,

ঘন কুয়াশায় নষ্ট হচ্ছে বোরো ধানের বীজতলা

জেলা প্রতিনিধি, গাইবান্ধা: কয়েক দিন সূর্যের দেখা নেই। কমেছে তাপমাত্রা। এর সঙ্গে ঘন কুয়াশা পড়ায় নষ্ট হচ্ছে বোরো ধানের বীজতলা। এতে আসন্ন মৌসুমে চারা সংকট দেখা দিতে পারে। প্রভাব পড়তে পারে ধান উৎপাদনে। কুয়াশার কবল থেকে বীজতলা রক্ষায় নানা পরামর্শ দিচ্ছে কৃষি বিভাগ। তাদের দাবি, পরামর্শ মানলে বীজতলা রক্ষা সহজ হবে। না হলে ধানের আবাদ ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

গাইবান্ধার সাদুল্যাপুর উপজেলা কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, রংপুর ও দিনাজপুর অঞ্চলে শীতের স্থায়িত্ব ও তীব্রতা অন্য এলাকার তুলনায় বেশি। শৈত্যপ্রবাহের কারণে এ সময়ে বোরোর চারা হলুদাভ হয়ে ক্রমেই মারা যায়। শীতের প্রকোপে ঘন কুয়াশায় চারা পোড়া বা ঝলসানো রোগ দেখা দিতে পারে। সে জন্য কুয়াশা ও শৈত্যপ্রবাহ শুরু হলে বীজতলা রক্ষায় বাড়তি যত্ন নেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।

বোরো মৌসুমে উপজেলায় ধান রোপণের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১৫ হাজার ৬৫০ হেক্টর জমিতে। এ জন্য কৃষক ৪৩৫ টন ধানের বীজ বপন করেছেন। এর মধ্যে হাইব্রিড জাতের ৮৫ টন বীজ রয়েছে। উফশী জাতের বীজ রয়েছে ৩৫০ টন। ধান আবাদে যুক্ত থাকবেন অন্তত ৫০ হাজার কৃষক। তবে গত কয়েক দিনের ঘন কুয়াশায় কৃষকরা বীজতলা নিয়ে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন। এ পরিস্থিতিতে উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তারা তাঁদের নানা পরামর্শ দিচ্ছেন।

উপজেলার কাজীবাড়ী সন্তোলা গ্রামের কৃষক আলমগীর হোসেন বলেন, কুয়াশার কারণে বীজতলায় চারা বাড়ছে কম। আরও কয়েক দিন কুশায়া থাকলে বীজতলা পুরোটাই নষ্ট হয়ে যাবে। এটি আসলে প্রাকৃতিক সমস্যা। তবে কৃষি বিভাগের পারমর্শে বীজতলা রক্ষায় সেভাবেই ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।

কৃষি কর্মকর্তারা বলছেন, কুয়াশার সময় বীজতলার ওপরে স্বচ্ছ পলিথিনের ছাউনি দেওয়া কার্যকর পদ্ধতি। এতে তাপমাত্রা বাড়ে। এর সঙ্গে সন্ধ্যায় চারার গোড়া তিন থেকে পাঁচ সেন্টিমিটার পানিতে ডুবিয়ে রাখা ভালো। পানি হতে হবে গভীর নলকূপের। এ পানি শীতের সময়েও গরম থাকে। সকালে পানি সরিয়ে ফের দিতে হবে। এতে চারা মারা যাওয়ার হার কম থাকে। সকালে পাতার শিশির দড়ি টেনে ফেলে দিতে হবে। সূর্যের আলো সরাসরি পাতায় পড়লে চারা কিছুটা সতেজ থাকবে। বীজ বপনের তিন-চার দিন পর থেকে সেচ দিয়ে মাটি নরম রাখতে হবে।

চারা পোড়া বা ঝলসানো রোগ দমনে ছত্রাকনাশক মিশিয়ে দুপুরের পর স্প্রে করার পরামর্শ দিচ্ছে কৃষি বিভাগ। শীত ও ঘন কুয়াশার কারণে বীজতলায় মাত্রানুযায়ী টিল্ট বা স্কোরজাতীয় ওষুধ ব্যবহার করতে হবে। চারা হলদে হলে প্রতি বর্গমিটারে সাত গ্রাম ইউরিয়া সার দেওয়া যায়। এতে পাতা সবুজ না হলে প্রতি বর্গমিটারে ১০ গ্রাম করে জিপসাম সার দিতে হবে।

চারা বাঁচাতে প্রয়োজনে বীজতলার প্রতি শতকে ১৫০ গ্রাম এমওপি ও ২০০ গ্রাম টিএসপি সার দেওয়ারও পরামর্শ কৃষি বিভাগের। এর সঙ্গে ৪০০ গ্রাম জিপসাম সার দেওয়া ভালো। এতে চারার শীতসহিষুষ্ণতা বেড়ে যায়। আবর্জনা পোড়া সাদা শুকনা ছাই ও পচা গোবর মিশিয়ে শিশির শুকানোর পর দিলে বীজতলা ভালো থাকবে।

সাদুল্যাপুর উপজেলার উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা তানজিমুল ইসলাম বলেন, টানা কুয়াশা থাকলে বীজতলা থেকে চারা তুলে রোপণ না করাই ভালো। তাপমাত্রা স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। বীজ বপনের ৩৫ থেকে ৪৫ দিনে চারা রোপণ করা যায়। এতে শীতে মারা যায় কম, ফলন ভালো হয়।

কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা আবুল কালাম আজাদ বলেন, বর্তমানে বীজতলা জবুথবু অবস্থায় রয়েছে। তবে এখনও ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নিরূপণ করা হয়নি। বীজতলা রক্ষায় এখন কৃষকদের শুধু পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মতিউল আলম বলেন, কয়েক দিন রোদের দেখা না পাওয়ায় স্বাভাবিকভাবেই তাপমাত্রা কম। এর সঙ্গে কুয়াশা থাকায় বীজতলা ক্ষতির কবল থেকে রক্ষায় প্রচার চালানো হচ্ছে।

এই বিভাগের আরও খবর