,

ইসলাম মানবতার ধর্ম

মুনীরুল ইসলাম ইবনু যাকির: ইসলাম সাম্য, শান্তি, শৃঙ্খলা, সম্প্রীতি ও মানবতার ধর্ম। যেহেতু ইসলাম আল্লাহর পক্ষ হতে আগত, আর আল্লাহ তাঁর সৃষ্টিকূলের প্রতি দয়াদ্র, তাই ইসলামই হলো মানবতার জন্য একমাত্র উপযোগী দীন বা জীবনব্যবস্থা। আল্লাহ তায়ালা তার শেষ নবি মুহাম্মাদ সা.-কে পাঠিয়েছেন গোটা বিশ্বমানবতার জন্য রহমত হিসেবে।

﴿وَمَآ أَرۡسَلۡنَٰكَ إِلَّا رَحۡمَةٗ لِّلۡعَٰلَمِينَ﴾

‘আর আমি আপনাকে সৃষ্টিকুলের জন্য রহমত হিসেবেই প্রেরণ করেছি।’ [সুরা আল-আম্বিয়া, আয়াত : ১০৭]

ইসলাম আদেশ দেয় অনাহারীর মুখে অন্ন তুলে দেয়ার, ব্যথিতজনের ব্যথায় সমব্যথী হওয়ার। মুসলমানদের ওপর রমজানের রোজাকে ফরজ করা হয়েছে, যাতে অভুক্তের কষ্ট তারা অনুভব করতে পারে। জাকাতের বিধান রয়েছে ইসলামে। এছাড়াও নফল দান-সদকার ব্যাপারেও ব্যাপকভাবে উদ্বুদ্ধ করা হয়েছে।

এমনকি নবুয়তপ্রাপ্তির আগেও মানবিক নানান উদ্যোগের মাধ্যমে সমাজের সর্বস্তরের মানুষের কাছে প্রিয় হয়ে উঠেছিলেন মুহাম্মদ সা.। সমাজসচেতন যুবকদের নিয়ে গড়ে তুলেছিলেন হিলফুল ফুজুল নামক একটি সামাজিক সংস্থা। সেখানে তিনি এ মর্মে অঙ্গীকারাবদ্ধ হয়েছিলেন যে, ‘আমরা নিঃস্ব ও অসহায় দুর্গতদের সেবা করব। জুলুম-অত্যাচারের বিরুদ্ধে সোচ্চার হব, শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষা করব এবং বিভিন্ন গোত্রের মধ্যে সম্প্রীতি স্থাপনে সচেষ্ট হব।’

এ জন্যই প্রথম দিন ওহি লাভ করার পর নবি সা. যখন ভীত-সন্ত্রস্ত অবস্থায় খাদিজা রা.-কে ঘটনার বৃত্তান্ত জানালেন, তখন আম্মাজান খাদিজা রা. তাকে অভয় দিয়ে বলেন,

«كَلَّا وَاللَّهِ مَا يُخْزِيكَ اللَّهُ أَبَدًا، إِنَّكَ لَتَصِلُ الرَّحِمَ ، وَتَحْمِلُ الكَلَّ، وَتَكْسِبُ المَعْدُومَ، وَتَقْرِي الضَّيْفَ، وَتُعِينُ عَلَى نَوَائِبِ الحَقِّ»

‘কখনো নয়, আল্লাহর শপথ, আল্লাহ আপনাকে অপমানিত করবেন না। কারণ, আপনি আত্মীয়তার বন্ধন রক্ষা করেন, অসহায় দুস্থদের দায়িত্ব গ্রহণ করেন, নিঃস্বদের সহযোগিতা করেন, মেহমানের আপ্যায়ন করেন এবং অধিকার বঞ্চিতদের অধিকার ফিরিয়ে দেন।’ [বুখারি, আসসাহিহ, ওহির সূচনা অধ্যায়, হাদিস নং ৩; সংক্ষেপিত]

ইসলাম মানবসেবা ও সমাজকল্যাণে কী পরিমাণ গুরুত্বারোপ করেছে, তা অনুধাবন করতে নিম্নোক্ত হাদিসে কুদসিটাই যথেষ্ট হতে পারে—

আবু হুরায়রা রাদিআল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, কিয়ামত দিবসে আল্লাহ তায়ালা বলবেন, ‘হে আদম সন্তান, আমি অসুস্থ ছিলাম, কিন্তু তুমি আমার শুশ্রূষা করোনি।’ বান্দা বলবে, ‘হে আমার রব! আপনিতো বিশ্বপালনকর্তা কীভাবে আমি আপনার শুশ্রূষা করব?’ তিনি বলবেন, ‘তুমি কি জানতে না যে, আমার অমুক বান্দা অসুস্থ হয়েছিল, অথচ তাকে তুমি দেখতে যাওনি। তুমি কি জান না, যদি তুমি তার শুশ্রূষা করতে তবে তুমি তার কাছেই আমাকে পেতে?

(আল্লাহ তায়ালা আবার বলবেন) ‘হে আদম সন্তান, আমি তোমার কাছে আহার চেয়েছিলাম, কিন্তু তুমি আমাকে আহার করাওনি।’ বান্দা বলবে, ‘হে আমার রব, আপনি হলেন বিশ্বজগতের পালনকর্তা, আপনাকে আমি কীভাবে আহার করাব?’ তিনি বলবেন, ‘আমার অমুক বান্দা তোমার কাছে খাদ্য চেয়েছিল, তাকে তুমি খাদ্য দাওনি। তুমি কি জান না যে, তুমি যদি তাকে আহার করাতে তাহলে আজ তা প্রাপ্ত হতে?’

(আল্লাহ তায়ালা আবার বলবেন) ‘হে আদম সন্তান, আমি তোমার কাছে পানীয় চেয়েছিলাম, অথচ তুমি আমাকে পানীয় দাওনি।’ বান্দা বলবে, ‘হে আমার রব, তুমি তো রাব্বুল আলামিন। তোমাকে আমি কীভাবে পান করাব?’ তিনি বলবেন, ‘তোমার কাছে আমার অমুক বান্দা পানি চেয়েছিল কিন্তু তাকে তুমি পান করাওনি। তাকে যদি পান করাতে তবে নিশ্চয় আজ তা প্রাপ্ত হতে।’ [মুসলিম, আসসাহিহ : ৬৭২১]

সুতরাং, ইসলাম মানবতার ধর্ম। মুসলিমরাই মানবতার কান্ডারী। ইসলামের এই সাম্য ও ইনসাফনীতির কারণে যুগে যুগে নির্যাতিত, নিপীড়িত মজলুম জনগোষ্ঠী ইসলামের ছায়াতলে আশ্রয় নিয়েছে। পৃথিবীর যে প্রান্তেই মানবতা লঙ্ঘিত হয়েছে, হোক তা সামাজিকভাবে, গোষ্ঠীগতভাবে কিংবা রাজা-রাজড়াদের হাতে, ইসলাম সেখানেই ছুটে গেছে।

অতএব, মানবসমাজে বসবাস করেও সমাজ থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়ার কিংবা সামাজিক দায়বদ্ধতা থেকে হাত গুটিয়ে নেয়ার সুযোগ ইসলাম রাখেনি। আদর্শ প্রচারের সবচেয়ে বড় মাধ্যম হলো সমাজসেবা, খেদমতে খালক। আজ মিশনারি এনজিওগুলো সমাজসেবা, মানবিক বিভিন্ন প্রয়োজনে পাশে দাঁড়ানোর নামে সরলপ্রাণ মুসলিমদের ঈমান নিয়ে ছিনিমিনি খেলছে। এদের ব্যাপারে দেশ-জাতির সোচ্চার হতে হবে এবং সমাজসেবার মিশন নিয়ে ছুটে যেতে হবে বঞ্চিতদের কাছে। যদি আল্লাহর জমিনে আল্লাহর একজন বান্দাও সুদের যাঁতাকলে পিষ্ট হয়, ক্ষুধার যন্ত্রণায় কাতরাতে কাতরাতে মারা যায়, বিনা চিকিৎসায় ধুঁকে ধুঁকে মারা যায় তাহলে এর জবাব আমাদেরও দিতে হবে আল্লাহর দরবারে।

এই বিভাগের আরও খবর