,

রায়পুরে গ্রাহকের সাড়ে ৪ কোটি টাকা নিয়ে উধাও দুই সমিতি

রায়পুর (লক্ষ্মীপুর) প্রতিনিধি: রায়পুরে সেবক ও শাপলা পাল্টিপারপাস কো-অপারেটিভ নামে দুটি সমিতির ৯ প্রতারক ৪০০ গ্রাহকের প্রায় সাড়ে চার কোটি টাকা নিয়ে উধাও হওয়ার ঘটনায় তোলপাড় চলছে।

ঘটনাটি ঘটেছে শনিবার শহরের সরকারি কলেজ রোডের ল্যাংড়া বাজার এলাকার শরিফ মঞ্জিলে। এ ঘটনায় ইউপি কার্যালয়, থানা ও আদালতে প্রতারকদের বিরুদ্ধে ও টাকা উদ্ধারে মামলা হলেও কোনো প্রতিকার পাচ্ছেন না বলে অভিযোগ করেছেন ক্ষতিগ্রস্ত গ্রাহকরা।

গ্রাহকদের টাকা আত্মসাৎ করার পরও চারজন বীরদর্পে শহরে চলাচল করলেও পাঁচজন ঢাকা শহরে পলাতক রয়েছেন। গ্রাহকরা তাদের টাকা উদ্ধারে প্রশাসনের সহযোগিতা চেয়েছেন।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, পৌরসভার ৯নং ওয়ার্ড পশ্চিম কেরোয়া গ্রামের মৌলভী সাহাবুদ্দিন বাড়ির মৃত আবদুল লতিফের ছেলে কামাল হোসেন, আনোয়ার হোসেন, মুফতি জাকির হোসেন ও উত্তর কেরোয়া গ্রামের আবদুল ওহাবের ছেলে হাফেজ মো. ফারুক হোসেন ২০০৯ সালের ১২ মে উপজেলা সমবায় কার্যালয় কর্তৃক সেবক ও শাপলা পাল্টিপারপাস কো-অপারেটিভ নামে দুটি সমিতির অনুমোদন নিয়ে ২০১১ সালের ১৮ জানুয়ারি শহরের ল্যাংড়া বাজার এলাকার শরিফ মঞ্জিলে কার্যক্রম শুরু করেন।

তাদের সঙ্গে আরও ছয়জনকে শেয়ারহোল্ডার করে নিজস্ব মূলধন সৃষ্টি ও তা বিনিয়োগের মাধ্যমে সদস্যদের আর্ত-সামাজিক উন্নয়ন, সম্পদ সংগ্রহ ও কর্মসংস্থান সৃষ্টির লক্ষ্যে দুটি সমিতির জন্য ১৫ জন কর্মী নিয়োগ দেন। গ্রাহকের শেয়ার, সঞ্চয়, ভর্তি, এফডিআর, এমপিডিআরসহ বিভিন্ন লোভ দেখিয়ে উপজেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে প্রায় ৪০ গ্রাহক সংগ্রহ করেন সমিতির ১৫ জন কর্মী। গ্রাহকদের ১০ জনের কমিটি করে তাদের কাছ থেকে রসিদ ও বইয়ের মাধ্যমে ৫ হাজার থেকে ২ লাখ টাকা করে উত্তোলন করেন।

সেই জমানো টাকার কিছু অংশের টাকায় শেয়ারহোল্ডাররা তাদের স্বজনের নামে জমি কিনে বাকি টাকা তারা আত্মসাৎ করে অফিস বন্ধ করে ঢাকায় চলে যান। মাসিক টাকা অফিসে জমা দিতে এসে অফিস ও শেয়ারাহোল্ডারদের না পেয়ে গ্রাহকদের মাঝে উত্তেজনা ও তোলপাড় সৃষ্টি হয়।

গাজী কমপ্লেক্সের ক্ষতিগ্রস্ত গ্রাহক ব্যবসায়ী ফখরুল ইসলাম মুন্না, আবু তাহের, কেরোয়া গ্রামের গৃহবধূ শান্তি বেগম, ছকিনা বেগমসহ ১০ জন গ্রাহক জানান, শেয়ার, সঞ্চয়, ভর্তি, এফডিআর, এমপিডিআরসহ বিভিন্ন লোভ দেখিয়ে বিভিন্ন ধাপে ৭৭ লাখ ৫৭ হাজার ৭৬০ টাকা সমিতিতে জমা দেয়া হয়। এ টাকা না পেয়ে আবু তাহের কামাল, আনোয়ার ও জাকিরের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা করেন (যা বিচারাধীন)।

কেরোয়া গ্রামের মৃত আবদুল জব্বারের স্ত্রী শান্তি বেগমের কাছ থেকে ব্যাংকের চেয়েও বেশি লভ্যাংশ দেয়ার লোভ দেখিয়ে সমিতির শেয়ারহোল্ডার শহরের ডেকোরেটর ব্যবসায়ী হাফেজ ফারুক হোসেনের ৬ লাখ টাকা নিয়ে যায়। পরে টাকাগুলো উদ্ধারে শান্তি বেগম কেরোয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানের কার্যালয়ে লিখিত অভিযোগ করেও টাকাগুলো পাচ্ছেন না।

একই গ্রামের বাচ্চু মিয়ার স্ত্রী পেয়ারা বেগমের ৫০ হাজার, মৃত রুস্তম আলীর স্ত্রী ছকিনা বেগমের ২ লাখ ৬০ হাজার, তোফায়েলের স্ত্রী হালিমা বেগমের ৬০ হাজার টাকাও আত্মসাৎ করেন হাফেজ ফারুক হোসেন।

অভিযুক্ত হাফেজ ফারুক হোসেন বলেন, আমি কোনো গ্রাহকের টাকা আত্মসাৎ করিনি। সব টাকাই শান্তি বেগমসহ অন্য গ্রাহকরা সেবক ও শাপলা পাল্টিপারপাস কো-অপারেটিভ নামে দুটি সমিতির কাছে গিয়েছে।

সমিতির মালিক হলেন পৌরসভার ৯নং ওয়ার্ড পশ্চিম কেরোয়া গ্রামের মৌলুভি সাহাবুদ্দিন বাড়ির মৃত আবদুল লতিফের ছেলে কামাল হোসেন, আনোয়ার হোসেন ও মুফতি জাকির হোসেন। তারাই টাকা আত্মসাৎ দিয়ে ঢাকা শহরে পলাতক রয়েছেন। আদালতে দুটি মামলা বিচারাধীন।

রায়পুর উপজেলা সমবায় কর্মকর্তা শিশির রঞ্জন জানান, গ্রহকের টাকা আত্মসাতের অভিযোগ সত্যতা পাওয়ায় সেবক ও শাপলা পাল্টিপারপাস কো-অপারেটিভ নামে দুটি সমিতির নিবন্ধন বাতিল করা হয়েছে। অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে আদালতে প্রতিবেদন দেয়া হয়েছে।

এই বিভাগের আরও খবর