,

পুলিশের ভুলে জেল খাটলেন ‘নির্দোষ আনোয়ার’

জেলা প্রতিনিধি, পাবনা: ২০১৬ সালের একটি মাদক মামলায় সাজাপ্রাপ্ত পলাতক আসামি মাদক ব্যবসায়ী আনোয়ার হোসেন (৭০)। তাকে ধরতে অনেক দিন ধরে খুঁজছে পুলিশ। কিন্তু সেই আসামি আনোয়ারকে গ্রেপ্তার করতে না পেরে নামের মিল থাকায় আরেক আনোয়ার হোসেনকে (৩০) গ্রেপ্তার করে জেলহাজতে পাঠানোর অভিযোগ উঠেছে পুলিশের বিরুদ্ধে।

আবার যার বিরুদ্ধে এই ভুল আসামিকে গ্রেপ্তারের অভিযোগ উঠেছে তার নামও আনোয়ার হোসেন।

ভুক্তভোগী পরিবার ও আদালত সূত্র জানায়, চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের জিআর ৬২/২০১৬ নম্বর মামলায় সাজাপ্রাপ্ত পলাতক আসামি বেড়া পৌর সদরের স্যান্যালপাড়া এলাকার মৃত ওহাব মোল্লার ছেলে আনোয়ার হোসেন (৭০)। তার বিরুদ্ধে আদালত কর্তৃক গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারী রয়েছে।

এদিকে, বিষয়টি আদালতের নজরে আনেন নিরপরাধ আনোয়ারের আইনজীবী অ্যাডভোকেট আব্দুর রউফ। তিনি জানান, আদালতের জিজ্ঞাসাবাদে করমজা গ্রামের আনোয়ার সাজাপ্রাপ্ত পলাতক মাদক ব্যবসায়ী আনোয়ার নন বলে নিশ্চিত হন বিজ্ঞ বিচারক সুরাইয়া সরকার।

আদালতে দাখিল করা নাগরিক সনদ, প্রত্যয়নপত্রসহ প্রয়োজনীয় নথি পর্যালোচনা করে আনোয়ারকে জামিন দেন আদালত। একইসঙ্গে পুরো বিষয়টি তদন্ত করে প্রতিবেদন জমা দিতে বেড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।

ভুক্তভোগী আনোয়ার হোসেন বলেন, ১০ জুন বিকেলে এএসআই আনোয়ার করমজা গ্রামে আমার বাড়িতে এসে জিজ্ঞাসা করেন তোর নাম কী? আমি বলি, আনোয়ার। বাবার নাম কী? আমি বলি ওহাব ব্যাপারী। তখন আমাকে বলে থানায় চল, তুই সাজাপাপ্ত আসামি। আমাকে ধরে নিয়ে যান। সারারাত থানায় আটকে রেখে পরের দিন আমাকে কোর্টে চালান করে দেন। পরে সব প্রমাণিত হওয়ার পর জামিন পাই। এখনো জামিনে আছি।

আনোয়ার আরো বলেন, ২০১৬ সালে আমার বিরুদ্ধে একটা মাদক মামলা ছিল, সেই মামলায় ২০২১ সালে আমি নির্দোষ খালাস পেয়েছি। আমার এক মামা গাঁজার ব্যবসা করতো। সেই সুবাদে কারো প্ররোচনায় ওই সময় আমাকে এক পুলিশ গাঁজা দিয়ে মিথ্যা মামলায় ফাঁসিয়ে দিয়েছিল। পুলিশের ভুলে আমাকে হয়রানি হওয়ার পাশাপাশি জেল খাটতে হলো।

এ বিষয়ে অভিযুক্ত এএসআই আনোয়ার হোসেন বলেন, গ্রেপ্তারের সময় করমজার আনোয়ার কিছু বলেনি। তাকে তার নাম, বাবার নাম, ঠিকানা সব জিজ্ঞেস করলে সে সব ঠিক আছে বলে জানায়। আর ওয়ারেন্টের কাগজে বয়স উল্লেখ ছিল না। তার বিরুদ্ধেও ওই একই বছর ২০১৬ সালে মাদক মামলা ছিল। সবকিছু একইভাবে মিলে যাওয়ায় তাকে গ্রেপ্তার করে আদালতে সোপর্দ করা হয়। তিনি যদি ওই সময়ই বলতেন যে তিনি সেই আনোয়ার নন, তাহলে হয়তো আরো যাচাই বাছাই করা যেত। আবার যে আনোয়ারের নামে ওয়ারেন্ট হয়েছে বলে পরে নিশ্চিত হয়েছি সেই আনোয়ারও দীর্ঘ বছর ধরে এলাকা থেকে পলাতক রয়েছে। ওয়ারেন্টে বয়স উল্লেখ থাকলে এ মিসটেক হতো না।

বেড়া মডেল থানার ওসি হাদিউল ইসলাম বলেন, দুই আনোয়ার, তাদের বাবার নাম ও একই সময়ের মাদক মামলার মিল থাকায় তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। ওই সময় তিনি আমাদের সব তথ্য ঠিক ছিল বলে জানিয়েছিলেন। তিনি বলেননি যে যার বিরুদ্ধে ওয়ারেন্ট বের হয়েছে তিনি সেই আনোয়ার নন। পরে আদালতে জামিন নেওয়ার সময় বিষয়টি সবার কাছে পরিষ্কার হয়ে যায়। আদালত আমাদের প্রকৃত আনোয়ার ও গ্রেপ্তারকৃত আনোয়ারের ঘটনা নিয়ে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন। তদন্ত করা হচ্ছে। তবে কতদিনের মধ্যে আদালত প্রতিবেদন দিতে বলেছেন তা জানাননি ওসি।

বেড়া সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার কল্লোল কুমার দত্ত বলেন, গ্রেপ্তার হওয়া আনোয়ার এক সময় স্যান্যালপাড়ার বাসিন্দা ছিলেন দীর্ঘ বছর। দণ্ডপ্রাপ্ত না হলেও তার নামে আলাদা মামলা আছে। এ কারণে ভুল বোঝাবুঝি হয়েছে। আদালতের নির্দেশনায় বিষয়টির তদন্ত চলছে। তদন্ত শেষে প্রতিবেদনের আলোকে জানা যাবে বিস্তারিত।

এই বিভাগের আরও খবর