,

ঈদের দিনের বিশেষ ১০ আমল

শাহেদ বিন হোসাইন: পবিত্র ঈদুল ফিতর। মুসলমানদের জাতীয় ও আন্তর্জাতিক ধর্মীয় উৎসব। মুসলিম জাতির সবচেয়ে বড় আনন্দের দিন। মনের সব কালিমা দূর করে মানুষে মানুষে ভেদাভেদ ভুলে ভ্রাতৃত্ব ও সৌহার্দ্য-সম্প্রীতির অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপনের দিন। মনের হিংসা-বিদ্বেষ, অহংকার, অহমিকা, আত্মম্ভরিতা, আত্মশ্লাঘা, লোভ, রাগ-ক্রোধসহ যাবতীয় কুপ্রবৃত্তি থেকে নিজের পবিত্রতা ঘোষণা করার উপলক্ষ। মহিমান্বিত দিনটির আনন্দ-উৎসবে ভিন্নমাত্রা যোগ করবে নবীজি (সা.)-এর কিছু সুন্নতের অনুসরণ।

ঈদের দিনের আমল

১. গোসল ও পবিত্রতা অর্জন করা : ঈদের নামাজের জন্য গোসল করা ও মিসওয়াক করা সুন্নাত। আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, নবী কারিম (সা.) ঈদুল ফিতর ও আজহার দিন গোসল করতেন। (বুখারি : ১/১৩০)

এ ছাড়া একাধিক বিশুদ্ধ সনদে বর্ণিত, আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.) ঈদুল ফিতরের দিন ইদগাহে যাওয়ার আগে গোসল করতেন। (মুয়াত্তা, হাদিস : ৪২)

২. উত্তম পোশাক পরিধান করা : মুসলমানদের প্রধান দুই ধর্মীয় উৎসব তথা ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আজহার দিন পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন সুন্দর ও সাধ্যের ভেতরে সবচেয়ে উত্তম পোশাক পরিধান করা সুন্নত। ইবনুল কাইয়িম (রহ.) বলেন, নবীজি (সা.) দুই ঈদের দিন সবচেয়ে সুন্দর ও উত্তম জামাটি পরিধান করতেন। তাঁর একটা বিশেষ পোশাক ছিল, যা তিনি দুই ঈদে ও জুমায় পরিধান করতেন। হাদিসে এসেছে, নবী কারিম (সা.) প্রতিটি ঈদে ডোরাকাটা পোশাক পরিধান করতেন। (বায়হাকি, হাদিস : ৬৩৬৩)

৩. ঈদগাহে যাওয়ার আগে পানাহার করা : ঈদুল ফিতরের দিন ঈদগাহে যাওয়ার আগে সামান্য কিছু পানাহার করা সুন্নত। তবে ঈদুল আজহার দিন পানাহার ছাড়া ঈদগাহে যাওয়া ও নামাজের পর নিজের কোরবানির গোশত দিয়ে প্রথম খাবার গ্রহণ করা সুন্নত। আনাস (রা.) বলেন, নবীজি (সা.) ঈদুল ফিতরের দিন সকালে কিছু খেজুর খেতেন। অন্য এক বর্ণনা মতে, তিনি বিজোড় সংখ্যক খেজুর খেতেন। (বুখারি, হাদিস : ৯৫৩)

৪. ঈদগাহে যাতায়াতের সময় তাকবির বলা : ঈদগাহে যাতায়াতের সময় ঈদুল ফিতরের দিন তুলনামূলক নিম্নস্বরে তাকবির বলা এবং ঈদুল আজহার দিন উচ্চৈঃস্বরে তাকবির পাঠ করা সুন্নত। ইমাম জুহরি থেকে বর্ণিত, নবীজি (সা.) ঈদুল ফিতরের দিন তাকবির পাঠ করতে করতে ঈদগাহের দিকে গমন করতেন। নামাজ পড়া পর্যন্ত এই তাকবির অব্যাহত রাখতেন। নামাজ শেষ হলে তাকবির পাঠ বন্ধ করে ফেলতেন। (সিলসিলাতুল আহাদিস আস-সহিহা, হাদিস : ১৭১)

৫. আসা-যাওয়ার রাস্তা পরিবর্তন করা : ঈদগাহে যাতায়াতের রাস্তা পরিবর্তন করা সুন্নাত। যাওয়ার সময় এক রাস্তা দিয়ে গমন করা। আর প্রস্থানের সময় অন্য রাস্তা ব্যবহার করা সুন্নত। জাবের ইবনে আবদুল্লাহ (রা.) বলেন, নবীজি (সা.) ঈদের দিন ঈদগাহে আসা-যাওয়ার রাস্তা পরিবর্তন করতেন। (বুখারি, হাদিস : ৯৮৬)

৬. হেঁটে ঈদগাহে গমন : কোনো ধরনের অপারগতা ও অক্ষমতা না থাকলে, হেঁটে ঈদগাহে গমন করা সুন্নত। আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.) বর্ণনা করেন, রাসুল (সা.) হেঁটে ঈদগাহে গমন করতেন এবং হেঁটে ঈদগাহ থেকে প্রত্যাগমন করতেন। (তিরমিজি, হাদিস : ১২৯৫)

৭. ঈদগাহে যেতে শিশুদের সঙ্গে নেওয়া : আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) দুই ঈদের দিন ঈদগাহে যাওয়ার সময় ফজল ইবনে আব্বাস, আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস, আব্বাস, আলী, জাফর, হাসান, হুসাইন, উসামা বিন জায়দ, জায়েদ বিন হারিসা, আইমান ইবনে উম্মু আইমান রাদিয়াল্লাহু আনহুমকে সঙ্গে নিয়ে উচ্চৈঃস্বরে তাকবির ও তাহলিল পাঠ করতে করতে বের হতেন। অতঃপর তিনি কামারদের রাস্তা দিয়ে ঈদগাহে উপস্থিত হতেন এবং প্রত্যাবর্তনের সময় মুচিদের রাস্তা দিয়ে ঘরে আসতেন। (সুনানে কুবরা বায়হাকি, হাদিস : ৬৩৪৯)

৮. ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় করা : ঈদের দিন একে অপরের সঙ্গে সাক্ষাৎ হলে শুভেচ্ছা বিনিময় করা সুন্নত। হাদিসে বর্ণিত আছে, জুবায়ের বিন নুফাইর (রা.) বলেন, নবীজি (সা.) ও সাহাবায়ে কেরাম ঈদের দিন পরস্পর সাক্ষাৎ হলে বলতেন তাকাব্বালাল্লাহু মিন্না ওয়ামিন কুম অর্থাৎ আল্লাহ আমার ও আপনার যাবতীয় ভালো কাজ কবুল করুক। (ফাতহুল কাদির : ২/৫১৭)

৯. ঈদের খুতবা শোনা : ঈদের নামাজ শেষে খুতবা মনোযোগ সহকারে শোনা। হাদিসে এসেছে, আবদুল্লাহ বিন সায়িব (রা.) বলেন, নবীজি (সা.)-এর সঙ্গে আমি ঈদগাহে উপস্থিত হলাম। এরপর তিনি আমাদের নামাজ পড়িয়েছেন। অতঃপর তিনি বলেন, আমরা নামাজ শেষ করেছি। যার ইচ্ছা সে খুতবা শোনার জন্য বসবে, আর যে চলে যেতে চায়, সে চলে যাবে। (ইবনে মাজাহ, হাদিস : ১০৭৩)

১০. ঈদগাহ থেকে ফিরে নফল আদায় করা : ঈদের নামাজের আগে-পরে ঈদের নামাজের স্থানে যেকোনো ধরনের নফল নামাজ আদায় করা মাকরুহ। ঈদের নামাজের পরে ঈদগাহ থেকে বাড়ি ফিরে দুই রাকাত নফল আদায় করা সুন্নত। আবু সাঈদ খুদরি (রা.) বলেন, নবী কারিম (সা.) ঈদের নামাজের আগে কোনো নামাজ পড়তেন না। তবে নামাজের পর ঘরে ফিরে দুই রাকাত নামাজ আদায় করতেন। (ইবনে মাজাহ, হাদিস : ১২৯৩)

ঈদের দিনের এসব চমৎকার আমল ও আয়োজন আমাদের ঈদ আনন্দ বহুগুণ বাড়িয়ে দেবে, ইনশাআল্লাহ।

আল্লাহ আমাদের সবাইকে তাওফিক দান করুন। আমিন।

লেখক : শিক্ষক, জামেয়া দারুল মাআরিফ আল ইসলামিয়া, চট্টগ্রাম।  

এই বিভাগের আরও খবর