,

খাসোগি হত্যার পর চুপ ছিল আমার দেশও

সৌদি সাংবাদিক জামাল খাসোগি। ফাইল ছবি

আন্তর্জাতিক ডেস্ক, বিডিনিউজ ১০ ডটকম: পুলিৎজারজয়ী মার্কিন সাহিত্যিক অ্যাডাম জনসন দেয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, সৌদি সাংবাদিক জামাল খাসোগি হত্যাকাণ্ড অত্যন্ত দুঃখজনক। এক দল খুনিকে কনস্যুলেটের মতো জায়গায় পাঠানো হয়েছিল একজন মানুষকে হত্যা করার জন্য। এটা একটা ভয়ংকর ঘটনা। আর খাসোগি একজন সাংবাদিক- যার মাধ্যমে মানুষের কণ্ঠ ছড়িয়ে যায়। তিনি যে কাজটি করতেন সেটা সরকারের কার্যক্রমের ওপর তীক্ষ্ম দৃষ্টি রাখে। ক্ষমতা কিভাবে ব্যবহার হয় তার জানান দেয়। আমি একজন আমেরিকান। এ হত্যাকাণ্ডের পর আমার দেশও অনেকটা সময় নিশ্চুপ ছিল।

লিট ফেস্টের সমাপনী দিনে শনিবার অ্যাডাম জনসন  সাহিত্য, রাজনীতি, মানবাধিকারসহ নানা বিষয়ে কথা বলেন।

আলাপচারিতার একপর্যায়ে উঠে আসে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রসঙ্গ। তিনি বলেন, এটা একটা বৈশ্বিক সমস্যা। কিন্তু যেসব দেশ জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হবে এবং হচ্ছে তার মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম। আমি সুন্দরবন ঘুরতে চাই। কারণ জলবায়ু পরিবর্তনে বাংলাদেশের এ সম্পদটিও ক্ষতির সম্মুখীন। অথচ এ ম্যানগ্রোভ বনটি রক্ষা করা গেলে জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতি বাংলাদেশে কিছুটা কম হতো।

অ্যাডাম জনসন প্রথমবারের মতো বাংলাদেশে এসেছেন। তিনি বলেন, বাংলাদেশে এটি আমার প্রথম সফর। সত্যি বলতে খুব ভালো লাগছে। চিন্তার স্বাধীনতা, লেখার স্বাধীনতা এবং বাংলাদেশের সাহিত্যিকদের সত্য উচ্চারণ আমাকে অভিভূত করেছে। তারা আসলে যা বলছেন তা কিন্তু বিশ্বের সব কবি সাহিত্যিকেরই কথা।

অ্যাডাম জনসনের সবচেয়ে আলোচিত বই ‘দ্য ওরফান মাস্টারস সন’। ২০১২ সালে উপন্যাসটির জন্য তিনি পুলিৎজার সম্মনানা পেয়েছেন। বইটিতে ওঠে এসেছে উত্তর কোরিয়ার নানা কাহিনী।

উত্তর কোরিয়াকে নিয়েই কেন লিখলেন জানতে চাইলে অ্যাডাম জনসন বলেন, উত্তর কোরিয়া এমন একটি দেশ যেখানে লেখকদের বই লেখার অনুমতি নেই। বিষয়টা ভাবা যায়! আমি সেখানে গিয়েছিলাম। মানুষের সঙ্গে কথা বলেছিলাম। কিন্তু তারা সহজে কথাও বলতে চায় না বাইরের কারও সঙ্গে। আমার মনে হয়েছে তাদের নিজেদেরই অনেক গল্প আছে, যা বিশ্বের কাছে বলা উচিত। আরও মজার ব্যাপার, অনেকে যারা উত্তর কোরিয়া থেকে পালাতে সক্ষম হয় তারা রীতিমতো ট্রমাটাইজড থাকে। তারাও উত্তর কোরিয়া সম্পর্কে অনেক কথা বলতে চান না। বিবষয়গুলো আমাকে সত্যিই ভাবিয়েছে।

অ্যাডাম জনসনের লেখা প্রথম উপন্যাস ‘দ্য প্যারাসাইট লাইক আস’। একজন নৃবিজ্ঞানী ও একটি ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীকে নিয়ে লেখা এ উপন্যাস প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমি মনে করি ক্ষুদ্র জাতিসত্তার মানুষদের জীবনের গল্পগুলো খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বিশেষ করে আমার জন্মভূমি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ক্ষেত্রে তো বিরাট ব্যাপার। কারণ আমেরিকা পৃথিবীর অন্যতম বৃহৎ ক্ষুদ্র জাতিসত্তার দেশ। তাই তাদের জীবনের গল্পগুলো, তাদের কথাগুলো আমার কাছে বিশেষ গুরুত্ব বহন করে।

বাংলাদেশের সাহিত্য নিয়ে ধারণা আছে কিনা জানতে চাইলে অ্যাডাম জনসন বলেন, আসলে এটাই একটা নতুন দেশে আসার উদ্দেশ্য। আমি নতুন লেখকদের সঙ্গে পরিচিত হতে পারব, নতুন নতুন বই পড়তে পারব। যে কারণে আমি আমার সাধ্যমতো বিশ্বের বিভিন্ন দেশ ঘুরতে চেষ্টা করি। বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও আমার অনেক ছাত্র আছে। আমি তাদের মাধ্যমে জানার চেষ্টা করি। যেটা একজন শিক্ষক হিসেবেও আমাকে ঋদ্ধ করে।

যুক্তরাষ্ট্রের স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের অধ্যাপক অ্যাডাম জনসন। ২০১৫ সালে ন্যাশনাল বুক অ্যাওয়ার্ড জিতে নেন তিনি। তার লেখা কল্পকাহিনীগুলো প্রকাশিত হয়েছে এস্কোয়াইর, জিকিউ, হার্পারস ম্যাগাজিনসহ টিন হাউজ, দ্য বেস্ট আমেরিকান শর্ট স্টোরিতে।

82Shares

এই বিভাগের আরও খবর