কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি: ব্রহ্মপুত্র নদে ঘর বিলীন হওয়া ৭৪’এর আলোচিত বাসন্তীকে সুখবর দিলেন কুড়িগ্রামের জেলা প্রশাসক সুলতানা পারভীন। সুখবর হলো, নতুন বাড়ি পাচ্ছেন বাসন্তী।
সোমবার বিকেলে তিনি বাসন্তীর খোঁজ-খবর নিতে গিয়ে তাকে এই আশ্বাস দেন। কয়েক বছর আগে কারিতাস নামের একটি এনজিও ব্রহ্মপুত্র নদের তীরে বাসন্তীর নামে একটি ঘর বরাদ্দ দেয়। সেই সঙ্গে তার নামে একটি গ্রামেরও নামকরণ করা হয়। সেটাই ছিল বাসন্তীর ঠিকানা। কিন্তু ব্রহ্মপুত্র নদের ভাঙনে বাসন্তী গ্রামটিও বিলীন হয়ে গেছে। এরপর থেকে তার ঠাঁই হয়েছে ভাইয়ের বাড়িতে।
এলাকায় খড়ি কুঁড়িয়ে দিন কাটছে বাসন্তীর। মাঝে মাঝে একা একা কথা বলেন আর হাসেন। তার ভাষা বোঝার সাধ্য নেই কারও। অপরিচিত মানুষ দেখলে তার দিকে তাকিয়ে থাকেন।
দেশের অনেক উন্নয়ন হয়েছে। অনেকের ভাগ্যের পরিবর্তনও ঘটেছে। ঘটেনি শুধু ৭৪’র আলোচিত চিলমারীর বাসন্তীর। বাঁক প্রতিবন্ধী বাসস্তীর বয়স ৭০/৭৫ বছর মতো (জাতীয় পরিচয়পত্র জন্ম তাং ১১/১০/১৯৪২ হলেও বয়স্ক ভাতা কার্ডে জন্ম তাং- ১৩/০২/১৯৫১)। এ
খানেও যেন রহস্য। দাম্পত্য জীবনেও সুখের মুখ দেখেননি তিনি। স্বামী-সংসার হারানোর আগেও তাকে মা-বাবার উপর নির্ভরশীল থাকতে হয়েছে। পরগাছা হয়ে বেড়ে উঠা বাসন্তী দুই ভাই আশু ও বিশুর উপর নির্ভরশীল ছিলেন। বছর খানে আগে বিশুর মৃত্যুর পর ছোট ভাই আশু দাসের উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েন তিনি। তাদেরও নেই সম্বল। বারবার নদী ভাঙনে বাসন্তীসহ হাজারো মানুষ হারিয়েছে তাদের ভিটে-মাটিসহ শেষ সম্বল।
এরই এক পর্যায়ে বেশ কয়েক বছর আগে কারিতাস নামের একটি এনজিও ব্রহ্মপুত্র নদের তীরে বাসন্তীর নামে একটি ঘর বরাদ্দ দেয়। সেই সঙ্গে তার নামে একটি গ্রাম তৈরি করে। এটাই ছিল বাসন্তীর ঠিকানা। কিন্তু ব্রহ্মপুত্র নদের ভাঙনে বাসন্তী গ্রামটিও বিলীন হয়ে যায়। এরপর রমনা ইউনিয়নের জোড়গাছ এলাকায় জায়গা জুটলে সেখানেই বাসন্তী ও তার ভাই মৃত বিশু দাসের স্ত্রীর সঙ্গে একটি ভাঙা টিনের ছাপড়া ঘরে থাকেন। আর ৩ মাস পর পর পাওয়া বয়স্ক ভাতার ১৫শ টাকা ছোট ভাই আশুর হাতে তুলে দেন। এতে করে কোনো রকমে দিন কাটছে তাদের। শত কষ্টের মধ্যে থাকলেও জনপ্রতিনিধিদের চোখে না পড়ায় সরকারের জমি আছে ঘর নাই প্রকল্পের তালিকা থেকে বাসন্তীর নাম বাদ পড়ে যায়।
এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট রমনা মডেল ইউপি চেয়ারম্যান আজগর আলী সরকার জানান, বাসন্তীর নামে বয়স্ক ভাতার কার্ড দেয়া আছে। মাঝে মধ্যে ভিজিএফ সুবিধা দেয়া হয়।
এই বিষয়ে জেলা প্রশাসক সুলতানা পারভীন জানান, তিনি বাসন্তী ও তার পরিবারের খোঁজ-খবর নিয়েছেন। বাসন্তীর জন্য বিশেষ উদ্যোগে একটি ঘর নির্মাণের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।