,

১০ মামলার চার্জশিটে ছয় সাংবাদিকের নাম

ছাগলনাইয়া (ফেনী) প্রতিনিধি: মাদ্রাসাছাত্রী নুসরাত জাহান রাফির হত্যারহস্য উদঘাটন ও সংশ্লিষ্টদের অবহেলা তুলে ধরতে সক্রিয় ভূমিকা পালন করায় সাংবাদিকদের ওপর ক্ষুব্ধ ফেনীর সাবেক পুলিশ সুপার জাহাঙ্গীর।

সাংবাদিকদের ওপর অনৈতিকভাবে ‘খেদ’ মিটিয়েছেন তিনি। মীমাংসিত মামলায় নতুন করে চার্জশিট দেয়াসহ ১০টি মামলায় তিনি সাংবাদিকদের ফাঁসিয়ে দিয়েছেন।

বৃহস্পতিবার প্রথম সাংবাদিকরা এ তথ্য জানতে পারেন। এরপর একে একে সব বেরিয়ে আসে। এ নিয়ে সাংবাদিকরা ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।

জানা গেছে, মামলার এজাহারে নাম না থাকা সত্ত্বেও চার্জশিটে সাংবাদিকদের নাম ঢোকাতে সংশ্লিষ্ট থানার ওসিদের এসিআর আটকে রাখেন এসপি জাহাঙ্গীর।

এসব মামলার চার্জশিটে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীর নাম বাদ দিয়ে সুকৌশলে সাংবাদিকদের নাম ঢোকাতে ওসিদের বাধ্য করেন জাহাঙ্গীর।

রাফি হত্যার পর এসপি জাহাঙ্গীরের দায়িত্বে অবহেলার বিষয়টি সাংবাদিকরা গণমাধ্যমে তুলে ধরায় তাকে ফেনী থেকে প্রত্যাহার করা হয়। এতে ক্ষেপে যান তিনি। তবে ফেনী ছেড়ে যাওয়ার সময় তিনি ‘জেদ’ মিটিয়ে গেছেন।

অধীনস্থ বিভিন্ন থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের (ওসি) ডেকে তিনি কয়েকজন সাংবাদিককে মামলায় ফাঁসিয়ে দিয়েছেন। এমনকি প্রায় মীমাংসার পথে থাকা মামলার চার্জশিটেও সাংবাদিকদের নাম ঢুকিয়ে দিতে তিনি বাধ্য করেছেন।

২০১৬ সালের ১৭ মার্চ যুগান্তরের ছাগলনাইয়া প্রতিনিধি নুরুজ্জামান সুমন ও ছাগলনাইয়াডটকমের সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির লিটনসহ তিনজনের নামে এক মাদ্রাসা শিক্ষক তথ্যপ্রযুক্তি আইনে মামলা করেন।

ওই বছরের ৮ জুলাই মামলার বাদী সাংবাদিকদের সঙ্গে লিখিতভাবে মীমাংসা করে ফেলেন। আপসনামা থানা ও আদালতে জমা দেয়া হয়েছে। কিন্তু রাফি হত্যার পর এসপি জাহাঙ্গীরের ভূমিকা নিয়ে বারবার সংবাদ করায় তিনি ক্ষুব্ধ হন।

সাড়ে তিন বছর পর ছাগলনাইয়া থানার ইন্সপেক্টর সুদীপ রায় আবার আইসিটি মামলার তদন্ত শুরু করেন। হঠাৎ করে কেন এ মামলার তদন্ত আবার করছেন- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান, ‘এসপি স্যার নির্দেশ দিয়েছেন দ্রুত চার্জশিট জমা দিতে।’ বাদীর কোনো মতামত না নিয়ে সম্পূর্ণ ডাহা মিথ্যা তথ্য দিয়ে এ বছরের ২৭ মে চার্জশিট দেন সুদীপ রায়। আরও চার সাংবাদিককে মিথ্যা মামলায় জড়ানো হয়েছে।

ফেনী মডেল থানায় তিনটি, সোনাগাজী মডেল থানায় দুইটি, দাগনভূঞা থানায় দুইটি এবং ছাগলনাইয়া থানায় দুইটি মামলার চার্জশিটে সাংবাদিকদের নাম ঢোকানো হয়েছে। এসব চার্জশিট আদালতে জমাও দেয়া হয়েছে।

চার্জশিটে যুগান্তরের সাংবাদিক ছাড়াও দৈনিক ফেনীর সময় ও সাপ্তাহিক আলোকিত ফেনীর সম্পাদক মোহাম্মদ শাহাদাত হোসেন, দৈনিক অধিকার প্রতিনিধি ও অনলাইন পোর্টাল ফেনী রিপোর্টের সম্পাদক এসএম ইউসুফ আলী, বাংলানিউজটোয়েন্টিফোরডটকমের স্টাফ করেসপন্ডেন্ট সোলায়মান হাজারী ডালিম এবং দৈনিক সময়ের আলো প্রতিনিধি ও দৈনিক স্টারলাইনের স্টাফ রিপোর্টার মাঈন উদ্দিন পাটোয়ারীর নাম রয়েছে।

তদন্ত সূত্র জানায়, মামলার এজাহারে সাংবাদিকদের কারও নাম না থাকলেও বিস্ময়করভাবে চার্জশিটে নাম ঢোকাতে ওসিদের বাধ্য করেছেন এসপি জাহাঙ্গীর।

সংশ্লিষ্টরা জানান, এসব সাংবাদিকের নামে ফেনীর কোনো থানায় আগে একটি সাধারণ ডায়েরিও (জিডি) ছিল না। বিতর্কিত এসপি জাহাঙ্গীর সরকারের রোষানলে পড়ে তারা প্রায় ১০টি মামলার চার্জশিটভুক্ত আসামি হয়ে গেছেন। এ বিষয়ে ফেনী প্রেস ক্লাবের সভাপতি আসাদুজ্জামান দারা বলেন, সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে এ ধরনের উদ্দেশ্যমূলক চার্জশিট দাখিল দুঃখজনক। পুলিশ-সাংবাদিক পরস্পরের শত্রু নয়।

কিন্তু এ ধরনের ঘটনা পুলিশ ও সাংবাদিকদের মধ্যে বৈরিতার সৃষ্টি করবে। পেশাদার সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে পুলিশের এমন বিরূপ আচরণ কাম্য নয়।

ফেনী প্রেস ক্লাবের সাবেক সভাপতি ও প্রবীণ সাংবাদিক নুরুল করিম মজুমদার বলেন, এ ধরনের ঘটনা মত প্রকাশের স্বাধীনতা খর্ব করে। এ ঘটনায় তীব্র নিন্দা জানাই।

ফেনী রিপোর্টার্স ইউনিটির সভাপতি আরিফুল আমিন রিজভী বলেন, সাংবাদিকদের মামলায় জড়িয়ে মত প্রকাশের স্বাধীনতাকে হরণ করার চেষ্টা করা হচ্ছে। এ ধরনের ঘটনা খুবই নিন্দনীয়। আমরা এ ঘটনায় তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছি।

সাংবাদিক সংগঠনের নেতারা ইতিমধ্যে নবাগত পুলিশ সুপার (এসপি) খোন্দকার নুরুন্নবীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করে বিষয়টি অবহিত করেছেন। এসপি সাংবাদিকদের আশ্বস্ত করেছেন নতুন করে আর কোনো মামলায় সাংবাদিকদের জড়ানো হবে না। তবে আগে জমা দেয়া চার্জশিট নিয়ে তার কিছু করার নেই বলেও জানান তিনি।

এই বিভাগের আরও খবর