,

মাদ্রাসা অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ

জেলা প্রতিনিধি, গোপালগঞ্জ: গোপালগঞ্জের কাশিয়ানী উপজেলার ডোমরাকান্দি নুরুল ইসলাম ফাযিল মাদ্রাসার অধ্যক্ষ মো. জাকারিয়ার বিরুদ্ধে বিধিবহির্ভূতভাবে তার নিয়োগ, গাছ কাটা, স্বাক্ষর জালিয়াতি, বরাদ্দের চাল ও অর্থ আত্মসাৎ, স্বজনপ্রীতিসহ নানা অনিয়ম এবং দুর্নীতির অভিযোগ অভিযোগ উঠেছে।

এসব বিষয়ে মাদ্রাসা শিক্ষা অধিদপ্তর, মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ড ও আরবি বিশ^বিদ্যালয় বরাবর লিখিত অভিযোগ করেছেন এলাকাবাসী।

অভিযোগে জানা গেছে, ২০০২ সালে নিয়োগ বিধি উপেক্ষা করে মো. জাকারিয়া অধ্যক্ষ হিসেবে মাদ্রাসাটিতে যোগদান করেন। এরপর থেকে তিনি নানা অনিয়ম ও দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়েন। নিয়োগ প্রবিধান অনুযায়ী অধ্যক্ষ নিয়োগের শর্ত হল-প্রথম শ্রেণির কামিল ডিগ্রিসহ সকল পরীক্ষায় দ্বিতীয় শ্রেণি/বিভাগ অথবা দ্বিতীয় শ্রেণির কামিল ডিগ্রিসহ আরবি/ইসলামিক স্টাডিজে দ্বিতীয় শ্রেণির মাস্টার্স ডিগ্রিসহ সকল পরীক্ষায় দ্বিতীয় বিভাগ থাকতে হবে। এছাড়া কোন দাখিল মাদ্রাসায় ৮ বছর প্রশাসনিক অভিজ্ঞতা অথবা মাদ্রাসায় প্রভাষক হিসেবে ৮ বছরের অভিজ্ঞতা থাকতে হবে। কিন্তু তিনি জুনিয়র মৌলভী হিসেবে ১৯৯৩ সালে প্রথম যোগদান করেন। তিনি দাখিল পরীক্ষায় দ্বিতীয় বিভাগ ও আলিম তৃতীয় বিভাগে উত্তীর্ণ হন। তাহলে তিনি কিভাবে নিয়োগ পেলেন এমনটাই প্রশ্ন এলাকাবাসীর।

এছাড়া মাদ্রাসার প্রাক্তন শিক্ষার্থী ব্যারিস্টার আনোয়ার কর্তৃক দেয়া অনুদানের ১ লাখ ৩০ হাজার, কম্পিউটার কেনা বাবদ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান সুব্রত ঠাকুরের দেয়া ৫০ হাজার, সাতাশিয়া গ্রামের কামরুজ্জামানের দেয়া অনুদানের ৫০ হাজার, ২০১৮ সালে গ্রাম্য সালিশ থেকে পাওয়া ৪০ হাজার, ২০২১-২২ অর্থ বছরে সংসদ সদস্য মুহাম্মদ ফারুক খানের দেয়া ১টন টিআরের টাকা ও এতিমখানার অনুকূলে ২০২২-২৩ অর্থ বছরে জেলা প্রশাসকের বরাদ্দ দেয়া ২ টন চাল সভাপতিকে না জানিয়ে জাল স্বাক্ষরে উত্তোলন করে আত্মসাৎ করেছেন অধ্যক্ষ।

মাদ্রাসার নামে কৃষি ব্যাংকে ১ লাখ টাকার সঞ্চয়পত্র কেনা রয়েছে। ওই সঞ্চয়পত্রের লভ্যাংশের টাকা, প্রতি বছর মাদ্রাসার পুকুর লীজের টাকা ও ২০২৩ সালে মাদ্রাসার একটি মেহগনি গাছ বিক্রির টাকার কোন হিসাব নেই। মাদ্রাসার দৈনন্দিন ও বার্ষিক হিসেব চাইলে অধ্যক্ষ দিতে গড়িমসি করেন। কোনো সভাপতি মাদ্রাসার এসব আয়-ব্যয় ও হিসাব-নিকাশের কথা বললেই তাকে নানা কৌশলে সভাপতি পদ থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়। যেমন-সাবেক সভাপতি সিরাজুল ইসলাম বিশ^াস, শাহ আলম ও মো. মাসুদ রানাকে অপসারণ করা হয়েছে।

এদিকে, ইসলামী আরবি বিশ^বিদ্যলয়ের নিয়ম অনুযায়ী গভর্নিং বডি গঠন প্রক্রিয়া শেষে সভাপতি নিয়োগের জন্য ইসলামী আরবি বিশ^বিদ্যালয়ে আবেদন করতে হয়। কিন্তু অধ্যক্ষ জাকারিয়া সাহেব আগেই সভাপতির আবেদন দিয়ে সভাপতি নির্বাচন করে থাকেন। সভাপতি নির্বাচিত হওয়ার পর প্রথম মিটিংয়ে সহ-সভাপতি নির্বাচিত করতে হয়। কিন্তু অধ্যক্ষ নিজেই সহ-সভাপতি নির্বাচিত করেন। বর্তমান সভাপতি এম, এ কামরুল খান অধ্যক্ষ জাকারিয়ার নিকটাত্মীয়। যে কারণে অধ্যক্ষ ও তার বাবা মিলে ভূয়া রেজুলেশন করে নিয়মনীতি না মেনেই তাকে সভাপতি করা হয়েছে।

ইসলামী আরবি বিশ^বিদ্যলয়ের নীতি অনুযায়ী প্রিজাইডিং হবেন গভর্নিং বডির সভাপতি এবং তার স্বাক্ষরে যাবতীয় কাজ সম্পন্ন হবে। কিন্তু সাবেক সভাপতি মাসুদ রানার স্বাক্ষর জাল করে অধ্যক্ষ নিজেই নিজের মতো করে সদস্য নিয়োগ দেন। মাদ্রাসায় বেশ কয়েকটি পদে নিয়োগ হবে। নিয়োগগুলো সম্পন্ন করে মোটা অংকের অর্থ হাতিয়ে নিতে আত্মীয়কে সভাপতি করা হয়েছে। পুরো মাদ্রাসাটি অধ্যক্ষ মো. জাকারিয়া ও তাঁর বাবা ডা. মো. তৈয়বুর রহমানের নিয়ন্ত্রণে।

মাদ্রাসার সাবেক সভাপতি ও মাহমুদপুর ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মো. মাসুদ রানা বলেন, ‘অধ্যক্ষর নানা অনিয়ম ও দুর্নীতে ঐতিহ্যবাহী মাদ্রাসাটি ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। মাদ্রাসাটির পরীক্ষার ফলাফল খুবই খারাপ। এসব অনিয়ম-দুর্নীতি বন্ধ করে মাদ্রাসার শিক্ষার পরিবেশ ফিরিয়ে আনা হোক।’

এসব অভিযোগের বিষয় ‘অধ্যক্ষ মো. জাকারিয়ার সাথে কথা হলে তিনি সব অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ‘মাদ্রাসায় একটা নিয়োগ হওয়ার কথা ছিল। সেটি না হওয়ায় নিয়োগবঞ্চিত ও তাদের লোকজন আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ করছেন।’

এই বিভাগের আরও খবর