,

কাজীর গরু কেতাবে আছে গোয়ালে নেই!

শ্রীবরদী (শেরপুর) প্রতিনিধি: অতি দরিদ্রদের জন্য ৪০ দিনের কর্মসৃজন কর্মসূচী বাস্তবায়নে শেরপুরের শ্রীবরদী সদর ইউনিয়নসহ কয়েকটি ইউনিয়নে চলছে নানা অনিয়ম। অনেক প্রকল্পে নির্ধারিত শ্রমিকদের মধ্যে উপস্থিতি অর্ধেকের কম।

এ ছাড়াও শ্রমিকদের বিল উত্তোলনের পর এক দেড় হাজার করে টাকা কেটে নিচ্ছে প্রকল্প সভাপতিরা। এতে নামমাত্র বাস্তবায়ন হচ্ছে প্রকল্পগুলো। সম্প্রতি এসব অভিযোগ তুলেছেন ভুক্তভোগী শ্রমিক ও স্থানীয় সচেতন মানুষেরা।

জানা যায়, শ্রীবরদী উপজেলা সদর ইউনিয়নসহ ১০টি ইউনিয়নেই চলছে অতি দরিদ্রদের জন্যে ৪০ দিনের কর্মসৃজন কর্মসূচী প্রকল্প বাস্তবায়ন। এ কর্মসূচীর আওতায় শ্রীবরদী সদর ইউনিয়নে প্রকল্প সংখ্যা ৪টি। এর মধ্যে কেয়ামতলী বাজার হতে কুড়িপাড়া মন্ডলপাড়া মনোয়ারের বাড়ি পর্যন্ত রাস্তায় মাটি ভরাটে ৫৭ জন শ্রমিকের মধ্যে উপস্থিত ৪০জন।

দহেড়পাড় জইনদ্দিন কেরানির বাড়ি হতে জবেদ আলীর বাড়ি পর্যন্ত রাস্তায় মাটি ভরাটে ৪০ জন শ্রমিকের মধ্যে উপস্থিত শ্রমিক ২৭জন। মামদামারী নয়াপাড়া জামে মসজিদের মাঠে মাটি ভরাটে ৪০ জন শ্রমিকের মধ্যে উপস্থিত ১৯ জন। মামদামারী কালামের বাড়ি হতে জহুরুলের বাড়ি পর্যন্ত ৪০ জন শ্রমিকের মধ্যে উপস্থিত ১৯ জন।

সরেজমিন গেলে এ প্রতিনিধির সাথে কথা হয় ওইসব প্রকল্পের শ্রমিক সর্দার আবু সাইদ, চিনু মিয়া ও মামুন সরকারের সাথে। তারা জানান, গত ১৫ ডিসেম্বর থেকে প্রকল্প বাস্তবায়নের কাজ শুরু হয়েছে।  শুরু থেকে যারা কাজে যোগ দিয়েছে তারা নিয়মিত কাজ করছে। তবে যে সংখ্যার কথা বলা হয়েছে তা তারা জানেন না।

এ ব্যাপারে কথা হয় মামদামারী নয়াপাড়া জামে মসজিদের মাঠে মাটি ভরাট প্রকল্পের সভাপতি সংরক্ষিত আসনের মহিলা সদস্য শিরিনা বেগমের সাথে। তিনি বলেন, এই প্রকল্পে ১৯ জন শ্রমিক নিয়ে কাজ শুরু করা হয়। তারা নিয়মিত কাজ করছে। তবে ওই প্রকল্পে ৪০ জন শ্রমিক থাকার কথা বললে তিনি বলেন, অনুপস্থিত শ্রমিকদের নাম ঠিকানা আমি জানি না। তবে চেয়ারম্যান জানেন।

ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল হালিম দাবি করেন, তার ইউনিয়নে কোনো অনিয়ম নেই। তালিকা অনুযায়ী শ্রমিকরা কাজ করছে। একাধিক সূত্র মতে, অনুপস্থিত শ্রমিকদের নামেও বিলভাউচার করে বরাদ্দকৃত টাকা উত্তোলনের প্রক্রিয়া চলছে।

ইতোমধ্যে তাতিহাটি ইউনিয়নে প্রকল্পগুলোতে নির্ধারিত শ্রমিকদের মধ্যে প্রায় প্রকল্পেই ১০/১২জন করে শ্রমিক অনুপস্থিত ছিল। শ্রমিকদের ৪০ দিনের প্রকল্পের অর্ধেক বিল বিতরণ করে সোনালী ব্যাংক। এতে অনুপস্থিতসহ সকল শ্রমিকদের বিল উত্তোলন হয়। বিল উত্তোলনের সময় দেখা যায় কতিপয় প্রকল্প সভাপতি শ্রমিকদের নিকট এক দেড় হাজার করে টাকা কেটে নিচ্ছেন। এ অভিযোগ ভুক্তভোগি শ্রমিকদের।

কয়েকজন ইউপি সদস্য বলেন, তাদের কোনো শ্রমিক অনুপস্থিত নেই। এ ছাড়াও অনুপস্থিত শ্রমিকদের নাম ঠিকানা তারা জানেন না।

সোনালী ব্যাংক ম্যানেজার মোস্তুফা কামাল বলেন, উপজেলা নির্বাহী অফিসের দেওয়া চেকের মাধ্যমে প্রত্যেক শ্রমিক ব্যাংক থেকে বিল উত্তোলন করে।

এ ব্যাপারে উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা রাকিবুল হাসান বলেন, কোনো ইউনিয়নে অনিয়মের অভিযোগ পেলে অবশ্যই তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

তবে সচেতন মানুষের প্রশ্ন অনুপস্থিত শ্রমিকদের নামেও বিলভাউচার হচ্ছে। উত্তোলন করা হচ্ছে বরাদ্দকৃত অর্থ। অনেকে বলেন, কাজীর গরু কেতাবে আছে গোয়ালে নেই!

এই বিভাগের আরও খবর