,

মেয়ে সন্তান নিয়ে উদ্বিগ্ন অভিভাবকরা

প্রতীকী ছবি

আবুল হাসান: সারাদেশে ধর্ষণ বেড়েই চলছে। আগে যেখানে সপ্তাহে দু-একটি ঘটনা ঘটত এখন সেখানে দু-একদিন পরপরেই এমন ঘটনা ঘটছে। কোনো কোনো দিন একাধিক স্থানে ধর্ষণের ঘটনা ঘটছে। এক কথায় ধর্ষণ মহামারি আকার ধারণ করছে। ধর্ষকরা এতটাই বেপরোয়া হয়ে উঠছে যে, ধর্ষিতাকে হত্যা পর্যন্ত করা হচ্ছে। তাদের লালসা থেকে পরিত্রাণ পাচ্ছে না বর্তমানে বিধবা বা স্বামী পরিত্যক্তা নারীরা।

সাম্প্রতিক সময়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে এমন ঘটনা দেশের সাধারণ মানুষকে ভাবিয়ে তুলেছে। জনগণ এখন পরিবারের ছেলেমেয়েদের নিরাপত্তা ও জীবন নিয়ে শঙ্কিত।

ধর্ষণের শিকার সবচেয়ে বেশি হয়েছে ৭ থেকে ১২ বছর বয়সী শিশুরা। অপরদিকে প্রেমঘটিত মেলামেশার পরেও গণধর্ষণের শিকার হচ্ছে কোনো কোনো প্রেমিকা।

ভোলার চরফ্যাশনে ভাসমান ট্রলার এক নারী গণধর্ষণের শিকার হয়েছেন। তার প্রেমিকসহ পাঁচ যুবক তাকে ধর্ষণ করেছে। ৮ ফেব্রুয়ারি (শনিবার) চর ফারুকী গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।

ওই নারী জানায়, সোহেলের সাথে প্রেমের সম্পর্ক ছিল তার। প্রেমের ফাঁদে ফেলে তাকে ট্রলারে নিয়ে আসা হয়। পরে তাকে আটকে রেখে তার প্রেমিকসহ ৫ যুবক ধর্ষণ করে।

প্রেমিকের হাতে ধর্ষণের আরেকটি ঘটনা ঘটে সাভারের আশুলিয়ায়। বিয়ের প্রলোভনে গার্মেন্ট শ্রমিককে ধর্ষণ করা হয়।

এখানেই শেষ নয়। নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ উপজেলায় আত্মীয়ের বাড়িতে বেড়াতে নিয়ে যাওয়ার কথা বলে বান্ধবীকে তুলে দেয় ধর্ষকদের হাতে। গণধর্ষণের শিকার হয় গৃহবধূ।

বিধবারাও ধর্ষকদের হাত থেকে রেহাই পায় না। ভোলায় বিধবা নারীকে অটোরিকশা থেকে তুলে নিয়ে গণধর্ষণ করে দৌলতখান উপজেলার পাঁচ ধর্ষক। এর মধ্যে দুইজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।

তবে শিশুরা সবচেয়ে বেশি শিকার হচ্ছে ধর্ষণের। ভোলা জেলায় ধর্ষণ হয় তৃতীয় শ্রেণির ছাত্রী। পোস্টম্যান শের আলী তাকে নতুন পোশাক কিনে দেওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে পোস্ট অফিসের কক্ষে নিয়ে জোরপূর্বক ধর্ষণ করে।

এর আগে ১৭ ফেব্রুয়ারি হাতীবান্ধায় ৪র্থ শ্রেণির ছাত্রী ধর্ষিত হয়। ১২ ফেব্রুয়ারি বাগেরহাটে স্কুলছাত্রী গণধর্ষণের শিকার হয়, ৮ ফেব্রুয়ারি কুড়িগ্রামে মাদরাসা ছাত্রীকে ধর্ষণ করে সন্ত্রাসীরা, ২৭ জানুয়ারি সুবর্ণচরে প্রতিবন্ধী শিশু ধর্ষিত হয়। ১৩ জানুয়ারি পিঠা কিনতে গিয়ে ধর্ষণের শিকার হয় আরেক শিশু।

এ দিকে, ধর্ষণের পর হত্যার ঘটনাও বাড়ছে। ১০ জানুয়ারি ঢাকার ধামরাইয়ে বাসে মমতা আক্তার (১৯) নামে এক নারী শ্রমিককে ধর্ষণের পর হত্যা করে ধর্ষক।

ধর্ষণের এসব ঘটনা সাধারণ মানুষ নয়, বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষও জড়িয়ে যাচ্ছেন। ৩ ফেব্রুয়ারি (সোমবার) রংপুরের কাউনিয়া উপজেলায় কলেজছাত্রী ধর্ষণ মামলায় এক স্কুল শিক্ষককে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। তার নাম সোহেল রানা। তিনি স্থানীয় পল্লীমারী উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক।

এসব ঘটনার জন্য বিশেষজ্ঞরা দায়ী করছে কয়েকটি বিষয়কে। তারা মনে করেন, নারীর প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধের অভাব, পিতৃতন্ত্র ও বৈষম্যমূলক আইন নারী নির্যাতন বাড়ার পেছনে দায়ী।

সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে মহিলা পরিষদের নেত্রী আয়শা খানম বলেন, নারীর প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধে সরকারের সঙ্গে নারী উন্নয়ন সংগঠনের সবাই মিলে কাজ করছে। তারপরও সহিংসতা কমানো যাচ্ছে না, বেড়েই চলছে। ঘটনায় রাষ্ট্র যদি আপসহীন, ক্ষমাহীন এবং জিরো টলারেন্স না দেখায়, তাহলে সমাজে এর বিস্তার রোধ করা সম্ভব হবে না। অবক্ষয়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানো যাবে না। বলে মন্তব্য করেন তিনি।

এই বিভাগের আরও খবর