,

বরগুনায় সংবাদপত্র ছিনতাই, পুলিশের উদ্ধার

বরগুনা প্রতিনিধি: বরগুনায় যাত্রীবাহী বাস থেকে সংবাদপত্র ছিনতাই করে নিয়েছে একটি সন্ত্রাসী বাহিনী। ঘটনার পরপরই পুলিশের সক্রিয় প্রচেষ্টায় উদ্ধার হয়েছে সংবাদপত্রের প্রায় ১০টি বান্ডিল। মঙ্গলবার দুপরে বরগুনা শহরে অদূরেই বরগুনা-বাকেরগঞ্জ সড়কের বাইপাস এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।

জেলা সড়ক পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি মোঃ সাহাব উদ্দীন সাবু বলেন, প্রতিদিন বরিশাল থেকে আসা যাত্রীবাহী পরিবহনে বরিশাল থেকে বরগুনার সকল সংবাদপত্র আসে। প্রতিদিনের মত মঙ্গলবারও সাজিদ পরিবহন নামের (যশোর জ-০০৩৪ ) যাত্রীবাহী বাসে বরগুনার সকল এজেন্ট ও হকারদের পত্রিকা আসছিলো। দুপুর সাড়ে বারোটার দিকে মহাসড়ক বাইপাস এলাকায় এলে বাসটির গতিরোধ করে বাসে উঠে পড়ে বরগুনা-০১ আসনের বর্তমান এমপি অ্যাড. ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভুর পুত্র সুনাম দেবনাথের মাদক সিন্ডিকেটের প্রধান রাসেল তালুকদার ওরফে টাক রাসেল ও তার সহযোগী সাথিক রুবেল এবং অনিমেষসহ আরও বেশ কয়েজন। বাসে উঠেই তারা দ্রুত বাস থেকে সংবাদপত্রের সকল বান্ডিল নামিয়ে নেয়।

ঘটনার শিকার সাজিদ পরিবহনের চালক ফারুক হোসেন (৪০) জানান, বরিশাল থেকে বরগুনার মহাসড়ক এলাকার বাইপাস সড়কে এলে বাস থামিয়ে দ্রুত উঠে পড়ে রাসেল তালুকদার ওরফে টাক রাসেল ও তার সন্ত্রাসী সহযোগীরা। তারা বাসে উঠেই সকল সংবাদপত্রের বান্ডিল নামিয়ে নেয়। এ সময় তারা বাঁধা দিতে গেলে তাদের ওপর চড়াও হয় এবং মারধর করে সন্ত্রাসী টাক রাসেল ও তার সহযোগীরা। এ ঘটনার পর বরগুনা থানায় তিনি একটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন বলেও জানান চালক ফারুক হোসেন।

বরগুনা জেলা যুবলীগের সভাপতি ও জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এবং দুর্নীতি দমন কমিশনের পিপি (পাবলিক প্রসিকিউটর) অ্যাড. কামরুল আহসান মহারাজ বলেন, ঘটনাটি ন্যাক্কারজনক।

গত সোমবার দুপুরে বরগুনা প্রেসক্লাবে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ মনোনীত দুই নেতার একজন আলহাজ্ব মোঃ জাহাঙ্গীর কবিরকে সমর্থন দিয়ে সংবাদ সম্মেলন করে জেলা যুবলীগ, ছাত্রলীগ, শ্রমিকলীগ, কৃষকলীগ ও স্বেচ্ছাসেবকলীগের জ্যষ্ঠ নেতৃবৃন্দ। দেশের গুরুত্বপূর্ণ সকল সংবাদপত্রে এই সংবাদ সম্মেলনের রিপোর্ট ছাপা হওয়ায় বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ মনোনীত অপর নেতা জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও বর্তমান এমপি অ্যাড. ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভুর পুত্র সুনাম দেবনাথের সন্ত্রাসী বাহিনী এ ঘটনা ঘটায়। আমরা এ ঘটনার তীব্র নিন্দা জানাই এবং যাথাযথ আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানাই।

বাংলাদেশ এজেন্ট এসোসিয়েশনের সভাপতি ও বরিশাল এম রহমান নিউজ এজেন্সীর মোঃ হারুণ অর রশীদ বলেন,  ‘আমার এত দীর্ঘ বছরের ব্যবসায়ীক অভিজ্ঞতায় সংবাদপত্র ছিনতাইয়ের কথা এই প্রথম শুনলাম। সংবাদপত্রে আগুন দেয়ার কথা শুনেছি। কিন্তু ছিনতাইয়ের কথা শুনিনি। ঘটনাটি দুঃখজনক। আমরা সংবাদপত্র এজেন্ট এসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে এর সঠিক তদন্ত ও যথাযথ বিচার চাই’।

বরগুনা জেলার অন্যতম প্রধান সংবাদপত্র এজেন্সী শাপলা নিউজ এজেন্সীর মালিক খায়রুল আলম স্বপন জানান, ছিনতাই হওয়া সংবাদপত্রের মধ্যে তারও সহস্রাধিক সংবাদপত্র ছিলো। এসব সংবাদপত্রের মধ্যে দেশের গুরুত্বপূর্ণ সকল পত্রিকা ছিলো। বেশ কিছু সংবাদপত্র তিনি ফেরৎ পেয়েছেন তবে অনেকেই ফেরৎ পাননি। অনেক দরিদ্র হকাররা আজ মাথায় হাত দিয়েছেন।

এ বিষয়ে বরগুনা প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক আবু জাফর মোঃ সালেহ বলেন, সংবাদপত্র ছিনতাইয়ের ঘটনাটি দুঃখজনক। যারা এ ঘটনা ঘটিয়েছে তারা যে দলের বা গ্রুপেরই হোক না কেন সঠিক তদন্তের মধ্য দিয়ে তা খুঁজে বের করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করার দাবি জানাই।

এ বিষয়ে টেলিভিশন সাংবাদিক ফোরামের সভাপতি মনির হোসেন কামাল বলেন, ঘটনাটি দুঃখজনক। যে সংবাদপত্রের জন্য প্রতিদিন শতশত মানুষ গভীর আগ্রহ নিয়ে বসে থাকে। যে সংবাদপত্র মানুষকে তথ্য দিয়ে সহযোগিতা করে সেই সংবাদপত্র ছিনতাই করে নেয়ার ঘটনা মেনে নেয়া যায় না। আমরা সাংবাদিক সমাজ এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও যথাযথ বিচার চাই।

এ বিষয়ে অ্যাডভোকেট ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভুর পুত্র সুনাম দেবনাথের কাছে জানতে চাইলে তিনি সাংবাদিকদের জানান, তিনি বা তার লোকজন এ ঘটনার সাথে সম্পৃক্ত নেই। এটি মিথ্যে অপপ্রচারমাত্র।

এ বিষয়ে বরগুনা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবির মোহাম্মদ হোসেন বলেন, ঘটনার পরপরই স্থানীয় সাংবাদিকসহ পত্রিকার এজেন্টরা তাকে অবহিত করে। সাথে সাথেই তিনি এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেন। বেলা দুইটার দিকে সদর উপজেলার বদরখালী ইউনিয়নের ফুলতলা এলাকা থেকে ছিনতাই হওয়া সংবাদপত্রগুলো উদ্ধার করে পুলিশ। এ বিষয়ে একটি অভিযোগ পাওয়া গেছে। অভিযোগ যাচাই বাছাই করে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে বলে তিনি জানান।

এই বিভাগের আরও খবর