,

সদরঘাটে লঞ্চ চললেও খেয়া বন্ধ

নিজস্ব প্রতিবেদক: রাজধানী ঢাকায় আওয়ামী লীগ ও বিএনপির সমাবেশ ঘিরে দেশের প্রধান নদীবন্দর সদরঘাট এলাকায় থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে। ঘাটে লঞ্চ চলাচল স্বাভাবিক থাকলেও বন্ধ করে দেয়া হয়েছে খেয়াঘাট।

শুক্রবার বিকেল থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত সদরঘাট এলাকা ঘুরে দেখা যায়, ঘাটে লঞ্চ থাকলেও যাত্রী উপস্থিতি কম। যাত্রীর অপেক্ষায় দক্ষিণাঞ্চলগামী বিভিন্ন রুটের লঞ্চগুলো। ঘাটে অপেক্ষমাণ থাকতে দেখা গেছে, পারাবত ১২, এমভি টিপু ১৩, ফারহান ৭, মর্নিং সান ৫ লঞ্চগুলো।

সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনালে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, শুক্রবার সকালে সুন্দরবন ১৫ ও ১৬ বরিশাল থেকে স্বাভাবিক যাত্রী নিয়ে ঢাকায় আসে এবং রাতে পারাবত ১২ ও ১৮ স্বল্প সংখ্যক যাত্রী নিয়ে সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনাল থেকে বরিশালের উদ্দেশে ছেড়ে যায়। এদিন পটুয়াখালী ও ঝালকাঠির উদ্দেশে একটি করে লঞ্চ ছেড়ে গেছে। তবে সকালে সদরঘাটের উদ্দেশে কোনো লঞ্চ ছেড়ে আসেনি।

এদিকে শনিবার দুই দলের সমাবেশকে ঘিরে এখন পর্যন্ত নৌযান চলাচল বন্ধের কোনো সুস্পষ্ট ঘোষণা দেয়নি পরিবহন মালিকরা। তবে দক্ষিণাঞ্চল থেকে ঢাকামুখী লঞ্চ চলাচল আগের তুলনায় কমেছে।

শুক্রবার সকালে দক্ষিণাঞ্চলের জেলাগুলো থেকে ঢাকা নদী বন্দরে নিয়মিত চলাচলকারী লঞ্চের চাইতে কম সংখ্যক লঞ্চ ভিড়েছে৷ ভোলা ও বরগুনা রুটের লঞ্চও কম ভিড়েছে সদরঘাটে। এর মধ্যে কোনো রুটে একটি ও কোনো কোনো রুটে দুইটি করে লঞ্চ ভিড়েছে। ঢাকায় দক্ষিণাঞ্চলের লঞ্চ কম ভিড়লেও ঢাকা থেকে নিয়মিত হারেই লঞ্চ ছেড়ে যাচ্ছে। অন্যান্য রুটগুলোতেও ঢাকা থেকে লঞ্চ ছেড়ে গেছে।

সদরঘাটের দায়িত্বপ্রাপ্ত বিআইডব্লিউটিএ-এর যুগ্ম পরিচালক মুহাম্মদ ইসমাইল হোসেন বলেন, ‘লঞ্চ চলাচল স্বাভাবিক আছে। তবে যাত্রী কম। সারা দিনই বিভিন্ন রুট থেকে লঞ্চ এসেছে এবং ছেড়ে যাচ্ছে। রাতেও ঘাট থেকে লঞ্চ ছেড়ে যাবে।’

এদিন বিকেল থেকে বন্ধ করে দেয়া হয়েছে নদী পারাপারকারি খেয়া নৌকাগুলো। এতে ভোগান্তিতে পড়েছেন বুড়িগঙ্গার এই অংশের দুই পারের যাত্রীরা। সকালের দিকে খেয়া পারাপার অনেকটা স্বাভাবিক থাকলেও বিকেল থেকেই তা কমতে শুরু করে। সন্ধ্যার আগে তা বন্ধ হয়ে যায়। এতে বুড়িগঙ্গার দুই পাড়ের মানুষের নদী পারাপারে ভোগান্তির সৃষ্টি হয়েছে। অনেকেই নদী পার হতে ঘাটে এসে খেয়া বন্ধ দেখে চলে যান। শনিবার সকাল থেকেও খেয়া পারাপার বন্ধ থাকবে বলে জানিয়েছেন খেয়া মাঝিরা।

খেয়া মাঝিরা বলছেন, স্থানীয় আওয়ামীলীগ নেতারা খেয়া পারাপার বন্ধ রাখতে বলেছেন। তবে সংশ্লিষ্ট থানা বলছে, খেয়া পারাপার বন্ধ থাকার কথা তাদের জানা নেই। খেয়া পারাপার বন্ধ থাকায় আধা কিলোমিটার দূরে বাবুবাজার ব্রিজ ব্যবহার করে নদী পার হতে হচ্ছে নিয়মিত যাতায়াতকারীদের। ফলে ভোগান্তিতে পড়ছেন তারা।

ওয়াইজ ঘাট এলাকার খেয়ামাঝি আরিফ বলেন, ‘সারা দিনই নৌকা চালিয়াছি। বিকেলে ওইপার (কেরানীগঞ্জ অংশ) থেকে নৌকা বন্ধ করেছে আওয়ামী লীগের নেতারা।’

খেয়া মাঝি রফিকুল ইসলাম বলেন, কোনো রাজনৈতিক সমাবেশ হলেই বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা এসে আমাদের খেয়া চলাচল বন্ধ রাখতে বলে। আমাদের বাধ্য হয়েই বন্ধ রাখতে হয়। আজ বিকেলেও দলবল নিয়ে এসে খেয়া পারাপার বন্ধ রাখতে বলেছে। কাল সকাল থেকেই বন্ধ রাখতে হবে বলে গেছে।

সদরঘাট নৌ-থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শফিকুর রহমান খান বলেন, ‘খেয়া পারাপার বন্ধের বিষয়টা জানা নেই। আমরা খোঁজ নিয়ে দেখব। আর ঘাট এলাকায় নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার আছে। আমরা নদীতে টহল দিচ্ছি। সাদা পোশাকেও আইনশৃঙ্খলাবাহিনী ঘাটে অবস্থান করছে।’

এ দিন সন্ধ্যা পর্যন্ত সদরঘাট রুটে বাস চলাচল স্বাভাবিক ছিল। ভিক্টোরিয়া পার্ক থেকে নিয়মিত চলাচলকারী সাভার, ভিক্টর, আজমেরি গ্লোরি ও বিহঙ্গ বাস ছেড়ে যেতে ও আসতে দেখা গেছে। তবে রাত ৮টা থেকে এই রুটে বাস চলাচল বন্ধ হতে পারে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

এই বিভাগের আরও খবর