,

২য় ধাপে ৮৩৬টি ইউপিতে ভোট আজ

নিজস্ব প্রতিবেদক: চলমান ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনে দ্বিতীয় ধাপে ৮৩৫ ইউনিয়নে ভোট গ্রহণ আজ। সকাল ৮টা থেকে বিরতিহীনভাবে বিকাল ৪টা পর্যন্ত ভোট গ্রহণ চলবে। স্থানীয় সরকারের এই নির্বাচনকে ঘিরে যেমন ভোট উৎসব, তেমনি টানটান উত্তেজনাও বিরাজ করছে। আজকের ভোট ঘিরে সহিংসতার শঙ্কাও করা হচ্ছে। নির্বাচনের আগেই যে মাত্রায় সহিংসতা হয়েছে তা দেখেই এই আশঙ্কা।

দলীয় প্রতীক ছাড়া বিএনপি অংশ গ্রহণ করলেও তুলনামূলকভাবে খুব কম। এই নির্বাচনে নৌকার বিপক্ষে মূল প্রতিদ্ধন্ধিতায় রয়েছেন নিজ দলের বিদ্রোহী প্রার্থী। দ্বিতীয় ধাপের ভোটে তারাই আলোচনার তুঙ্গে। ৮৩৫ ইউনিয়নের মধ্যে ৬০০ টিতেই মূল প্রতিদ্ধন্ধিতা হবে আওয়ামী লীগ বনাম আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থীর মধ্যে। কেন্দ্র থেকে সতর্কতা, হুঁশিয়ারি কিছুই দমাতে পারেনি তাদের। এর প্রধান কারণ স্থানীয় পর্যায়ে এমপি বা কেন্দ্রীয় নেতাদের গ্রুপিং। তাই প্রথম ধাপের দুই দফার নির্বাচনের তুলনায় এবার ত্রিমুখী সংঘর্ষের আশঙ্কা প্রবল।

নির্বাচন কমিশন জানিয়েছে, দ্বিতীয় ধাপে ৮৪৮ ইউপি ভোটের তফসিল ঘোষণা করা হলেও আজ ভোট গ্রহণ হবে ৮৩৫ ইউপিতে। কেননা ৫ ইউপিতে সব পদে জনপ্রতিনিধিরা বিনাপ্রতিদ্ধন্ধিতায় নির্বাচিত হয়েছেন। এ ছাড়া ৭ ইউপি ভোট স্থগিত করেছে ইসি এবং ১ ইউপির ভোট বাতিল করা হয়েছে। সব মিলে আজ ৮৩৫ ইউপিতে ভোট হবে। দ্বিতীয় ধাপে মোট ভোট কেন্দ্র হচ্ছে ৮ হাজার ৪৯২টি। মোট ভোটার হচ্ছে ১ কোটি ৬৫ লাখ ৯৫ হাজার ২২৬ জন। এর মধ্যে এ ধাপে ১৬ জন তৃতীয় লিঙ্গের ভোটার রয়েছেন। ৮৩৫ ইউপিতে  চেয়ারম্যান প্রার্থী রয়েছেন ৩ হাজার ৩১০ জন। সংরক্ষিত নারী প্রার্থী ৯ হাজার ১৬১ জন এবং সাধারণ ওয়ার্ডে প্রার্থী রয়েছেন ২৮ হাজার ৭৪৭ জন। এ নির্বাচনে মোট ৪১ হাজার ২১৮ জন প্রার্থী প্রতিদ্ধন্ধিতা করছেন।

ঘরে ঘরে পাড়া মহল্লায় পাহারা দিয়ে নির্বাচনী সহিংসতা ঠেকানো সম্ভব নয় বলে মন্তব্য করেছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কে এম নূরুল হুদা। গতকাল তিনি আগারগাঁওয়ের নির্বাচন ভবনে সাংবাদিকদের এ কথা বলেন। ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) দ্বিতীয় ধাপের নির্বাচন ঘিরে বিভিন্ন এলাকায় উত্তেজনা, সংঘর্ষ ও সহিংসতার ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে সিইসির এমন বক্তব্য এলো। নরসিংদীসহ কয়েকটি ঘটনার সংঘাতের প্রসঙ্গ টেনে নূরুল হুদা বলেন, ‘এ জাতীয় ঘটনা এভাবে পাহারা দিয়ে ঠেকানো যায় না, বাস্তবতা হলো এটা। ঘরে ঘরে মহল্লায় মহল্লায় পুলিশ দিয়ে পাহারা দিয়ে এ জাতীয় অপ্রীতিকর ঘটনা থামানো যায় না। এর একমাত্র উপায় হলো নির্বাচনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সহনশীলতা। নির্বাচনসুলভ আচরণ করতে হবে।

স্থানীয় নির্বাচনে উত্তেজনা প্রতিদ্ধন্ধিতার বহিঃপ্রকাশ বলে মন্তব্য করেন সিইসি। আজকের নির্বাচন শান্তিপূর্ণ ও উৎসবমুখর হবে বলে আশা প্রকাশ করেন সিইসি। তিনি জানান, নির্বাচনী সহিংসতা দমন করতে কঠোর পদক্ষেপ নিতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। নির্বাচন উপলক্ষে গতকাল সব ভোট কেন্দ্রে নির্বাচনী সরঞ্জাম পৌঁছানো হয়েছে। ভোটের জন্য সব ধরনের প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছে। নিয়োগ দেওয়া হয়েছে প্রয়োজনীয় সংখ্যক নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীও মোতায়েন করা হয়েছে। এদিকে নির্বাচনকে ঘিরে অভ্যন্তরীণ কোন্দল এড়িয়ে চলতে জেলা-উপজেলায় নির্দেশনা পাঠানো হয়েছে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে। কঠোর বার্তা দেওয়া হয়েছে দলীয় নেতা-কর্মীদের।

দ্বিতীয় ধাপের এই নির্বাচনে ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী, ১৭ অক্টোবর পর্যন্ত মনোনয়নপত্র জমা, ২১ অক্টোবর বাছাই এবং ২৬ অক্টোবর প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ সময় ছিল। এই ধাপে বিনা প্রতিদ্ধন্ধিতায় চেয়ারম্যান পদে ৮১ জন, সংরক্ষিত সদস্য পদে ৭৬ জন এবং সাধারণ সদস্য পদে ২০৩ জন নির্বাচিত হয়েছেন। চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্ধন্ধিতায় রয়েছেন ৩ হাজার ৩১০ জন। সংরক্ষিত মহিলা সদস্য পদে ৯ হাজার ১৬১ জন এবং সাধারণ সদস্য পদে প্রতিদ্ধন্ধিতা করছেন ২৮ হাজার ৭৪৭ জন। ২০টি ইউনিয়ন পরিষদে ইলেক্ট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম) এবং বাকিগুলোতে প্রচলিত ব্যালট পেপারে ভোট হবে। নভেম্বর ৮৪৬টি ইউনিয়ন পরিষদে দ্বিতীয় ধাপের নির্বাচন। এরই মধ্যে ৮১টি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান বিনা ভোটে নির্বাচিত হয়েছেন।

নানা সূত্রে যে খবর পাওয়া গেছে, তাতে আওয়ামী লীগের ৬৯১ জন বিদ্রোহী প্রার্থী আছেন। কোনো কোনো ইউপিতে একাধিক বিদ্রোহী প্রার্থীও আছেন। বিএনপির স্বতন্ত্র প্রার্থী আছেন ৩১১ জন। জাতীয় পার্টির প্রার্থী আছেন ১০১ জন। দ্বিতীয় ধাপের নির্বাচনকে ঘিরে গতকাল পর্যন্ত ৩০ জন নিহত এবং চার শতাধিক আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।

এই বিভাগের আরও খবর