,

ঢলে তলিয়েছে সিলেটের ৩ উপজেলা

সিলেট ব্যুরো: উজান থেকে নেমে আসা ঢলে প্লাবিত হয়েছে সিলেটের সীমান্তবর্তী গোয়াইনঘাট, জৈন্তাপুর ও কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার নিম্নাঞ্চল। তলিয়ে গেছে অন্তত এক হাজার হেক্টর জমির ফসল, ডুবে গেছে রাস্তাঘাট। অনেকের বসতঘরেও পানি ঢুকে পড়েছে।

স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা জানান, রোববার রাত থেকেই ভারতের মেঘালয়ে বৃষ্টি হচ্ছে। সকাল থেকে ঢল নামতে শুরু করে। দুপুর নাগাদ তলিয়ে গেছে বিস্তীর্ণ অঞ্চল। স্রোতে ভেঙে গেছে নদীরক্ষা বাঁধ। এতে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে গোয়াইনঘাট উপজেলা।

সীমান্তের ওপারে বৃষ্টি অব্যাহত থাকলে এই পরিস্থিতির আরও অবনতি হবে বলে আশঙ্কা সংশ্লিষ্টদের।

সোমবার দুপুরের দিকে গোয়ানঘাট উপজেলার সীমান্তবর্তী রুস্তমপুর, পূর্ব জাফলং, পশ্চিম জাফলং, মধ্য জাফলং, গোয়াইনঘাট সদর ও পূর্ব আলীরগাঁও এবং পশ্চিম আলীরগাঁও ইউনয়নের নিম্নাঞ্চল তলিয়েছে। জাফলং বাজার, রাধানগর বাজার, লন্ডনি বাজার, বাংলাবাজার, নতুন বাজারসহ উপজেলার কয়েকটি হাটবাজার, রাস্তা এবং কিছু ঘরবাড়িতে পানি ঢুকেছে।

ঢলের পানিতে তলিয়েছে জাফলং-রাধানগর-গোয়াইনঘাট সড়কের জাফলং চা বাগান এলাকা। এ কারণে উপজেলা সদরের সঙ্গে পর্যটনকেন্দ্র জাফলংয়ের যান চলাচল বন্ধ রয়েছে।

ডউকি নদীর প্রবল স্রোতে ভেঙে গেছে উপজেলার পূর্ব জাফলং ইউনিয়নের আসামপাড়া এলাকার পানি উন্নয়ন বোর্ডের নদীর তীররক্ষা বাঁধ। তলিয়ে গেছে ক্ষেতের বোরো ধান।

রাধানগর এলাকার কৃষক আউয়াল মিয়া বলেন, ‘ঢলে আমাদের এলাকারই প্রায় ২০০ হেক্টর জমি তলিয়ে গেছে। ঢলের যে স্রোত ছিল তাতে উপজেলার বেশির ভাগ জমিই তলিয়ে যাওয়ার কথা।’

তবে গোয়াইনঘাট উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা রায়হান পারভেজ জানিয়েছেন, এ পর্যন্ত ৫০০-৬০০ হেক্টর বোরো ধান তলিয়ে যাওয়ার খবর পেয়েছি। দু-এক দিনের মধ্যে বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হলে ফসলের তেমন একটা ক্ষয়ক্ষতি হবে না।

গোয়াইনঘাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) তাহমিলুর রহমান বলেন, ‘ভারী বর্ষণ ও ঢলের কারণে উপজেলার নিম্নাঞ্চলগুলো প্লাবিত হয়ে গেছে। ফসলি জমির পাশাপাশি বেশ কিছু রাস্তাঘাট তলিয়ে যাওয়ার খবর পেয়েছি। ইতোমধ্যে আমরা বন্যাকবলিত কয়েকটি এলাকা পরিদর্শন করেছি। সব কটি ইউনিয়নের সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রক্ষার চেষ্টা করছি।’

তিনি জানান, বন্যায় ক্ষয়ক্ষতির বিষয়টি তুলে ধরে প্রয়োজনীয় সহায়তার জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়েছে।

কোম্পানীগঞ্জ উপজেলারও বিভিন্ন এলাকার জমির ফসল ঢলের পানিতে তলিয়েছে। সোমবার বিকেল পর্যন্ত উপজেলার ইসলামপুর পূর্ব, তেলিখাল, ইছাকলস ও দক্ষিণ রনিখাই ইউনিয়নের নিম্নাঞ্চল ডুবেছে।

স্থানীয় কৃষকদের দাবি, এ চার ইউনিয়নের প্রায় ৫০০ হেক্টর জমির ধান তলিয়েছে।

ইসলামপুর পূর্ব ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আলমগীর আলম জানান, চানপুর গ্রামে বাঁধ ভেঙে রংপুর, শিমুলতলা নোয়াগাঁও, মোস্তফানগর, ঢালারপাড়সহ আশপাশের এলাকার রাস্তাঘাট এখন পানির নিচে। ঘরবাড়িতেও পানি ঢুকে পড়েছে। এসব এলাকার আধাপাকা ও কাঁচা ধান তলিয়ে গেছে।

কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, নিম্নাঞ্চলের ধান পানিতে তলিয়েছে, তবে তার পরিমাণ কী তা এখনও নিশ্চিত হওয়া যায়নি।

কোম্পানীগঞ্জের ইউএনও লুসিকান্ত হাজং বলেন, ‘এখন পর্যন্ত হাওরে পানি প্রবেশ করেনি। তবে কিছু নিম্নাঞ্চল তলিয়ে গেছে। আগামীকাল থেকে পানি কমতে পারে।’

সোমবার দুপুরের পর থেকে পানি ঢুকতে শুরু করেছে জৈন্তাপুর উপজেলার নিম্নাঞ্চলেও।

সেখানকার ইউএনও আল বশিরুল ইসলাম বলেন, ‘কাল পর্যন্ত ভালো ছিল। আজ সকাল থেকে নদীর পানি বাড়তে শুরু করেছে। দুপুর থেকে নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। তবে কোন এলাকায় পানি ঢুকেছে বা কী পরিমাণ ক্ষতি হয়েছে তার খবর এখনও পাইনি।’

সিলেট জেলায় এবার ৮৪ হাজার হেক্টর জমিতে বোরো ধানের চাষ করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন জেলা কৃষি কর্মকর্তা মোহাম্মদ কাজী মজিবুর রহমান।

তিনি বলেন, ‘ঢলে গোয়াইনঘাট, কোম্পানীগঞ্জ ও জৈন্তাপুর উপজেলায় কিছু ধানের ক্ষতি হয়েছে। তবে তা খুব বেশি নয়, ২০০ হেক্টরের মতো ডুবেছে বলে শুনেছি। তবে পুরো হিসাব এখনও পাইনি। পাহাড়ে বৃষ্টি ও ঢল অব্যাহত থাকলে ক্ষতির পরিমাণ বাড়বে।’

এই বিভাগের আরও খবর