,

সরকারি বরাদ্দের ঘর বিক্রি করলেন চেয়ারম্যান ও ইউপি সদস্যরা

টাঙ্গাইল প্রতিনিধি: ‘আশ্রয়নের অধিকার, শেখ হাসিনার উপহার’ -এ স্লোগান নিয়ে প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত সবার জন্য বাসস্থান নিশ্চিত করতে টাঙ্গাইলে বাস্তবায়িত হচ্ছে আশ্রয়ন প্রকল্পের কাজ। কিন্তু এই প্রকল্পের ঘর বরাদ্দের নামে জেলার দেলদুয়ারে অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে।

প্রকল্পের আওতায় দেলদুয়ার উপজেলার পাথরাইল ইউনিয়নে ২৫টি ঘর ইতিমধ্যে ২০ হাজার টাকা করে বিক্রির অভিযোগ উঠেছে চেয়াম্যান ও ইউপি সদস্যদের বিরুদ্ধে।

জানা যায়, দেলদুয়ার উপজেলার পাথরাইল ইউনিয়নের ৮ নং ওয়ার্ডের নরুনদা গ্রামে ৫টি ঘর বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। প্রতিটি ঘরই নিম্নমানের কাঠ, টিন, ইট, বালু, সিমেন্ট দিয়ে তৈরি করা হয়েছে। ঘরের ভেতরে কাঠের পরিবর্তে বাঁশের ধর্না লাগিয়ে দেওয়া হয়েছে। ঘরের সাথে একটি করে স্বাস্থ্যসম্মত ল্যাট্রিন দেওয়ার কথা থাকলেও তা দেয়া হয়নি।

সোহরাব মিয়া নামের এক ভুক্তভোগী বলেন, ঘর বাবদ তিনি স্থানীয় ইউপি সদস্য শফিকুল ইসলামকে ২০ হাজার টাকা দিয়েছেন। নির্মাণ শ্রমিকদের ঠিকমত মজুরি না দেয়ায় ঘরের কাজও ঠিকমত হয়নি।

একই এলাকার আফছন বেগমের ঘরে কাজ শেষ হলেও লাগানো হয়নি জানালা। দায়সারাভাবে কাজ করায় ঘর দিয়ে পানি পড়ে। তিনি একটি বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা থেকে ঋণ নিয়ে ঘরের জন্য দিয়েছেন।

আফছন বেগম বলেন, এনজিও থেকে ২০ হাজার টাকা ঋণ নিয়ে স্থানীয় নারী ইউপি সদস্য রুম্মান পারভীন ওরফে নাসুর কাছে দিয়ে মাসের পর মাস অপেক্ষার পর ঘর পেয়েছেন। ঘর পেলেও টাকার অভাবে তা সম্পূর্ণ করতে পারছেন না। প্রতিদিন ঘরের মিস্ত্রির জন্য ৩শ’ টাকা করে দিতে হয়।

বর্তমানে তার কাছে কোনো টাকা না থাকায় কাজ বন্ধ রয়েছে। ঘরের নির্মাণ সামগ্রী পরিবহন খরচ, বালু, সিমেন্ট ও শ্রমিকদের মজুরি বাবদ আরও প্রায় ২০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। তার চেয়ে তিনি ৬০ হাজার টাকা খরচ করলে এর চেয়ে উন্নত মানের ঘর দিতে পারতেন বলে দাবি করেন।

একই গ্রামের গোলাম মিয়ার ঘরেরও একই অবস্থা। তার ঘরে কাঠের ধর্নার পরিবর্তে ধর্না লাগানো হয়েছে। দেয়া হয়নি স্বাস্থ্য সম্মত ল্যাট্রিন। এছাড়া তিনি দুই বস্তা সিমেন্ট, ৮ বস্তা বালু ও ৪ বস্তা খোয়া কিনে দিয়েছেন ঘর পাকা করার জন্য।

গোলাম মিয়া বলেন, আমি ঘর পাইনি। টাকা দিয়ে ঘর কিনে এনেছি।

গোলামের স্ত্রী নার্গিস বেগম জানান, তিনি স্বামীকে ঋণ নিয়ে সেই টাকা মেম্বারদের দিয়ে ঘর আনতে হবে না। তিনি আমার কথা না শোনেন নাই। সেবা এনজিও থেকে ২০ হাজার টাকা তুলে ইউপি সদস্য শফিকুল ইসলামের কাছে দিয়ে ঘর এনেছেন।

তারপরও ঘরের নির্মাণ সামগ্রী পরিবহনের খরচ, শ্রমিক খরচ ও শ্রমিকদের খাবার বাবদ প্রায় ২৫ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। টাকার বিনিময়ে যে ঘর পেলাম, সেই টাকা খরচ করে নিজেরা দিলে তার চেয়ে ভাল ঘর দিতে পারতেন।

পাথরাইল ইউনিয়ন পরিষদ সূত্র জানায়, প্রতিটি ঘর নির্মানের বিপরীতে এক লাখ টাকা করে গৃহনির্মাণ প্রকল্পের বরাদ্দ আসে। সাথে ল্যাট্রিন দেয়ার কথাও রয়েছে। এর মধ্যে পাথরাইল ইউনিয়নে ৩৭৪টি ঘরের চাহিদা দিলেও ২৫টি ঘর বরাদ্দ দেয়া হয়েছে।

পাথরাইল ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য রুম্মান পারভীন বলেন, প্রতিটি ঘর বাবদ ১৫ হাজার টাকা করে নেয়া হয়েছে চেয়ারম্যান হানিমুজ্জামান লিটনের নির্দেশে। এই টাকা তিনি চেয়ারম্যানের কাছে জমা দিয়েছেন। ঘর কেমন হলো সেটি তার জানার প্রয়োজন নেই।

আরেক ইউপি সদস্য শফিকুল ইসলাম জানান, চেয়ারম্যান টাকা নিতে বলছে তাই তারা প্রতি ঘরে ১৫ হাজার টাকা করে নেয়া হয়েছে। ঘর নির্মাণে শ্রমিকদের খাবার উপকারভোগীদের দিতেই হয়।

প্রতিটি ঘরের গুণগতমান মোটামুটি ভালই হয়েছে বলে তিনি দাবি করেন।

পাথরাইল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হানিফুজ্জামান লিটন জানান, তিনি এ বছর ২৫টি আশ্রয় প্রকল্পের ঘর পেয়েছেন এবং এই ঘরগুলো এক লাখ ২০ হাজার টাকায় কিনে এনেছেন। এই ঘরের বরাদ্দ আনার জন্য যে টাকা খরচ হয়েছিল তার জন্য ঘর বরাদ্দপ্রাপ্তদের কাছ থেকে ১৫ হাজার টাকা করে নেয়া হয়েছে।

এ ব্যাপারে দেলদুয়ার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নাদিরা আক্তার বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দেয়া ঘরগুলো বিনা পয়সায় বরাদ্দ দেয়ার কথা। কেউ টাকা নিয়ে থাকলে সেটি অন্যায় করেছে। আর ঘরগুলো নির্মাণ করতে যে টাকা লাগবে সরকারের পক্ষ থেকেই সেই টাকা খরচ করা হবে।’

এই বিভাগের আরও খবর