,

শিক্ষক নিয়োগে ‘অনিয়ম’, মামলার আসামী ডিসি-ইউএনও

জেলা প্রতিনিধি, গোপালগঞ্জ: মাদরাসায় ঘুষের বিনিময়ে গোপন পরীক্ষার মাধ্যমে শিক্ষক পদে নিয়োগ দেয়ার অভিযোগে জেলা প্রশাসক (ডিসি) ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সহ  ১২ জনের নামে মামলা হয়েছে।

আসামীর তালিকায় জেলা ও উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা, মাদরাসা শিক্ষা বোর্ডের মহাপরিচালক এবং পরিচালকও রয়েছেন।

সিরাজগঞ্জের তাড়াশ উপজেলার গোন্তা আলিম মাদরাসায় শিক্ষক নিয়োগে এ অনিয়মের অভিযোগে সোমবার আদালতে মামলাটি করা হয়। সব মিলে মামলায় বিবাদীর সংখ্যা ১২ জন।

মামলার আসামিরা হলেন- গোন্তা আলিম মাদরাসার অধ্যক্ষ টি.আর আব্দুল মান্নান, ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি আতিকুর রহমান, তাড়াশ উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মো. আব্দুস সালাম, তাড়াশ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মোস্তা‌ফিজুর রহমান, সিরাজগঞ্জ জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা কাজি সলিম উল্লাহ, জেলা প্রশাসক মীর মোহাম্মদ মাহবুবুর রহমান, বাংলাদেশ মাদরাসা শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (অতিরিক্ত সচিব) হা‌বিবুর রহমান, ডিজির প্রতিনিধি মাদরাসা শিক্ষা বোর্ডের পরিচালক (প্রশাসন ও অর্থ) মোহাম্মদ আবু নঈম, প্রশাসনিক কর্মকর্তা ‌মো. নয়ন মিয়া, তাড়াশ উপজেলার তালম ইউনিয়নের গাবরগাড়ি গ্রামের মো. সেলিম রেজা, লাউতা গ্রামের সাগর ও স্বপ্না খাতুন।

তাড়াশ সহকারী জজ আদালতের পেশকার মুনতাসীন মামুন  মামলার বিষয়টি  নিশ্চিত করেছেন।

তিনি জানান, বিচারক মো. লোকমান হাকিম মামলাটি আমলে নিয়ে বিবাদীদের ৩০ দিনের মধ্যে কারণ দর্শানোর জন্য নোটিশ দিয়েছেন। আজই (মঙ্গলবার) নোটিশ পাঠানো হয়েছে। এর আগে সোমবার ওই আদালতে মামলাটি দায়ের করেন হাদিউল ইসলাম, জয় ইসলাম ও ফাতেমা খাতুন নামে তিন চাকরি প্রার্থী।

মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছে, গোন্তা আলিম মাদরাসায় উপাধ্যক্ষ, অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার অপারেটর, নিরাপত্তা কর্মী ও আয়া- এই চারটি পদের জন্য গত বছরের ২৭ জুন নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দেয়া হয়। বিজ্ঞপ্তি দেখে প্রার্থীরা ভিন্ন ভিন্ন পদে যথানিয়মে আবেদন করেন।

২১ জুলাই তিনটি পদে নিয়োগ পরীক্ষার প্রবেশপত্র দেয়া হয়। পরে অনিয়মের অভিযোগে নিয়োগ পরীক্ষার আগের দিন পরীক্ষা স্থগিত করতে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবর আবেদন করেন বাদীরা। কিন্তু অভিযোগ দেয়ার পরও নির্ধারিত তারিখে পরীক্ষার আয়োজন করা হয়।

এ অবস্থায় একাধিক প্রার্থী চাকরির জন্য টাকা দিয়েও প্রতারণার শিকার হন। পরীক্ষা কেন্দ্রে একজন কীটনাশক পান করেন এবং অপর এক প্রার্থী পরীক্ষার হলেই ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করেন। এ অবস্থায় ডিজির প্রতিনিধি মাদরাসা শিক্ষা অধিদপ্তরের পরিচালক (প্রশাসন ও অর্থ) মোহাম্মাদ আবু নঈম নিয়োগ পরীক্ষা স্থগিত করে চলে যান।

পরে পরীক্ষার ভেন্যু পরিবর্তনের জন্য ৩ ডিসেম্বর তাড়াশ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে মাধ্যম করে মাদরাসা শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের কাছে লিখিত আবেদন করেন অধ্যক্ষ টি. আর আব্দুল মান্নান। ৪ ডিসেম্বর এক চিঠিতে সুপারিশ করেন ইউএনও মো. মোস্তাফিজুর রহমান।

মাদরাসার অধ্যক্ষ ও সভাপতি আতিকুর রহমান মিলে অবৈধভাবে অন্য কোনো প্রার্থীকে প্রবেশপত্র না দিয়ে গোপনে ২৯ ডিসেম্বর ওই চারটি পদে নিয়োগ সম্পন্ন করে বিল দেয়ার জন্য মাদরাসা অধিদপ্তরে পাঠিয়ে দেন।

এ ব্যাপারে তাড়াশ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘এই নিয়োগের বিষয়ে আমার কাছে একটি লিখিত অভিযোগ এসেছিল। যখনই আমার কাছে অভিযোগ এসেছে, আমি তদন্ত করতে দিয়েছি। তদন্ত রিপোর্ট পেলে আমি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে দিয়ে দেব। ওইটার ম্যানেজিং কমিটি বা নিয়োগ কমিটি কোনোটিতেই আমি নেই।’

জেলা প্রশাসক মীর মোহাম্মদ মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘আমার নামে মামলার বিষয়টি কিছুক্ষণ আগে শুনলাম। কে কী কারণে মামলা করেছে সেটা তো আমার জানা নেই। আর আমি তো সেই মাদরাসার কিছু না এবং নিয়োগ বোর্ডেরও কিছু না। কেন মামলা করলো সেটা জানতে হবে।’

এই বিভাগের আরও খবর