জেলা প্রতিনিধি, টাঙ্গাইল: টাঙ্গাইলের মির্জাপুরের এক কলেজছাত্রীকে বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে ধর্ষণের অভিযোগ উঠেছে বাসাইলের সাবেক উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. মনজুর হোসেনের বিরুদ্ধে।
এ ঘটনায় ওই কলেজছাত্রী সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ গত ৩ ফেব্রুয়ারি বরাবর লিখিত অভিযোগ দেন।
গতকাল বৃহস্পতিবার (৭ এপ্রিল) টাঙ্গাইলের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব ) সোহানা নাসরিনের অফিস কক্ষে ডেকে ওই কলেজছাত্রীর কাছে ঘটনার বিস্তারিত তথ্য নেওয়া হয়।
অভিযুক্ত মো. মনজুর হোসেন বর্তমানে কিশোরগঞ্জের করিমগঞ্জে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা হিসেবে কর্মরত আছেন।
লিখিত অভিযোগে জানা যায়, ২০২১ সালে তৎকালীন বাসাইল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. মনজুর হোসেনের সঙ্গে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে পরিচয় হয় ওই কলেজছাত্রীর। একপর্যায়ে তাদের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। প্রথমে ইউএনও সরকারি বাসভবনে নিয়ে ওই কলেজছাত্রীর সঙ্গে শারীরিক সম্পর্ক স্থাপন করেন। এরপর ওই কলেজছাত্রীর অন্যত্র বিয়ে ঠিক হলে মনজুর সেই বিয়ে বন্ধ করে তাকে বাড়ি থেকে চলে আসতে বলেন। এরপর ওই ছাত্রীকে নিয়ে ইউএনও টাঙ্গাইল কুমুদিনী সরকারি কলেজ সংলগ্ন পাওয়ার হাউস এলাকায় পরিচয় গোপন করে স্বামী-স্ত্রী পরিচয় দিয়ে সেখানে একটি বাসা ভাড়া নিয়ে বসবাস শুরু করেন।
সেখানে তারা দুই মাস সংসার করেন। পরে ওই ছাত্রী বিয়ে করার জন্য চাপ প্রয়োগ করেন। ইউএনও মনজুর হোসেন ভারতে গিয়ে তাকে বিয়ে করবে বলে জানান। এরপর জোবায়েত নামে এক ব্যক্তির মাধ্যমে ওই ছাত্রীর ভারতে যাওয়ার জন্য মেডিকেল ভিসা করানো হয়। এরপর গত ২৪ সেপ্টেম্বর আনুমানিক রাত ১০টার দিকে বাসাইলের সহকারী কমিশনারের (ভূমি ) সরকারি গাড়িতে জোবায়েত হোসেন ও চালক বুলবুল হোসেনসহ দুইজন আনসার সদস্য মিলে বেনাপোল গিয়ে সেখানকার বর্ডার পার হয়ে কলকাতা এয়ারপোর্ট হয়ে হায়দরাবাদ বিমানবন্দরে নামেন।
বিমানবন্দরের কাছে একটা বাসা ভাড়া নিয়ে সেখানে দুইজন বসবাস করে চিকিৎসা নিতে থাকেন। একপর্যায়ে ওই ছাত্রী ইউএনওর মোবাইলের মাধ্যমে বিয়ে হওয়া ও তার ঘরে সন্তান থাকার বিষয়টি জানতে পারেন। পরে বাংলাদেশে আসার পর জোবায়েত ওই ছাত্রীর মোবাইল জোরপূর্বক নিয়ে অন্তরঙ্গ ভিডিও ও চ্যাটিং মেসেজ ডিলিট করে দেন। ইউএনও ঘটনাগুলো কাউকে না বলতে ওই ছাত্রীকে অনুরোধ করেন, অন্যথায় তাকে মেরে ফেলার হুমকি দেওয়া হয়। এরপরও পরবর্তীতে ওই ছাত্রীর সঙ্গে ঢাকার ধানমন্ডির রবীন্দ্র সরোবরে দেখা করে স্বামী-স্ত্রী হিসেবে সংসার করার কথা বলেন ইউএনও।
এদিকে প্রতারণা করে ধর্ষণ এবং স্ত্রীর মর্যাদা না দেওয়ায় ইউএনও মনজুর হোসেনের শাস্তি চেয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় বরাবর লিখিত অভিযোগ করেন ওই কলেজছাত্রী।
ওই কলেজছাত্রী বলেন, ইউএনও মনজুর হোসেনের সঙ্গে ফেসবুকের মাধ্যমে পরিচয় হয়। পরে তিনি বিয়ের প্রলোভনে একাধিকবার শারীরিক সম্পর্ক করেন। তিনি শুধু আমাকে ব্যবহারই করেছেন, সামাজিকভাবে স্ত্রীর মর্যাদা দেননি। বিষয়টি নিয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে লিখিত অভিযোগ দিয়েছি।
বাসাইল উপজেলা চেয়ারম্যান কাজী অলিদ ইসলাম বলেন, সাবেক ইউএনও মনজুর হোসেন মোবাইলে ওই মেয়েটির বিষয়ে জানান। মেয়েটি নাকি তার বিরুদ্ধে জনপ্রশাসনে মন্ত্রণালয়ে অভিযোগ দিয়েছে। পরে মেয়েটির সঙ্গে একজন চেয়ারম্যানের মাধ্যমে কথা বলি। তখন মেয়েটি বিষয়টি আইনগতভাবে লড়ছেন বলে জানায়।
অভিযোগ অস্বীকার করে কিশোরগঞ্জের করিমগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মনজুর হোসেন বলেন, অভিযোগটি সম্পন্ন ভিত্তিহীন। এ ধরনের কোনো ঘটনা ঘটেনি।
টাঙ্গাইলের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব ) সোহানা নাসরিন জানান, ওই ইউএনওর বিষয়টি নিয়ে তদন্ত চলছে। তদন্ত শেষে আগামী সাত কর্মদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দেওয়া হবে।