,

চলনবিলের নৌকা কারিগররা ব্যস্ত

জেলা প্রতিনিধি, পাবনা: বৃহত্তর পাবনা জেলার চলনবিল পারের নৌকার কারিগররা বর্ষার মৌসুমকে কেন্দ্র করে নৌকা তৈরির কাজে ব্যস্ত সময় পার করছেন। ইতিমধ্যে শুরু হয়েছে হালকা-মাঝারি-ভারি বৃষ্টি। বর্ষার প্রবল বর্ষণে প্রায় প্রতি বছরই চলনবিলে বৃষ্টিতে নিম্নাঞ্চল বন্যায় প্লাবিত হয়।

বর্ষার আগমণে চলনবিল এলাকার নৌকার মাঝি, জেলে ও চরের বাসিন্দারা শুরু করে আগাম প্রস্তুতি। এ প্রস্তুতির অংশ হিসেবে চলনবিলের তীরবর্তী এলাকাগুলোতে চলছে নৌকা তৈরির ধুম। পুরোদমে চলছে পুরানো নৌকা মেরামতের কাজও। প্রতিবছর বর্ষা আসার আগেই চলনবিলের র্তীরবর্তী গ্রামগুলোতে শুরু হয় এ নৌকা তৈরির কাজ। এ সময়টাতে নৌকার কারিগরদের ব্যস্ততা বেড়ে যায়।

সরেজমিনে দেখা যায়, চলনবিলের তীরবর্তী হাটিকুমরুল হাইওয়ে রোডের পার্শে মান্নাননগর, হামকুড়িয়া, নওগাঁ, বাঘলবাড়ি চার মাথা, তাড়াশ, চাটমোহরসহ বিভিন্ন চর এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, নতুন নৌকা তৈরির কাজ চলছে বেশ জোরেশোরে। কেউ বা পুরাতন নৌকাকেই আরও ভালো করে মেরামত করে নিচ্ছে।

চলনবিল তীরবর্তী নৌকার মাঝি, জেলে ও কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, শুষ্ক মৌসুমে বৃহত্তর চলনবিলের পনি কমে যায়, তাই নৌকার ব্যবহার কম হয়। বর্ষা মৌসুমে চলনবিল এলাকা হয়ে উঠে যৌবনে টইটম্বুর। তখন চলনবিল র্তীরবর্তী নৌকার মাঝি, জেলে, কৃষক ও বাসিন্দাদের প্রধান ভরসা হয়ে ওঠে নৌকা। তাই বর্ষা মৌসুম আসলেই এখানে বেড়ে যায় নৌকার কদর।

প্রতিবছরই পুরনো নৌকা মেরামত করতে হয়। অন্যথায় বর্ষা মৌসুমে চরম ভোগান্তি পোহাতে হয়। শুষ্ক মৌসুমের মেরামতকৃত নৌকা দিয়ে পুরো বর্ষা মৌসুমে নদী পারাপার, অফিস, আদালত, সরকারি চাকরিজীবী, স্কুল, কলেজগামী ছাত্র-ছাত্রী, সবজি ও মালামাল পরিবহণ করতে হয়।

এছাড়া স্থানীয় জেলেরা নৌকা নিয়ে বর্ষা মৌসুমে নদীর গভীরে গিয়ে মাছ ধরে। বর্ষা মৌসুমে আবার অনেকে মাসিক ভিত্তিতে নৌকা ভাড়াও দেয়।

হামকুড়িয়া বাজারের ঘাটের মাঝি ফরজ আলী আনন্দবাজারকে বলেন, শুকনো মৌসুমে চলনবিলের পানি কম থাকে। এ সময় পুরোনো নৌকাগুলো মেরামত করে নিতে হয়। ইতিমধ্যে আমার একটি বড় নৌকাসহ ৪টি নৌকা মেরামত করে বর্ষার জন্য প্রস্তুত করেছি।

তিনি আরো বলেন, ৪ টন ধারণ ক্ষমতার নৌকা মেরামতে বর্তমান সময়ে ১০ থেকে ১৫ হাজার টাকা খরচ হয়। একই নৌকা নতুন করে বানাতে ৬০ হাজার টাকা পর্যন্ত খরচ হয়। ৯ টন ধারণ ক্ষমতাসম্পন্ন নৌকা তৈরিতে প্রায় লক্ষাধিক টাকা খরচ হয়। এসময় নৌকা কারিগরদের দামও অনেক বেড়ে যায়।

হাত হিসেবে নৌকা মেরামতের মজুরি নির্ধারণ হয়। প্রতি হাত নৌকা  মেরামতে ১০০ টাকা ও তারও বেশি দিতে হয়। এভাবে প্রতিটি বড় নৌকা মেরামতে ২০ থেকে ২৫ হাজার টাকা কারিগরদের মজুরি দিতে হয়। এমনকি চলতি মৌসুমে নৌকা মেরামত করে যাওয়ার সময় কারিগরদের আগামী মৌসুমের জন্য অগ্রিম টাকাও প্রদান করতে হয়।

নৌকা কারিগর আলামিন বলেন, নৌকা তৈরি ও মেরামত আমার পূর্ব পুরুষের পেশা। গত ৪০ বছরের বেশি সময় ধরে এ  পেশা ধরে রেখেছি। প্রতি মৌসুমে ছোট-বড় প্রকারভেদে ১০০টি নৌকা তৈরি করে থাকি। পুরাতন নৌকাও মেরামত করি। এখন চলছে নৌকা মেরামতের শেষ সময়। ছোট নৌকা তৈরিতে দুই থেকে চার এবং বড় নৌকা তৈরিতে ১০ থেকে ১৫ দিন সময় লাগে।

নতুন নৌকা তৈরিতে বিশেষ করে আকাশমনি, মেহগনি, কড়াই, ছামালিশ গাছ বেশি ব্যবহার হয়। ছোট নৌকা তৈরিতে ৮-১০ হাজার এবং বড় নৌকা তৈরিতে ১৫-২৫ হাজার টাকা এবং পুরোনো নৌকা মেরামতে নৌকার আকার অনুযায়ী ৭-১২ হাজার টাকা পর্যন্ত মজুরি পাই।

বর্ষা মৌসুমে এসব চরাঞ্চলের বাসিন্দাদের একমাত্র ভরসা নৌকা। তাই এসময়ে নৌকা তৈরী ও মেরামতে ব্যস্ত সময় পার করছে তারা। বিলের এসব মানুষ শুকনো মৌসুমে চলনবিলে মাছ ধরে এবং কেউ কৃষিশ্রমিক হিসেবে জীবিকা নির্বাহ করেন। দুর্যোগকালীন সময়ে এসব পরিবারকে সরকারি সহায়তা প্রদান করা হয়ে থাকে।

এই বিভাগের আরও খবর