,

দেড় মাস পর আবার শুরু প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পাঠদান

ফাইল ফটো

নিজস্ব প্রতিবেদক: প্রায় দেড় মাস বন্ধ থাকার পর আজ থেকে শুরু হয়েছে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সশরীরে পাঠদান কর্মসূচি। প্রথম থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের ক্লাস হবে প্রতিদিন।

প্রাক্-প্রাথমিক স্তরের শিক্ষার্থীদের বিদ্যালয়ে আসা আপাতত বন্ধ থাকছে। আরও দুই সপ্তাহ করোনা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে প্রাক্-প্রাথমিক স্তরের শিক্ষার্থীদের বিদ্যালয়ে আনা হবে। এর আগে করোনা সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় গত ২১শে জানুয়ারি থেকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ছুটি ঘোষণা করে সরকার। পহেলা মার্চ থেকে প্রাথমিক বিদ্যালয় খোলার ঘোষণা দেওয়া থাকলেও এদিন শবে মিরাজ হওয়ায় তা এক দিন পেছানো হয়। সব বিদ্যালয় দুই পালায় পরিচালিত হবে এবং টিকা দেওয়া ছাড়া কোনো শিক্ষক বিদ্যালয়ে উপস্থিত হতে পারবেন না বলে জানিয়েছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর।

চলতি বছরের শুরুতে নতুন উদ্যমে স্কুলে ভর্তি হয় ক্ষুদে শিক্ষার্থীরা। কিন্তু সেখানে বাদ সাধে করোনার নতুন ধরণ ওমিক্রন। বাধ্য হয়েই সব ধরণের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করে সরকার। প্রায় দুই মাস পর দেড় কোটি শিক্ষার্থী স্কুলে যাওয়ার সুযোগ পাচ্ছে।

বুধবার (২ মার্চ) থেকে শুরু হচ্ছে প্রাথমিকস্তরের প্রথম থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত শ্রেণিকক্ষে পাঠদান। তবে, করোনার ক্ষতি পোষাতে এ বছর ২০ রমজান পর্যন্ত চলবে প্রাথমিকের ক্লাস। ২১ রমজান থেকে শুরু হবে ঈদুল ফিতরের ছুটি। ঈদের ছুটি শেষে আবার যথারীতি ক্লাস শুরু হবে। আর প্রাক-প্রাথমিকে (প্লে, নার্সারি, কেজি) ক্লাস শুরু হবে এর দুই সপ্তাহ পর। প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় এ তথ্য নিশ্চিত করেছে।

এ বিষয়ে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা মাহবুবুর রহমান বলেন, এবার প্রাথমিকে স্বাভাবিক শ্রেণি কার্যক্রমে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। শিক্ষার্থী মাস্ক পরানো বাধ্যতামূলক। বিষয়টি নিশ্চিত করবেন শিক্ষক ও অভিভাবকরা।

প্রাথমিক শিক্ষক সংগঠনের নেতা মোহাম্মদ সামছুদ্দিন বলেন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার নির্দেশনায় সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত শিক্ষকদের স্কুলে থাকার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। এতে অনেক শিক্ষক ও অভিভাবক বিড়ম্বনার সম্মুখীন হবে বলে তিনি দাবি করেন।

করোনার নতুন ধরন ওমিক্রনের প্রভাবে জানুয়ারির শুরু থেকে দেশে আবার সংক্রমণ দ্রুত বাড়তে শুরু করলে গত ২১ জানুয়ারি দেশের সব স্কুল, কলেজ ৬ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত বন্ধ ঘোষণা করে সরকার। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকেও একই ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়।

দেশে ব্যাপক বিধিনিষেধের মধ্যে ২০২০ সালের মার্চে সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দিয়েছিল সরকার। করোনা পরিস্থিতির উন্নতি হওয়ায় দেড় বছর পর গত ১২ সেপ্টেম্বর থেকে আবার শ্রেণিকক্ষে ফিরতে শুরু করে শিক্ষার্থীরা। এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষাও হয়।

শিশুদের মধ্যে সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় সরকার ২১ জানুয়ারি থেকে আবার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধের সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হয়েছে জানিয়েছিলেন শিক্ষামন্ত্রী। পরে করোনা সংক্রমণের হার কমায় ২২ ফেব্রুয়ারি থেকে স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে সশরীরে পাঠদান শুরু হয়।

এর আগে গত বৃহস্পতিবার করোনাভাইরাস-সংক্রান্ত বিধিনিষেধ তুলে নিয়ে ২২ ফেব্রুয়ারি থেকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোয় সশরীরে পাঠদান শুরুর সিদ্ধান্তের কথা জানায় সরকার। তবে ১২ বছরের ওপরে কভিডের পূর্ণ ডোজের টিকা নেয়া শিক্ষার্থীরাই কেবল সরাসরি শ্রেণী কার্যক্রমে অংশ নিতে পারবে বলে জানানো হয়। এক্ষেত্রে যারা দুই ডোজ টিকা পায়নি, তাদের ক্লাস চলবে অনলাইনে বা টিভিতে।

বৃহস্পতিবার সচিবালয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা জানান শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি। তিনি বলেন, কভিড-১৯-সংক্রান্ত জাতীয় কারিগরি কমিটির সঙ্গে আমাদের বৈঠক হয়েছে। যেহেতু সংক্রমণ নিম্নমুখী, তাই তারা ২২ ফেব্রুয়ারি থেকে শ্রেণীকক্ষে সশরীরে পাঠদান শুরু করার পরামর্শ দিয়েছেন। সে অনুযায়ী ওইদিন স্কুল-কলেজে সশরীরে পাঠদান শুরু হবে। তবে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের এখনই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নেয়া হবে না। আপাতত তারা অনলাইনেই ক্লাস করবে। ২২ ফেব্রুয়ারি স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় খোলার ১০ দিন বা দুই সপ্তাহ পর আমরা প্রাথমিকের শিক্ষার্থীদের শ্রেণীকক্ষে নিয়ে আসতে পারব বলে আশা করছি।

সশরীরে পাঠদানের ক্ষেত্রে কঠোরভাবে স্বাস্থ্যবিধি মানতে হবে উল্লেখ করে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, আমরা ক্লাসের সংখ্যা আগের মতোই কম রাখব। ধীরে ধীরে পরিস্থিতি অনুযায়ী বাড়ানোর চেষ্টা করব।

প্রাথমিকের শিক্ষার্থীদের বিষয়ে দীপু মনি বলেন, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নির্দেশনা না থাকায় প্রাথমিকের শিক্ষার্থীদের এখনো টিকার আওতায় আনা যায়নি। তবে এরই মধ্যে ১২ বছরের কম বয়সী শিক্ষার্থীদের টিকা দেয়ার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। বিষয়টি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তর দেখছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার অনুমোদন পেলে তাদেরও টিকার আওতায় আনা হবে।

এর আগে বুধবার রাতে কভিড-১৯-বিষয়ক জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটির একটি ভার্চুয়াল বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেয়ার পরামর্শ দেয়া হয়।

দেড় বছরেরও বেশি সময় বন্ধ থাকার পর গত ১২ সেপ্টেম্বর খুলে দেয়া হয় দেশের মাধ্যমিক থেকে উচ্চপর্যায়ের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো। তবে ওমিক্রণের বিস্তারের পর কভিড-১৯ সংক্রমণ আবারো বেড়ে যাওয়ায় গত ১৩ জানুয়ারি থেকে ১১ দফা বিধিনিষেধ আরোপ করে সরকার। ২১ জানুয়ারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধসহ নতুন করে পাঁচ দফা নির্দেশনা দেয় মন্ত্রিপিরষদ বিভাগ। তাতে ৬ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখার নির্দেশ দেয়া হয়। এরপর আরো দুই সপ্তাহ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছুটি বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেয় সরকার।

এই বিভাগের আরও খবর