,

ট্রেন ছাড়ল দেরিতে, গরমে ভোগান্তি চরমে

নিজস্ব প্রতিবেদক: ঈদযাত্রা শুরুর প্রথম দিনে বুধবার তিনটি ট্রেন বিলম্বে ছেড়ে যায় কমলাপুর স্টেশন। দ্বিতীয় দিনে বৃহস্পতিবারও এমন ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটল। দুই ঘণ্টা বিলম্বে ছাড়ল নীলসাগর এক্সপ্রেস। এতে করে চরম ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে যাত্রীদের।

চিলাহাটি অভিমুখী নীলসাগর এক্সপ্রেস সকাল ৬টা ৪০ মিনিটে কমলাপুর ছাড়ার কথা থাকলেও ২ ঘণ্টা ১০ মিনিট বিলম্বে স্টেশন ছেড়ে গেছে। সকাল ৮টা ৫২ মিনিটে স্টেশন ছেড়ে যাওয়ার আগ পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয়েছে যাত্রীদের। আর মানুষের ভিড় ও ভ্যাপসা গরমে ভোগান্তিতে পড়েন নারী, বৃদ্ধ ও শিশুরা। এ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন তারা।

তারেক হাসান নামে এক যাত্রী বলেন, ‘বলতে গেলে একপ্রকার যুদ্ধ করেই টিকিট পেয়েছি। ভেবেছিলাম, আর কষ্ট করতে হবে না। সকাল সকাল ট্রেনে হাওয়া খেতে খেতে বাড়ি যাব। কিন্তু এখানে এসে দেখি ভোগান্তির শেষ নাই।’

ক্ষোভ প্রকাশ করে তিনি বলেন, ‘এ দেশের কোনো সিস্টেম ঠিক নেই। সময়ের ট্রেন সময়ে আসে না। একদিকে গরম অপর দিকে ভালো টয়লেট নেই স্টেশনের ভেতরে। কীভাবে ট্রেনকে আধুনিক সেবার সঙ্গে তুলনা করে আমি জানি না।’

তিনি বলেন, ‘পৃথিবীর অন্যান্য দেশে রেলসেবা কত উন্নত! আপনি যদি আমাদের প্রতিবেশী দেশ ভারতেও যান, দেখবেন রেলসেবা কত ভালো। সবকিছু সময়মতো হচ্ছে।’

সকাল ৮টা ৩৮ মিনিটের দিকে কথা হয় ট্রেনের আরেক যাত্রী জিল্লুর রহমানের সঙ্গে। তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘ঘুমিয়ে পড়ে যদি ট্রেন মিস করি এই আশঙ্কায় ভোরে সেহেরি খেয়ে আর দেরি করিনি। স্টেশনে চলে এসেছি। কিন্তু ট্রেন ৬টা ৪০ মিনিটে ছাড়ার কথা থাকলেও এখনও ছাড়েনি।’

শিশু বাচ্চাকে নিয়ে ভোগান্তির কথা জানালেন শাহানারা। তিনি বলেন, ‘বোরখা পরে ভ্যাপসা গরমে অপেক্ষা করা খুবই কষ্টকর। আমি তাও মানিয়ে নিচ্ছি কিন্তু বাচ্চারা কষ্ট পাচ্ছে। যত বয়স্ক মানুষ, শিশু আছে তারা সবাই কষ্টে আছে।’

দিনের শুরুর প্রায় সব কয়টি ট্রেনই আজ সময়মতো স্টেশন ছেড়ে গেছে। অনেক ট্রেন সময়ের আগেই প্ল্যাটফর্মে এসে দাঁড়ানো অবস্থায় দেখা গেছে। সেসব ট্রেনের যাত্রীদের মাঝে বাড়ি ফেরার উচ্ছ্বাস দেখা গেছে শতভাগ।

গতকাল বুধবার ঈদযাত্রার প্রথম দিন সকালেই তিন ট্রেন বিলম্বে স্টেশন ছাড়ে। এসব ট্রেনের মধ্য সবচেয়ে বেশি দেরিতে ছাড়ে রংপুর এক্সপ্রেস ও ধূমকেতু এক্সপ্রেস। এ ছাড়া বিলম্বে ট্রেন ছাড়ে সুন্দরবন এক্সপ্রেস।

চট্টগ্রাম অভিমুখী কর্ণফুলী কমিউটার ট্রেন ৮টা ৪৫ মিনিটে কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন ছেড়ে যাবার কথা থাকলেও ৯টা ৩০ মিনিট পর্যন্ত ট্রেনটি স্টেশনেই অপেক্ষা করছিল।

রাজশাহী কমিউটার ট্রেনটি দুপুর ১২টা ২০ মিনিটে ছাড়ার কথা থাকলেও ১ ঘণ্টা ৩৫ মিনিট পর ১টা ৫৫ মিনিটও ছাড়েনি কমলাপুর রেলস্টেশন থেকে। বেলা ২টা ৫ মিনিটে ছেড়ে যায় ট্রেনটি।

রাজশাহী কমিউটার ট্রেনে টাঙ্গাইলের মির্জাপুরে যাবেন শাহাদাত হোসেন।  তিনি বলেন, ‘প্রায় দেড় ঘণ্টা ধরে গরমে অস্থির অবস্থা। প্রায়ই এই ট্রেনটা লেট করে।’

আজ কমলাপুর স্টেশনে ১১৮টি ট্রেন আসা-যাওয়া করবে বলেও জানান কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনের ভারপ্রাপ্ত ম্যানেজার ও সহকারী পরিবহন কর্মকর্তা আমিনুল হক।

একটি ট্রেনের বিলম্ব হয়েছে জানিয়ে স্টেশনের ভারপ্রাপ্ত ম্যানেজার আমিনুল হক বলেন, নীলসাগর এক্সপ্রেস ট্রেনটি কিছুটা বিলম্বে ঢাকায় এসেছে। আবার ৩০ মিনিটের মধ্যেই আমরা ট্রেনটি গন্তব্যের উদ্দেশ্যে ছেড়ে দিয়েছি। এই ট্রেনটিতে আসলে অন্য সময়ের চেয়ে দুই-তিন গুণ যাত্রীর চাপ ছিল। যেখানে আমাদের যাত্রাবিরতির ২ মিনিট স্টপেজ থাকার কথা। যাত্রীবেশী হওয়ার কারণে সেখানে বেশি সময় লেগেছে। এছাড়া পশ্চিমাঞ্চলের ট্রেনগুলোতে লাইন ক্যাপাচিটি সিঙ্গেল হওয়া বিলম্ব হওয়ার কারণ।

বৃহস্পতিবার ভোর ৬টা থেকেই ট্রেনযোগে বাড়ি ফেরা মানুষের যাত্রা শুরু হয়েছে। ঈদযাত্রার দ্বিতীয় দিনের মতো ট্রেনযোগে বাড়ি ফিরতে শুরু করেছে ঘরমুখো মানুষ।

এবারের ঈদযাত্রায় প্রতিদিন ৫৩ হাজার যাত্রী ট্রেনে রাজধানী ঢাকা থেকে দেশের বিভিন্ন গন্তব্যের উদ্দেশে যাত্রা করবেন। এর মধ্যে শুধু আন্তনগর ট্রেনে আসন থাকবে প্রায় ২৭ হাজারের বেশি।

ট্রেনের ফিরতি টিকিট বিক্রি শুরু হবে ১ মে থেকে।

এই বিভাগের আরও খবর