,

নিয়োগ বাণিজ্যের সুবিধার্থে নির্বাচনের নামে জালিয়াতি!

জেলা প্রতিনিধি, পটুয়াখালী: পটুয়াখালীর বাউফল উপজেলার খেজুরবাড়িয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. রেজাউল করিমের বিরুদ্ধে নিয়োগ বাণিজ্যের সুবিধার্থে কাগজে কলমে বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির নির্বাচন করার অভিযোগ উঠেছে।

শুধু তাই নয় এই নির্বাচনকে হালাল করার পাশাপাশি অভিযোগ উঠেছে এই ম্যানেজিং কমিটির যোগসাজসেই আবার তিনি নিয়োগ পেয়েছেন ওই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হিসেবে।

মোটা টাকার লেনদেনে বিতর্কিত এই নিয়োগে একজন দপ্তরী একজন পিওন কাম নৈশ প্রহরী এবং একজন আয়া নিয়োগ দেয়া হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন ওই বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সাবেক সদস্য মো. নিজাম উদ্দিন।

খেজুরবাড়িয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সাবেক সভাপতি আলতাফ হোসেন জানান, নিয়ম অনুযায়ী বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির নির্বাচনের তফসিলের বিষয়টি একজন দাতা সদস্য হিসেবে আমাকে জানানোর কথা। নির্বাচনে অংশ নেয়ার জন্য আমি বিদ্যালয়ের দাতা সদস্য হয়েছি। আমার বাড়ির কাছে বিদ্যালয়, কবে কখন নোটিশ হলো, কারা সেই নোটিশ জানলো আর আমরা এর কিছুই জানতে পারলাম না। উপর মহলকে ম্যানেজ করে গোপনে এই নির্বাচনের কাগজ তৈরী করা হয়েছে, নিয়োগ বানিজ্য করে টাকা হাতানোর জন্য।

বিদ্যালয়ের সাধারন শিক্ষার্থীদের কাছে নির্বাচন সম্পর্কে জানতে চাইলে কোনো শিক্ষার্থী এ বিষয়ে জানে না বলে জানিয়েছে। ম্যানেজিং কমিটির নির্বাচন এবং নিয়োগের বিষয়ে ওই বিদ্যালয়ের করনিক মো. মনিরুল ইসলামের কাছে মুঠোফোনে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি এর কিছু জানি না, আমাকে কিছু জিজ্ঞেস কইরেন না ভাই।

খেজুরবাড়িয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ম্যানিজিং কমিটির নির্বাচনে প্রিজাইডিং অফিসারের দায়িত্ব পালনকারী কর্মকর্তা উপজেলা একাডেমিক সুপারভাইজার মো. নুরনবীর বলেন, নির্বাচনী তফসিল প্রচার করার দায় দায়িত্ব পালন করেন সংশ্লিষ্ট বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক। ওই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আমাকে ক্লাসরুমে তফসিল পাঠের ভিডিও এবং নোটিশবোর্ডে তফসিল সাটানোর ভিডিও আমাকে দেখিয়েছেন। এরপর নির্বাচনে সম সংখ্যক প্রতিনিধি না থাকায় আমি নিয়মানুযায়ী বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ওই সদস্যদের নির্বাচিত ঘোষণা করি। এর এক সপ্তাহ পরে সভাপতি নির্বাচন করা হয়। নির্বাচন মানেই প্রতিদ্বন্দ্বিতার একটি বিষয় থাকে, এখানে সব সদস্যরা বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়ে যাচ্ছে বিষয়টি নিয়ে আপনার সন্দেহ তৈরি হয়নি, জানতে চাইলে এর জবাবে বলেন, কেউ আমার কাছে অভিযোগ করেন নি তাই আমি নিয়মমাফিক আমার কাজ করেছি।

এ বিষয়ে স্বাক্ষাৎ করে দাশপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও খেজুরবাড়িয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি এন এম জাহাঙ্গীর হোসেনের বক্তব্য জানতে চাইলে তিনি বলেন, এ বিষয়ে আমি কিছু জানি না, প্রধান শিক্ষক জানেন, আপনি তার সাথে যোগাযোগ করেন।

খেজুবাড়িয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক থেকে প্রধান শিক্ষক হওয়া রেজাউল করিম বলেন, যথাযথ নিয়মেই সব করা হয়েছে। নোটিশ বোর্ডে তফসিল সাটানো হয়েছে। শ্রেণিকক্ষে শিক্ষার্থীদের নোটিশ পাঠ করে শোনানো হয়েছে, সেখানে শ্রেনি শিক্ষকদের স্বাক্ষর আছে। নোটিশ বোর্ডে নির্বাচনের তফসিল সাটানোর ভিডিও আছে। এরপরেও যারা এসব নিয়ে অভিযোগ করেছে তারা দেশের শত্রু, সমাজের শত্রু, এই বিদ্যালয়ের শত্রু।

এসব স্বাভাবিক প্রক্রিয়ার ভিডিও তৈরি করতে হলো কেনো জানতে চাইলে বলেন, আমার এক আত্মীয়ের পরামর্শে ভবিষ্যতের সমস্যা এড়াতে ভিডিও তৈরি করেছি।

বাউফল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আল আমিন জানান, নিয়োগ কিংবা ম্যানেজিং কমিটির নির্বাচন এর কোথাও যদি কোনো অনিয়ম ঘটে থাকে তাহলে তদন্তপূর্বক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

বরিশাল শিক্ষাবোর্ডের স্কুল অফ ইন্সপেক্টর রফিকুল ইসলাম খাঁন বলেন, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সেখানে প্রিজাইডিং অফিসার নিয়োগ করে থাকেন। আমরাতো সেখানে যাই না। বৈধ কাগজ পত্রের আলোকে ম্যানেজিং কমিটি অনুমোদন দেয়া হয়, এখন যদি কোথাও জাল জালিয়াতি হয়ে থাকে সেক্ষেত্রে অভিযোগ পেলে তদন্ত করে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

এই বিভাগের আরও খবর