,

কমলগঞ্জে ডিলারের বিরুদ্ধে চাল আত্মসাতের অভিযোগ

ফাইল ছবি (প্রতিকী)

কমলগঞ্জ (মৌলভীবাজার) প্রতিনিধি : মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলার ইসলামপুর ইউনিয়নের ডিলার আওয়ামী লীগ নেতা ও তাঁর ছেলের বিরুদ্ধে ১০ টাকা মূল্যের চাল চুরির অভিযোগ উঠেছে।

ডিলারের চাল চুরি কথাবার্তার অডিও ভাইরাল হলে এলাকায় তোলপাড় সৃষ্টি হয়। এলাকাবাসীর অভিযোগে চাল চুরির ঘটনা তদন্তে সত্যতা পেলেও আরো তদন্তের কথা জানালেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা। দায়ী ডিলারে বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন এলাকাবাসী। অপরদিকে ডিলার আব্দুল্লা নিজেকে বাঁচাতে প্রশাসনকে ম্যানেজ করতে চেষ্টা করছে বলে একটি সূত্র জানিয়েছে।

জানা যায়, ১৫ এপ্রিল  রাতে ডিলার আব্দুল্লা মিয়া ও তার ছেলে ইসলামপুর ইউনিয়নে পরিচালিত গোলেরহাওড় বাজারে ওএমএসের দোকান হতে সিএনজি যোগে ১০ টাকা মূল্যের চাল পাচার করেন। স্থানীয় বাজারের পাহারাদার বিষয়টি দেখে বাধা দিলেও তাকে হুমকি দিয়ে চাল নিয়ে যান। পর দিন এলাকায় জানাজানি হলে বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠেন এলাকাবাসী উপজেলা নির্বাহী অফিসার বরাবর অভিযোগ দেন।

এছাড়াও বিগত সময় যেসব কার্ডধারী উপকারভোগী সদস্যরা চাল না পাননি তারাও প্রতিবাদী হয়ে উঠেন। এলাকাবাসী অভিযোগ করেন, ১০ টাকা মূল্যের কার্ডধারী অনেকেই ২০১৮ সালে একবার ও ২০১৯ অক্টোবর মাসের পর চাল পাননি।
ইসলামপুর ইউনিয়নের চম্পারায় চা বাগান, সুসমানগর তৈলং বস্তি, গুলেরহাওর, কলাবন ফাঁড়ি, সরিষাবিল, সোনারায়সহ বিভিন্ন গ্রামের লোকজন চাল না পাওয়ায় বিক্ষোভ মিছিল করেন ডিলার আবু আব্দুল্লাহ্ ও তার পুত্রের বিরুদ্ধে।

সরেজমিনে ডিলার আবু আব্দুল্লাহর এলাকায় গিয়ে গুদাম বা চাল বন্টনের জায়গায় কোনো ব্যানার বা সাইনবোর্ড পাওয়া যায়নি।

বাজারের নৈশপ্রহরী ও বাজারের ব্যবসায়ীরা জানান, ১৫ এপ্রিল রাতে ডিলারের ছেলে আজিজ একটি সিএনজি অটোরিকশা করে গুদাম থেকে চাল নিয়ে যাবার সময় নৈশপ্রহরী আটক করে গোলের হাওর বাজারের এক মোবাইল ব্যবসায়ীকে ডেকে নিয়ে চ্যালেঞ্জ করলে তাদের সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করে চাল নিয়ে যায়। পরের দিনই নৈশপ্রহরী উপজেলা খাদ্য কর্মকর্তার বরাবরে একটি আবেদন করেন।

এদিকে ডিলারে বিরুদ্ধে অভিযোগ তদন্ত করেন ট্যাগ অফিসার ও উপজেলা সহকারী প্রকৌশলী মামুন আহমেদ। তদন্তে প্রাথমিক ভাবে দোকান হতে সিএনজি যোগে  ডিলার চাল পাচারের অভিযোগ সত্যতা পান। এছাড়া চাল চুরির বিষয়টি ধামাচাপা দিতে ডিলার আব্দুল্লাহ জনৈক ব্যক্তির সঙ্গে কথাবার্তার অডিও ফোনোলাপ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়।

ভোক্তভোগীরা বলেন, দীর্ঘদিন থেকে ডিলার তাদেরকে ফাঁকি দিয়ে চাল বিক্রি করে টাকা আত্মসাৎ করছে। তৈলং বস্তি এলাকার কয়েকজন লোক ২০১৮ সালের মার্চ মাসে একবার চাল পাবার পর আর এখন পর্যন্ত চাল পায়নি। এভাবে আরো অনেকে ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বর বা অক্টোবরে চাল পাবার পর আর চাল পাননি। অনেকের কার্ড অভিযুক্ত ডিলার নিয়ে গেলেও সেটা আর ফেরৎ দেননি, বরং সেটা চাইতে গেলে উল্টো নাজেহাল করার অভিযোগ রয়েছে।

এ বিষয়ে অভিযুক্ত আবু আব্দুল্লাহ ও তার ছেলের কাছে জানতে চাইলে তারা বলেন বিষয়টি সাজানো, এরকম কোনো ঘটনা ঘটেনি। এ বিষয়ে তদন্ত চলছে বলেও জানান তারা।

এদিকে ঘটনার ১০ দিনেও ডিলারের বিরুদ্ধে চাল চুরির কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ না করায় এলাকাবাসী বিক্ষুদ্ধ হয়ে উঠেছেন। তারা অভিযোগ করেন, উপজেলা প্রশাসন বিষয়টি ধামাচাপা দিতে চাচ্ছে। তা না হলে তদন্ত প্রমাণিত হলেও কেন নির্বাহী অফিসার কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করছেন না।

তদন্ত কর্মকর্তা উপ-সহকারী প্রকৌশলী মামুন ভুঁইয়া জানান, আব্দুল্লাহ ও তার ছেলে চাল চুরির সঙ্গে জড়িত রয়েছে বলে সত্যতা পাওয়া গেছে। তিনি প্রতিবেদন জমা দিয়েছেন।

কমলগঞ্জ খাদ্য কর্মকর্তা দীপক কুমার মন্ডল বলেন, এ বিষয়ে তদন্ত চলছে, তদন্ত শেষে কমিটি সিদ্ধান্ত নেবে।

কমলগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আশেকুল হক বলেন, এ বিষয়ে একটি সভা হয়েছে, একটি তদন্ত রিপোর্ট পেয়েছি সেটা পূর্ণাঙ্গ না হওয়াতে আবারও তদন্ত কমিটি করে দেওয়া হয়েছে। রবিবারের মধ্যে রিপোর্ট জমা দিতে বলা হয়েছে।

এই বিভাগের আরও খবর