,

টুঙ্গীপাড়ায় ফার্মাসিস্টের ইনজেকশনে শিশুর মৃত্যু

টুঙ্গীপাড়া প্রতিনিধি: গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়া উপজেলায় ফার্মাসিস্টের অপচিকিৎসায় সুমন বেপারী (১০) নামে এক শিশুর মৃত্যু হয়েছে। বুধবার সকালে আশঙ্কাজনক অবস্থায় গোপালগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালে নেয়ার পথে তার মৃত্যু হয়।

মৃত শিশু সুমনের বাড়ি ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলায়। দুই বছর আগে সুমনের মায়ের সঙ্গে তার বাবার ডিভোর্স হয়। এরপর থেকে সুমন মাকে নিয়ে তার নানাবাড়ি টুঙ্গিপাড়ার নিলফা পূর্ব পাড়ায় বসবাস করতো। ওই গ্রামের আশরাফ আলী মোল্লা তার নানা। ১৩ নং নিলফা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের তৃতীয় শ্রেণির ছাত্র ছিল সুমন।

এ ঘটনায় সুমনের আত্মীয় নিলফা পূর্বপাড়া গ্রামের মতিয়ার রহমান খালেকের বাজার এলাকার মোল্লা মেডিকেল হলের মালিক ও ফার্মাসিস্ট মো. হেদায়েত মোল্লার বিরুদ্ধে টুঙ্গিপাড়া থানায় একটি অভিযোগ দেন। অভিযোগের প্রেক্ষিতে ফার্মাসিস্ট মো. হেদায়েদ হোসেন মোল্লাকে আটক করে পুলিশ। পরে তাকে ছেড়ে দেয়া হয়।

সুমন বেপারীর মা সেলিনা আক্তার বলেন, সোমবার সকালে ভাইরাস জ্বরে আক্রান্ত আমার ছেলেকে ডাক্তার দেখানোর জন্য নিলফা খালেকের বাজারের মোল্লা মেডিকেল হলে যাই। সেখানে সুমনের শারীরিক পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেন ফার্মেসির মালিক মো. হেদায়েত মোল্লা। এ সময় সুমন কোনো কিছুই খেতে পারছে না বলে হেদায়েতকে জানানো হয়। সবকিছু শুনে হেদায়েত হোসেন মোল্লা সুমনের হাতে একটি ইনজেকশন পুশ করে বলে সব ঠিক হয়ে যাবে। এরপর ছেলেকে নিয়ে বাড়ি ফিরে আসি।

তিনি আরও বলেন, ওইদিন আমার ছেলের শরীর থেকে জ্বর চলে যায়। মঙ্গলবার রাতে সুমন আবার অসুস্থ হয়ে পড়ে। তার বুকের বাম পাশে প্রচণ্ড ব্যথা হচ্ছিল। রাত বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ব্যথার তীব্রতা বাড়তে থাকে তার। বুধবার ভোরে আমি সুমনকে গোপালগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার উদ্দেশে রওনা হলে পথিমধ্যেই মারা যায়।

তিনি অভিযোগ করে বলেন, ইনজেকশন পুশ করার কারণেই আমার ছেলের মৃত্যু হয়েছে। আমি স্বামী পরিত্যক্তা অসহায় নারী। আমার কিছু বলার নেই। সব আল্লাহ দেখেছেন।

অনুসন্ধানে জানা যায়, ওইদিন ফার্মাসিস্ট হেদায়েত হোসেন শিশু সুমন বেপারীর শরীরে কিটোরোলাক নামে ব্যথানাশক ইনজেকশন পুশ করেছিলেন। ফার্মাসিস্ট হেদায়েত হোসেনের বিরুদ্ধে মেয়াদোত্তীর্ণ ড্রাগ বিক্রির অভিযোগ রয়েছে।

এ ব্যাপারে ফার্মাসিস্ট হেদায়েত হোসেন অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ‘আমি সুমনের শরীরে কোনো ইনজেকশন পুশ করিনি। তাকে সিপ্রোফ্লক্সিন, প্যারাসিটামল ও রেনিটিডিন ওষুধ দেয়া হয়েছিল। আমার পল্লীচিকিৎসকের প্রশিক্ষণ রয়েছে।’

গোপালগঞ্জের এএসপি (সার্কেল) ছানোয়ার হোসেন বলেন, অভিযোগকারী তার অভিযোগ প্রত্যাহার করায় ফার্মাসিস্ট হেদায়েত হোসেন মোল্লাকে ছেড়ে দিয়েছে পুলিশ।

গোপালগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালের চিকিৎসক আহমেদুল কবির বলেন, ভাইরাস জ্বরের প্রাথমিক পর্যায়ের চিকিৎসা হিসেবে একজন শিশুকে কোনো অবস্থায় ইনজেকশন দেয়ার অনুমোদন নেই। এ ধরনের চিকিৎসায় শিশুর শরীরে বড় ধরনের ক্ষতি হওয়ার সম্ভবনা থেকেই যায়।

এই বিভাগের আরও খবর