,

‘ছেলেকে বাঁচান, দয়া করুন আমার ওপর’

মায়ের কোলে কিডনি জটিলতায় আক্রান্ত শিশু জুনায়েদ।

জেলা প্রতিনিধি, পাবনা: আড়াই বছরের জুনাইদ মোল্লা। বন্ধ হয়ে গেছে শিশুটির দুই চোখ। ফুলে গেছে পুরো শরীর। কয়েকমাস আগেও সমবয়সীদের সাথে খুনসুটিতে মেতে থাকলেও কিডনির জটিল রোগে আক্রান্ত হয়ে শিশুটির মুখ থেকে হারিয়ে গেছে হাসি। ভোর হলেই শিশটির কান্নার আওয়াজে বাবা-মাসহ প্রতিবেশীদের ঘুম ভাঙে।এখন সারাদিন মায়ের কোলে থেকে কান্নাকাটি করেই দিনপার হয় ছোট্ট জুনাইদের।

টাকার অভাবে ছেলের চিকিৎসা করাতে না পেরে ভ্যানচালক বাবা আবদুস সালাম বাড়ি ফিরিয়ে এনেছেন জুনাইদকে। যন্ত্রণায় কাতর জুনাইদের হচ্ছে শ্বাসকষ্ট। হচ্ছে জ্বর-বমি। টাকার অভাবে চিকিৎসাহীন জুনাইদ এখন মত্যু পথযাত্রী!

ছেলের এমন কষ্ট নীরবে চেয়ে চেয়ে দেখছেন মা নিলুফা ইয়াসমিন। কাঁদতে কাঁদতে তার চোখের পানি শুকিয়ে গেছে।

ছেলের অসুস্থতায় পাবনার চাটমোহর উপজেলার হরিপুর ইউনিয়নের ধূলাউড়ি গ্রামের এই দরিদ্র পরিবারে এখন পুরোপুরি নিস্তব্ধতা।

মঙ্গলবার সকালে সরেজমিন গিয়ে জানা যায়, জুনাইদের বাবা আবদুস সালাম একজন ভ্যানচালক। মা নিলুফা ইয়াসমিন গৃহিণী। তাদের দুই ছেলে সন্তানের মধ্যে জুনাইদ ছোট। বড় ছেলে জুবাইর প্রথম শ্রেনিতে পড়ে। ভ্যান চালিয়ে যে টাকা উপার্জন হয় সেই টাকায় কোনোমতো টেনেটুনে চলে তাদের সংসার। ছনের ছাপড়া ঘরে বসবাস দরিদ্র এই পরিবারটির। জমিজমা বলতে কিছুই নেই তাদের।

আট মাস আগে হঠাৎ করেই জুনাইদের চোখ, মুখসহ পুরো শরীর ফুলে যায়। থেমে থেমে শুরু হয় বমি। বাড়তে থাকে শরীরের তাপমাত্রা। এরপর ঈশ্বরদীতে একটি ক্লিনিকে নিয়ে পরীক্ষা করালে চিকিৎসকরা জানান, জুনাইদকে কিডনির জটিল রোগে আক্রান্ত। তিনি ব্যবস্থাপত্র লিখে দিয়ে রাজশাহী মেডিকেল হাসপাতালে ভর্তি হতে পরামর্শ দেন।

এরপর এনজিও থেকে ঋণ নিয়ে এবং স্থানীয়দের কাছে ধারদেনা করে জুনাইদকে পুনরায় রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করে তার পরিবার।

সেখানকার চিকিৎসক ডা. শামীম পারভেজ দেখার পর বলেন, ‘জুনাইদকে প্রতিমাসে রাজশাহী মেডিকেলে ভর্তি করে চিকিৎসা দিতে হবে। এভাবে দীর্ঘ ১৫ বছর চিকিৎসা দিতে হবে। এর জন্য অনেক টাকার প্রয়োজন। চিকিৎসা করালে সুস্থ হবে জুনাইদ। তবে চিকিৎসা না করালে জুনাইদকে বাঁচানো সম্ভব নয়।’ চিকিৎসকের এমন কথা শুনে ভেঙ্গে পড়েন জুনাইদের বাবা-মা। ছেলেকে ফিরিয়ে আনেন বাড়িতে।

ইতোমধ্যে জুনাইদের চিকিৎসা বাবদ খরচ হয়ে গেছে লাখ টাকার ওপরে। এখন প্রতিমাসে রাজশাহী যাওয়া-আসা এবং চিকিৎসায় খরচ হয় প্রায় ১২ হাজার টাকা। সপ্তাহে ওষুধ লাগে প্রায় ১ হাজার টাকার মতো। ছেলের চিকিৎসা করাতে গিয়ে ইতমধ্যে ঋণগ্রস্থ হয়ে পড়েছেন বাবা আবদুস সালাম।

সমাজের বিত্তবানদের কাছে আকুতি জানিয়ে কান্নাজড়িত কন্ঠে মা নিলুফা ইয়াসমিন যুগান্তরকে বলেন, ‘ছেলেকে রাজশাহী নিয়ে যাবো যে আমাদের কাছ টাকা নেই। সন্তানের যন্ত্রণা-কষ্ট একজন মা ছাড়া কেউ বোঝে না। ছেলে (জুনাইদ) কষ্ট পাচ্ছে আর আমি চেয়ে চেয়ে সেটা দেখছি। একজন মায়ের কাছে এর চেয়ে কষ্টের আর কিছুই নেই! আমার ছেলেকে বাঁচান। দয়া করুন আমার মতো এই অসহায় মায়ের ওপর।’

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে হরিপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মকবুল হোসেন জানান, পরিবারটি আসলেই খুব অসহায়। শুনেছি জুনাইদ নামের ওই শিশুটির চিকিৎসার জন্য অনেক টাকার প্রয়োজন। সমাজের বিত্তবানরা এগিয়ে এলে সুস্থ হবে শিশুটি এমন আশা করি।

জুনাইদের চিকিৎসা ব্যাপারে জানতে চাইলে মা নিলুফা ইয়াসমিনের এই নাম্বারে যোগাযোগ করা যেতে পারে- ০১৩০৭-৯১৯১০৮

এই বিভাগের আরও খবর