহাস কিন্তু পরিবর্তন হয়ে গিয়েছিল প্রায় ২১ বছর। কয়েকটা জেনারেশন আছে, যারা হয়তো কিছু জানতে পারিনি। এই লেখা বা প্রকাশনার মাধ্যমে আজকের প্রজন্ম অনেক কিছু জানতে পারবে এটাই হচ্ছে বড় কথা।’

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর ওপর রচিত সাহিত্যকর্ম প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বিস্ময় প্রকাশ করে বলেন, ‘আমি জানি না, পৃথিবীতে আর কোনো নেতা আছেন কিনা, যার নামে এত গান, এত কবিতা, এত রচনা হয়েছে। রচনাগুলো লোকসাহিত্য থেকে শুরু করে, বিজ্ঞান থেকে শুরু করে সব ক্ষেত্রে বিস্তৃত।’

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অবদানকে মানুষ আন্তরিকতার সঙ্গে গ্রহণ করেছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আমি মনে করি শুধু গ্রহণ করলেই হবে না, আমাদের নতুন প্রজন্ম এই আদর্শে আদর্শবান হয়ে দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে এই বাংলাদেশকে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাবে।’

বঙ্গবন্ধু স্কলার বৃত্তি

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীনে প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষা সহায়তা ট্রাস্টের ব্যবস্থাপনায় ১৩টি অনুষদে ১৩ জনকে দেয়া হয় বঙ্গবন্ধু স্কলার বৃত্তি। স্কলারদের প্রত্যেককে দেয়া হয় সম্মাননা স্মারক, তিন লাখ টাকার চেক এবং সনদপত্র। প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে বঙ্গবন্ধু স্কলারদের হাতে বৃত্তি তুলে দেন জাতীয় সংসদের স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী।

শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমি সবসময় মনে করি, আমাদের দেশে শিক্ষা এবং গবেষণা একান্তভাবে প্রয়োজন। এটা আমাদের শিখিয়েছেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। কারণ তিনি শিক্ষাকে সব থেকে বেশি গুরুত্ব দিয়েছিলেন।’

এই আয়োজেনের মধ্য দিয়ে শিক্ষার্থীরা উৎসাহিত হবে বলে মনে করেন প্রধানমন্ত্রী।

শেখ হাসিনা বলেন, ‘এই বঙ্গবন্ধু স্কলার বৃত্তিটাও অব্যাহত রাখব। আমাদের প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষা সহায়তা ট্রাস্ট ফান্ডে আলাদা একটা বরাদ্দ রেখে দেব। যারা গবেষণা করে কিছু আবিষ্কার করতে পারবে, ভবিষ্যতে আরও করবে তাদেরকে আমরা দেব।’

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব কুইজ

২০২০ সালের ১ ডিসেম্বর থেকে ২০২১ সালের ১০ মার্চ পর্যন্ত মোট ১০০ দিন ধরে অনলাইনে চলে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব কুইজ। যেখানে দেশের বিভিন্ন শ্রেণি পেশার লাখো মানুষ অংশ নিয়েছে। ৭ লাখ ৬৩ হাজার ৪০৬ জন সঠিক উত্তরদাতার মধ্যে কম্পিউটারাজাইড লটারির মাধ্যমে ১০০ জনকে চূড়ান্ত পুরস্কৃত করা হয়। বিজয়ীদের হাতে প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে পুরস্কার তুলে দেন জাতীয় সংসদের স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী।

প্রত্যেক বিজয়ীকে দেয়া হয় একটি ল্যাপটপ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সই করা সনদপত্র। অনুষ্ঠানে ১০জনকে পুরস্কৃত করা হয়। অবশিষ্ট ৯০ জনের কাছে পুরস্কৃত পৌঁছে দেবে আয়োজকেরা।

বঙ্গবন্ধু কুইজ আয়োজনের এ ধারণাটা বেশ পছন্দ হয়েছে প্রধানমন্ত্রীর। তিনি বলেন ‘এটা বেশ কঠিন কাজ ছিল। নানা ধরনের কথা আসছে, সেগুলো যাচাই-বাছাই করা, সেখান থেকে কাদেরকে পুরস্কার দেয়া হবে, সেগুলো নির্দিষ্ট করা যথেষ্ট খাটুনির কাজ, কোনো সন্দেহ নেই।

‘প্রশ্নগুলো তৈরি করা সেগুলো অনলাইনে দিয়ে দেয়া, সেখান থেকে আবার উত্তরগুলো নিয়ে সেগুলো প্রস্তুত করা, আমি মনে করি এটা কঠিন দায়িত্ব। অত্যন্ত আন্তরিকতার সঙ্গে, যোগ্যতার সঙ্গে পালন করেছেন। সেজন্য সবাইকে আমি আন্তরিক ধন্যবাদ জানাচ্ছি।’

এই বিভাগের আরও খবর