,

হারিছ-আনিসকে ক্ষমা নিয়মের বাইরে নয়: স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী

বিডিনিউজ ১০ ডটকম ডেস্ক: সেনাপ্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদের দুই ভাই হারিছ আহমেদ ও আনিস আহমেদকে যাবজ্জীবন সাজা থেকে অব্যাহতি দেয়ার ক্ষেত্রে কোনো আইনের লঙ্ঘন হয়নি বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল।

বৃহস্পতিবার বিকেলে রাজধানীর মগবাজারে একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের নতুন ভবনের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন অনুষ্ঠানে এ কথা বলেন তিনি।

মন্ত্রীর কাছে প্রশ্ন ছিল, ৪০১ ধারায় আসামি হারিছ ও আনিসের সাজা মওকুফ করার বিষয়ে সঠিক প্রক্রিয়া অনুসরণ করা হয়েছে কি না? যদি মওকুফ করা হয়ে থাকে তাহলে স্পর্শকাতর বিষয়টি এতদিন কেন গোপন রাখা হলো?

জবাবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের আইনের ৪০১ ধারায় নিয়ম আছে যেকোনো অপরাধী বা সাজাপ্রাপ্ত আসামি রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর কাছে সাজা মওকুফের আবেদন করতে পারে। ধারার সকল নিয়ম মেনেই দুই আসামিকে সাজা থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে। আসামিদের পরিবারের পক্ষ থেকে যথাযথ আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে সরকার এ সিদ্ধান্ত নেয়।’

তবে আসামিদের পক্ষ থেকে কে এই আবেদন করেছে সে বিষয়ে কিছু বলেননি মন্ত্রী। সেই সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কোনো ‘লুকোচুরি’ নেই দাবি করে তিনি বলেন, ‘এই ধারার বিষয়ে ইতোমধ্যেই আইনমন্ত্রী সহজ বিশ্লেষণ দিয়েছেন। সে জায়গা থেকে এ প্রশ্নের জবাব আপনারা আগেই পেয়েছেন।’

সম্প্রতি বাংলাদেশ প্রধানমন্ত্রী ও সেনাপ্রধানকে জড়িয়ে আল জাজিরায় ‘অল দ্যা প্রাইম মিনিস্টারস ম্যান’ শিরোনামে ঘণ্টাব্যাপী একটি প্রতিবেদন সম্প্রচার করা হয়। এতে বলা হয়, বাংলাদেশ সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদের দুই ভাই খুনের মামলায় যাবজ্জীবন সাজার পরোয়ানা নিয়ে পলাতক থেকে বিদেশে জীবনযাপন করছেন। তাদের সরাসরি সহযোগিতা করছেন সেনা প্রধান নিজেই।

তবে ওই প্রতিবেদন প্রকাশের সময় যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করছিলেন জেনারেল আজিজ আহমেদ। তিনি দেশে ফেরার পর গত সোমবার রাতে আইএসপিআরের এক প্রতিবাদলিপিতে সেনা প্রধানের দুই ভাই আগেই অব্যাহতি পাওয়ার কথা জানানো হয়।

পরের দিন দৈনিক প্রথম আলোয় খবর প্রকাশিত হয়, ২০১৯ সালের ২৮ মার্চ দুই ভাই হারিছ ও আনিসের যাবজ্জীবন সাজা মওকুফ করে প্রজ্ঞাপন দিয়েছে সরকার।

এদিন রাজধানীর তেঁজগাওয়ে এক অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে একই কথা বলেন সেনাপ্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদও।

আর্মি এভিয়েশনের গ্রুপের অনুষ্ঠানে তিনি বলেছিলেন, ‘একটা ষড়যন্ত্রমূলক মামলা ছিল (হারিসের বিরুদ্ধে), যেটা থেকে ইতিমধ্যে অব্যাহতিপ্রাপ্ত ছিল। সে অব্যাহতি মার্চ মাসে হয়েছিল। আমি এপ্রিল মাসে গিয়েছিলাম।’

‘এখানে আল আজিরা যে স্টেটমেন্ট দিয়েছে, তা সম্পূর্ণ অসৎ উদ্দেশ্যে দিয়েছে। আমি যদি বলি, সেদিন আমার ভাইয়ের বিরুদ্ধে না কোনো সাজা ছিল, না কোনো মামলা ছিল। যে মামলাটা ছিল সেটা থেকে আগেই তাদের অব্যাহতি দেয়া হয়েছে।’

‘সরকারের সংশিষ্ট কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে নির্দেশিত হয়ে সুনির্দিষ্ট নিয়ম অনুযায়ী ওয়ান্টেড তালিকাটি ওয়েবসাইটে আপলোড ও আপডেট করা হয়ে থাকে। তাই কোনো ব্যক্তির নাম কর্তনের ক্ষেত্রেও সংশ্লিষ্ট পক্ষের নিয়মমাফিক আবেদনের প্রেক্ষিতে উপযুক্ত কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা সাপেক্ষে তালিকা থেকে কোনো নাম বাদ দেয়ার সুযোগ রয়েছে।’

হারিছের নাম কর্তনের জন্য সুনির্দিষ্টভাবে কার নির্দেশনা প্রয়োজন জানতে চাইলে সোহেল রানা আর কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। তবে নাম প্রকাশ না করার শর্তে পুলিশ সদর দপ্তরের একজন ঊর্দ্ধতন কর্মকর্তা নিউজবাংলাকে জানান, ‘এটা যেহেতু খুবই সংবেদনশীল একটি ঘটনা, তাই স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নির্দেশের বাইরে কোনো কিছুই করা সম্ভব না।’

এরই ধারাবাহিকতায় বৃহস্পতিবার বিকেলে মগবাজারে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে প্রশ্ন রাখা হয়েছিল হারিছকে যদি ক্ষমাই করা হয়, তাহলে বাংলাদেশ পুলিশের ওয়েবসাইটে মোস্ট ওয়ান্টেড আসামির তালিকায় তার নাম কেন এখনও দৃশ্যমান? পুলিশ এর জবাবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘এটা নিছক কমিউনিকেশন গ্যাপ। এটা শিগগিরই ঠিক হয়ে যাবে।’

এই বিভাগের আরও খবর