,

দুর্নীতির দানব প্রতিরোধে কী চিন্তায় শেখ হাসিনা

নিজস্ব প্রতিবেদক: দুর্নীতি, চাঁদাবাজি ও অপরাধের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থানে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকার। দুর্নীতির দানবদের বিরুদ্ধে দেশে চলমান অভিযান, দলে ইমেজ অক্ষুণ্ণ রাখার আপেক্ষিক বার্তা। খুদ প্রধানমত্রী শেখ হাসিনা এ অভিযানে সবুজ সংকেত দিয়েছেন। সম্প্রতি বালিশ-কাণ্ড ও পর্দা-কাণ্ড দেশে যে বিতর্কের জন্ম দিয়েছে, পিঠে দেয়াল ঠেকিয়েছে। দেশ এবং দলের জন্য শেখ হাসিনার এমন প্রতিরোধ তা নির্মূলের বার্তা বহন করে। অতি সম্প্রতি ক্ষমতাসীন দলের ছাত্র সংগঠন, ছাত্রলীগের শীর্ষ নেতৃত্বে দরবদল এরপর দলের সহযোগী সংগঠনের শীর্ষ নেতার অবৈধ কেসিনোতে অভিযান। তার ধারাবাহিকতায় দেশ জুড়ে টেন্ডারবাজি, দুর্নীতি ও সামাজিক অপরাধের বিরুদ্ধে চলমান অভিযানে দলের ভেতরে কিছু প্রশ্নের জন্ম হয়েছে। হঠাৎ কেন দল এবং সহযোগী সংগঠনের নেতাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে?

যে কারণ থাকতে পারে :
বর্তমান ক্ষমতাসীন দলের নেতৃত্বে টানা তৃতীয় দফায় সরকার চলছে। দীর্ঘ এ সময়ের মধ্যেও বিরোধী রাজনৈতিক কোনো শক্তি চ্যালেঞ্জ ছুড়তে পারেনি। তবে আওয়ামী লীগের রাজনৈতিতে নির্বাচন নিয়ে কিছু বিতর্ক হলেও দাতাদের সহায়তা ছাড়া পদ্মা সেতু নির্মাণসহ অনেক উন্নয়ন কর্মকান্ডের মাধ্যমে মানুষের সমর্থন অটুট রয়েছে। তবে উন্নয়নের গণতন্ত্রের শ্লোগান নিয়েও সরকারকে অনেক সমালোচনা সইতে হয়েছে।

এমন অবস্থায় কিছু নেতাকর্মীর কর্মকান্ডের জন্য দলের ভাবমূর্তি সংকটে পড়েছে। আওয়ামী লীগ এবং ছাত্রলীগ, যুবলীগসহ সহযোগী সংগঠনগুলোর কিছু নেতা অপরাধে জড়িয়ে পড়েছেন। যা মানুষের মাঝে চাপা ক্ষোভ তৈরি করেছে। যার কারণে আওয়ামী লীগের পিঠ দেয়ালে ঠেকে যাওয়ার মতো পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়। সম্প্রতি একটি হাসপাতালের পর্দা কেনা থেকে শুরু করে পরমাণু বিদ্যুৎ প্রকল্পের বালিশ কেনা—বিভিন্ন প্রকল্পের দুর্নীতির খবর ব্যাপক আলোচনা সৃষ্টি হয়। যাতে বেশ বিব্রতকর পরিস্থিতি পরে সরকার। দলের অস্তিত্ব বা সরকারকে রক্ষা করতে এমন অভিযান যথার্থ কারণ বহন করে।

দলে দেওয়া হয়েছিল সতর্ক বার্তা :  
ডিজিএফআইসহ বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদনের ভিত্তিতে দলে অপরাধীদের সতর্ক বার্তা দেওয়া হয়। দলের কিছু নেতা কর্মীর অপরাধে জড়ানোর বিষয়টি আশঙ্কার সৃষ্টি করে। এর লাগাম টানতে এমন অভিযান। আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও মন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাক সংবাদ মাধ্যমকে জানান, বিভিন্ন অপরাধে জড়িতদের অনেকবার সতর্ক করা হয়েছে। এতে পরিবর্তন না হওয়ায় কঠোর অবস্থান নিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।

যেভাবে এসেছে সিদ্ধান্ত : 
এ অভিযান নিয়ে দলের মাঠ পর্যায়ের নেতা কর্মীদের মাঝে তেমন ধারণা না থাকলেও ইঙ্গিত পেয়েছিলেন দলের নীতি নির্ধারকরা। বৈঠকে দলের সভানেত্রী হিসেবে অপরাধে জড়িতদের বিষয়ে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য তাঁর কঠোর অবস্থানের জানান। আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনগুলোর যে নেতারা অপরাধে জড়িয়েছেন, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার সিদ্ধান্ত নেন। পরে বিষয়টি দলের নীতিনির্ধারকদের জানান বলে বলে দলটির অনেকে বলেছেন।

এ বিষয়ে সংবাদ মাধ্যমকে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী বলেন, শেখ হাসিনা অভিযান বা ব্যবস্থাগুলো নেওয়া শুরু করার আগে দলের নীতিনির্ধারণী ফোরামে বিষয়টি তুলেছিলেন এবং তাতে সম্মতি নিয়েই এগিয়েছেন।

এ দিকে দীর্ঘ সময় ধরে টানা ক্ষমতায় আওয়ামী লীগ সরকার। আগামী বছর বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা শেখ মুজিবুর রহমানের শততম জন্মবার্ষিকী পালন হবে। এছাড়াও স্বাধীনতার ৫০ বছর পালনের বিষয়টিও সামনে আসছে। এমন অবস্থায় দলে ইতিবাচক ভাবমূর্তি অক্ষুণ্ণ রখার স্বার্থে এমন অভিযান স্বার্থক ভূমিকায় অসীন হবে।

এই বিভাগের আরও খবর