,

ঢাকার রাস্তা একজন নারীর জন্য কতটা নারীবান্ধব ?

ঢাকার রাস্তা একজন নারীর জন্য কতটা নারীবান্ধব?

বিডিনিউজ ১০ ডটকম ডেস্ক: বাংলাদেশে মাত্র কিছুদিন আগে বাসে গণ ধর্ষণের পর এক তরুণীকে হত্যা করে রাস্তায় ফেলে যাবার ঘটনা ঘটার পর মোহাম্মদপুরে রনি নামে এক যুবককে ধর্ষণের অপরাধে গণধোলাই দিয়ে দিগম্বর করেছেন কিছু মানুষ। রাজধানী ঢাকাসহ সবখানে রাস্তায় পথেঘাটে, বিশেষ করে সন্ধ্যার পর নারীর নিরাপত্তা নিয়ে নতুন করে প্রশ্ন উঠেছে।

সংবাদমাধ্যমে প্রায়ই ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় ধর্ষণসহ নারী নির্যাতনের নানা খবর পাওয়া যায়। ঢাকায় মেয়েরা যারা কাজ বা বিভিন্ন উদ্দেশ্যে ঘরের বাইরে বের হন তারা নিজেদেরকে কতটা নিরাপদ মনে করেন?

খুব বেশি দিনের কথা নয়, একশ বছরও হয়নি, এমনটাই ছিল দক্ষিণ আমেরিকার রাজ্যগুলো। বলা হতো ‘বুনো পশ্চিম’। এসব রাজ্যে আইন বলতে একজন শেরিফ আর তার সহকারী। ন্যায়বিচার যেখানে অনেকটাই অসহায়। এতে মানুষকে নিজের হাতে আইন তুলে নিতে হতো। একটু সন্দেহ হলেই, কোনো কিছুর ধার না ধেরে অভিযুক্তকে ঝুলিয়ে দেওয়া হতো অথবা গুলি করে হত্যা করা হতো। মূলত ‘আউট ল’ আর ‘লিঞ্চিং মবে’র কারণেই সে সময় পশ্চিমের ওই অঞ্চলগুলো আখ্যায়িত হয়েছিল ‘বুনো পশ্চিম’ নামে।

‘লিঞ্চিং মবে’র এমন বিচারকে বলা হয় ‘মব জাস্টিস’। মানুষ যখন ক্রমাগত অন্যায়ে আর বিচারহীনতায় অতিষ্ট হয়ে উঠে তখনই ‘মব জাস্টিসে’র নামে ‘লিঞ্চিং মবে’র প্রেক্ষাপট তৈরি হয়। বলা যায়, ‘মব জাস্টিস’ অসহিষ্ণু সমাজেরই প্রতিচ্ছবি। সম্প্রতি বেশ কিছু প্রতিচ্ছবি বা ঘটনায় আমাদের দেশেও তেমন প্রেক্ষাপট তৈরি হয়েছে কি-না, এমন সন্দেহ-সংশয় মনে জাগছে।

মোহাম্মদপুরে রনি নামে এক যুবককে ধর্ষণের অপরাধে গণধোলাই দিয়ে দিগম্বর করেছেন কিছু মানুষ। এ ঘটনায় দুটি দিক রয়েছে। প্রথমটা হলো, দেশের আইনশৃংখলা বিষয়ে। যে দেশে রাস্তা থেকে একটি মেয়েকে গাড়িতে তুলে নিয়ে প্রকাশ্য রাজপথে গাড়ির ভেতরেই ধর্ষণ করা সম্ভব হয়, সে দেশের আইন-কানুন স্বভাবতই প্রশ্নের সম্মুখীন হয়। দেশটা ‘আউট ল’দের দেশ হয়ে গেল কি-না, এমন প্রশ্ন উঠাও অস্বাভাবিক নয়। হয়তো এ প্রশ্নের গতানুগতিক উত্তর হতে পারে, ‘বিচ্ছিন্ন ঘটনা’। কিন্তু এমন ‘বিচ্ছিন্ন ঘটনা’ ঘটালেন কে- একজন রাজনৈতিক পরিচয়ে প্রভাবশালী, পয়সাওয়ালা এবং উপর মহলে যোগাযোগ রয়েছে এমন একজন মানুষ। অর্থাৎ রাজনৈতিক পরিচয় থাকলে, অর্থ ও লবিং থাকলে এমন ‘বিচ্ছিন্ন ঘটনা’ ঘটানো সম্ভব।

রনি’র মতন এমনটা যারা করেন, তারা ভেবেই করেন, তাদের কিছু হবে না। হতোও না যদি নাছোরবান্দা সেই বাইকার রণে ভঙ্গ দিতেন। সেই বাইকার রণে ভঙ্গ দেননি, বরং ঘটনাটি প্রতিরোধের চেষ্টা করেছেন।
অন্য দিকটি হলো, বিচারহীনতার আশঙ্কায় সৃষ্ট সামাজিক অসহিষ্ণুতাই ‘মব জাস্টিস’ তৈরির কারণ, এ কথাটা সত্যি। ঢাকার রাস্তা একজন তরুণী বা নারীর জন্য কতটা অনিরাপদ, তা এই ‘মব জাস্টিস’ই প্রমাণ করে দিয়েছে।যারা এমন ‘মবে’ সমর্থন দেন, তাদের যদি প্রশ্ন করা হয়, এই যে প্রতিদিন ধর্ষণের মতন ভয়ংকর অপরাধ ঘটছে, রাস্তাঘাটে মেয়েরা নিগৃহীত হচ্ছেন, তার প্রতিবাদের একদিন কি রাজপথে নেমে এসেছিলেন? বরং রাস্তায় যখন কেউ এর প্রতিবাদে চোঙ্গা ফুঁকেছেন, তাকে আপনি রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড আখ্যা দিয়েছেন। নিরাপদ দূরত্ব রেখে পেড়িয়েছেন সেই প্রতিবাদের জায়গাটিকে। কই আপনিতো আপনার জায়গা থেকে সেই প্রতিবাদের সাথে সুর মেলাননি, বলেননি, ‘এনিয়ে যদি আপনাদের প্রতিবাদ হয়, তাহলে আমরা সাথে আছি’।এক শ্রেণির মানুষকে দেখছি ‘মব জাস্টিসে’র বিরোধিতা করতে গিয়ে রনিকে জাস্টিফাই করার চেষ্টা করছেন। মেয়ে দুটিকে ‘শরীরজীবী’ আখ্যায়িত করে অপরাধকে ‘সহনীয় মাত্রা’ হিসেবে ব্যাখ্যা দিতে চাচ্ছেন। তাদের উদ্দেশ্যে বলি, একটি মুসলিম প্রধান দেশে মদ্যপ অবস্থায় রাস্তা থেকে মেয়ে তুলে সে যেই হোক, প্রকাশ্য রাস্তাতেই যৌনকর্মে লিপ্ত হওয়া গুরুতর সামাজিক অপরাধ এবং সেটা যদি ছেলে-মেয়ে উভয়ের সম্মতিতেও হয়।

উন্নত রাষ্ট্রগুলোতেও এমনটা মেনে নেওয়া হয় না। সুতরাং, যারা রনি নামের দুর্বৃত্তের এহেন কর্মকে নানাভাবে জাস্টিফাই করার চেষ্টা করছেন, তাদের বলি- আপনাদের কারণেই সমাজে অসহিষ্ণুতার প্রেক্ষাপট তৈরি হচ্ছে, মানুষ অসহিষ্ণু হয়ে ‘লিঞ্চিং মবে’ অংশ নিচ্ছে। আপনারাই রনিদের তৈরি করছেন, দানব বানাচ্ছেন। এবার ক্ষ্যান্ত দিন, জায়গা ছাড়ুন, না হলে ‘মব জাস্টিসে’র ‘লিঞ্চিং মব’ আপনাদেরও ঝুলিয়ে দেবে।

এই বিভাগের আরও খবর