,

শিক্ষার্থীদের রোদে দাঁড় করিয়ে বিভাগীয় কমিশনারকে অভ্যর্থনা!

জেলা প্রতিনিধি, পটুয়াখালী: পটুয়াখালীর বাউফল আদর্শ উচ্চ বালিকা বিদ্যালয় পরিদর্শনে আসবেন বরিশালের বিভাগীয় কমিশনার। তাকে অভ্যর্থনা জানাতে পরীক্ষা স্থগিত করে কোমলমতি শিক্ষার্থীদের সাড়ে তিন ঘণ্টা রোদে দাঁড় করিয়ে রাখার অভিযোগ উঠেছে।

বুধবার (৯ নভেম্বর) এমন ঘটনা ঘটেছে।

সরেজমিন ও সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, সকালে বরিশালের বিভাগীয় কমিশনার আমিন উল আহসান বাউফল আদর্শ উচ্চ বালিকা বিদ্যালয় পরিদর্শনে আসবেন তাই ওই বিদ্যালয়ের ১০ম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের উচ্চতর গনিত বিষয়ের টেস্ট পরীক্ষা স্থগিত করা হয়। তাকে অভ্যর্থনা জানাতে সকাল ১০টা থেকে ২টা পর্যন্ত কয়েকশত কোমলমতী শিক্ষার্থীদের রোদের মধ্যে দাঁড় করিয়ে রাখা হয়। অতঃপর দুপুর দেড়টার দিকে বিভাগীয় কমিশনার বিদ্যালয় পরিদর্শনে আসেন।

এরপর বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তাকে লালগালিচার অভ্যর্থনা জানিয়েছেন। শিক্ষার্থীরা বাধ্যযন্ত্র বাঝিয়ে ও ফুল ছিটিয়ে তাকে শুভেচ্ছা জানান। এসময় তার সাথে ছিলেন পটুয়াখালীর জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ কামাল হোসেন, বাউফল উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ আল আমিন, বিভাগীয় কমিশনারের একান্ত সচিব নজরুল ইসলামসহ সরকারি বেশ কয়েকজন কর্মকর্তা।

বিভাগীয় কমিশনার ওই বিদ্যালয়ের কয়েকটি শ্রেণিকক্ষের পাঠদান পর্যবেক্ষণ করেন এবং শিক্ষার্থীদের সাথে কুশল বিনিময় করেন। এরপর দুপুর দুইটায় বিদ্যালয়ের দোতালায় হল রুমে শিক্ষার্থীদের অভিভাবকদের সাথে মতবিনিময় করেন। বিকাল ৩টার দিকে তিনি বিদ্যালয় ত্যাগ করেন।

এর আগে বিভাগীয় কমিশনার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে বাউফল দাশপাড়া মডেল সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় পরিদর্শন করেন। সেখানেও তাকে লালগালিচার অভ্যর্থনা জানানো হয়।

জানা গেছে, বিভাগীয় কমিশনারের সকাল ৯টায় বাউফলে এসে পৌঁছানোর কথা ছিলো। কিন্তু তিনি আসেন দুপুর ১২টায়। সরাসরি চলে যান উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কার্যলয়ে। সেখান থেকে সাড়ে ১২টায় আসেন বাউফল দাশপাড়া মর্ডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। তারপর দুপুর দেড়টায় আসেন বাউফল আদর্শ উচ্চ বালিকা মাধ্যমিক বিদ্যালয়।

বাউফল আদর্শ উচ্চ বালিকা বিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, বিভাগীয় কমিশনারের আগমন উপলক্ষ্যে সকাল ৭টার মধ্যে সকল শিক্ষার্থীদের বিদ্যালয়ে উপস্থিত থাকার নির্দেশ দেয়া হয়। সে অনুযায়ী শিক্ষার্থীরা বিদ্যালয়ে উপস্থিত হন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অনেক শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করেন, স্যার আসবেন বলে তারা বাসা থেকে কোনো কিছু না খেয়েই সকালে বিদ্যালয় এসেছেন। এরপর সকাল ১০টা থেকে বিদ্যালয়ের প্রবেশ পথে রোদের মধ্যে তাদেরকে দাঁড় করিয়ে রাখা হয়। দাঁড়িয়ে থাকতে থাকতে তারা অনেকেই ক্লান্ত হয়ে পরেন। অনুষ্ঠান শেষে বিকাল তিনটার দিকে তাদেরকে খাবার প্যাকেট দেয়া হয়।

দশম শ্রেণির নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েক শিক্ষার্থী বলেন, আজ তাদের উচ্চতর গণিত বিষয়ের টেষ্ট পরীক্ষা ছিলো। বিভাগীয় কমিশনার স্যার বেলা ১০টায় আসবেন বলে পরীক্ষা স্থগিত করা হয়। তিনি এসেছেন দুপুর দেড়টায়। ইচ্ছে করলে স্কুল কর্তৃপক্ষ সকালে আমাদের গণিত পরীক্ষা নিতে পারতেন।

আদর্শ উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জাহানারা বেগম বলেন, আজ (বুধবার) উচ্চতর গণিত বিষয়ের পরীক্ষা ছিলো। তারিখ পরিবর্তন করে আগামী শনিবার নেয়া হয়েছে।

বিভাগীয় কমিশনার আমিন উল আহসানকে তার মোবাইল ফোনে কল করা হলে তিনি বলেন, এই মুহূর্তে আমি কথা বলতে পারবো না। আমি প্রোগ্রামে আছি। পরে কথা বলবো।

বিভাগীয় কমিশনারের একান্ত সচিব নজরুল ইসলাম বলেন, ওই বিদ্যালয় কোনো পরীক্ষা আছে তা কর্তৃপক্ষ আমাদেরকে পূর্বে অবহিত করেননি। খোঁজখবর নিয়ে বিষয়টি দেখা হবে।

এই বিভাগের আরও খবর