,

রানা প্লাজার সামনে অঝোরে কাঁদছেন এক মা

নিজস্ব প্রতিবেদক: রানা প্লাজা ট্র্যাজেডি বাংলাদেশ তথা বিশ্ব শিল্প ইতিহাসের এক ভয়ংকর অধ্যায়। এ দিন সাভারের রানা প্লাজার ৮ তলা ভবন ধসে শিল্প ইতিহাসে ঘটে সর্বোচ্চ শ্রমিক মৃত্যু ও আহতের ঘটনা। প্রতি বছর এই দিনে স্বজনদের আহাজারিতে ভারী হয় সাভারের বাতাস। দূর-দূরান্ত থেকে নিহত সন্তানের খোঁজে ছুটে আসেন মা-বাবা, ভাই-বোন। তারা তাদের স্বজনের কথা মনে করে রান্না প্লাজার সামনে এসে কাঁদেন অঝোরে। তেমনি কঠোর লকডাউন উপেক্ষা করে রানা প্লাজার সামনে এসেছেন এক মা।

রানা প্লাজা ট্র্যাজেডিতে সন্তান হারিয়েছেন পঞ্চগড়ের তেতুলিয়া এলাকার মাকসুদা বেগম। ২৪ এপ্রিল এলেই তিনি এই সাভারে ধসে পড়া রানা প্লাজার সামনে এসে কান্নাকাটি করেন। এবারও এসেছেন তিনি, দমাতে পারেনি কঠোর বিধিনিষেধের লকডাউন। সন্তানের জন্য চোখের পানি ফেলে দোয়া করার জন্যই এখানে ছুটে এসেছেন তিনি।

মাকসুদার সঙ্গে কথা হলে তিনি বলেন, আমি বৃহস্পতিবার পঞ্চগড়ের তেতুলিয়া থেকে খুব কষ্ট করে সাভারে এসেছি। আগামীকাল আবার চলে যাবো। রানা প্লাজা দুর্ঘটনায় মারা গেছে আমার ছেলে আল-মাসুদ। সে কোয়ালিটি সেকশনে কাজ করতো। তার জন্য দোয়া করার জন্য পিকআপ, ট্রাক ও রিকশা ভেঙে ভেঙে দীর্ঘ সময় পরে সাভারে আসি।

তিনি আরও বলেন, আমি আমার ছেলেটাকে হারিয়ে নিঃস্ব হয়েছি। ছেলেটা আমার উপার্জনের একমাত্র অবলম্বন ছিল। এখন খুব কষ্টে দিন পার করছি। কেউ খোঁজ নেয় না। ক্ষতি পূরণের আশ্বাসেই কেটে গেল কত বছর। ক্ষতি পূরণ পাবো কি না জানি না? প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া ১ লাখ টাকা অনুদান পেয়েছি। এখন পর্যন্ত আর কোন অনুদান কিংবা ক্ষতিপূরণ পাইনি। এখানে এলে একটু শান্তি পাই। তাই কষ্ট হলেও আসি। আমার সন্তানের জন্য সবার কাছে দোয়া চাই।

এ ব্যাপারে বাংলাদেশ বস্ত্র ও পোশাক শিল্প শ্রমিক লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক সারোয়ার হোসেন বলেন, ৮ বছর পার হয়ে গেলো। প্রাণ হারিয়েছেন ১১শর বেশি শ্রমিক ভাই-বোন। কিন্তু এখনও তারা বিচার পেলো না। শ্রমিক বলেই কি তারা বিচার পাবে না? তবুও শ্রমিকরা স্বপ্ন বুনে, রানাসহ জড়িতদের শাস্তি হবে। সেদিন হবে প্রতিটি মৃত শ্রমিকের আত্মার শান্তি। দোষীদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের হয়েছে। এই মামলা দ্রুত নিষ্পত্তি করে শাস্তির ব্যবস্থা করলে স্বজনরাও শান্তি পেতো।

প্রসঙ্গত, সাভারে রানা প্লাজার ৮ তলা ভবন ২০১৩ সালের ২৪ এপ্রিল সকালে ধসে পড়ে। এ ঘটনায়  ১১শর বেশি পোশাক শ্রমিক মারা যায়, আহত হয় সহস্রাধিক। যা বিশ্ব-ইতিহাসে এক বিভীষিকাময় দিন। এ ঘটনায় পরদিন সাভার থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) ওয়ালী আশরাফ ভবন নির্মাণে ‘অবহেলা ও ত্রুটিজনিত হত্যা’র অভিযোগে মামলা দায়ের করেন।

২০১৩ সালের ১৫ জুন একটি মামলা দায়ের করে দুদক। ২০১৪ সালের ১৬ জুলাই রানাসহ ১৮ জনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও দুদকের উপপরিচালক মফিদুল ইসলাম। বর্তমানে এ মামলা ঢাকা বিভাগীয় বিশেষ জজ আদালতে সাক্ষ্য গ্রহণ পর্যায়ে রয়েছে। এ ছাড়া রাজউক ও দুদক আরও দুটি পৃথক মামলা দায়ের করেন।

এই বিভাগের আরও খবর