রাজবাড়ী প্রতিনিধি: পদ্মা বিধৌত জেলা রাজবাড়ী। এ জেলার ৮৫ কিলোমিটার অংশে রয়েছে প্রমত্তা পদ্মা। ২০০৮ থেকে ২০১২ সালের মধ্যে প্রায় ৪৭ কোটি টাকা ব্যয়ে রাজবাড়ী শহর রক্ষা বাঁধের আড়াই কিলোমিটার (ফেইজ-১) তীর প্রতিরক্ষা বাঁধের স্থায়ী কাজ হয়। কিন্তু স্থায়ী কাজের মাত্র ছয় বছর যেতে না যেতেই এবারের বর্ষা মৌসুমে পৃথক পৃথক ভাবে আড়াই কিলোমিটারের প্রায় ১ কিলোমিটার অংশ গর্ভে বিলিন হয়ে গেছে। আর ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে আরও দেড় কিলোমিটার অংশ। যা রক্ষা করতে ছয় কোটি টাকা ব্যয় করে বালুর বস্তা ফেলে ডাম্পিং হলেও শঙ্কা কাটছে না।
২০০৮-০৯ অর্থ বছরের পানি উন্নয়ন বোর্ড রাজবাড়ী শহর রক্ষাকারী মূল বাঁধের আড়াই কিলোমিটার নদীর (ফেইজ-১) তীর প্রতিরক্ষা বাঁধের স্থায়ী ভাবে নির্মাণ কাজ করে। কিন্তু এবারের বর্ষা মৌসুমে ওই আড়াই কিলোমিটারের ৮টি স্থানের প্রায় ১ কিলোমিটার অংশের স্লোপিং ও সিসি ব্লক নদী গর্ভে চলে গেছে। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে নদী পারের প্রায় ৩০ থেকে ৪০টি পরিবার। প্রায় দেড় লক্ষাধিক সিসি ব্লক নদীতে চলে গেছে। প্রতিরক্ষা বাঁধের ভাঙন কবলিত স্থান পুনর্বাসনের জন্য ডিজাইন তৈরি করে মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছেন। সেটি অনুমোদন হলে দ্রুত কাজ শুরু করবেন। এ কাজের জন্য ব্যয় হবে প্রায় ১৫ থেকে ২০ কোটি টাকা। এছাড়া দ্বিতীয় পর্যায়ের ৩৪২ কোটি টাকা ব্যয়ে (ফেইজ-২) সাড়ে ৪ কিলোমিটার মিজানপুরে দেড় ও বরাটে ৩ কিলোমিটারের স্থায়ী কাজ শুরু হয়েছে।
এ বছর বর্ষা মৌসুমে নদী ভাঙনে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে রাজবাড়ীর ৪টি উপজেলার ১১টি ইউনিয়ন। এর মধ্যে পাংশা উপজেলার বাহাদুরপুর ও হাবাসপুরের ৬ দশমিক ৬ কিলোমিটার, কালুখালী উপজেলার কালিকাপুর ও রতনদিয়ার ৬ কিলোমিটার, সদর উপজেলার চন্দনী, খানগঞ্জ, মিজানপুর ও বরাটের ৮ কিলোমিটার এবং গোয়ালন্দ উপজেলার দেবগ্রাম, ছোটভাটলা ও দৌলতদিয়ার ৬ কিলোমিটার। এছাড়া বালিয়াকান্দি উপজেলার ৪ কিলোমিটার এলাকা ভাঙন রয়েছে
ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাবাসী জানান, রাজবাড়ী শহর রক্ষাকারী বেড়ি বাঁধটি ২০১২ সালে নির্মাণের পর মাত্র ছয় বছরের মাথায় ভাঙন দেখা দিয়েছে। অপরিকল্পিত ড্রেজিংয়ের কারণে এ ভাঙন। দ্রুত ভাঙনরোধে পদক্ষেপ গ্রহণ না করা হলে রাজবাড়ীবাসী হুমকির মুখে পড়বে এবং শুকনো মৌসুমেই এ কাজ করতে হবে। পাশাপশি নতুন সাড়ে ৪ কিলোমিটারের কাজ দ্রুত শুরু করার দাবি জানান এলাকাবাসী।
রাজবাড়ীর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী শফিকুল ইসলাম শেখ জানান, ৪৭ কোটি টাকা ব্যয়ে রাজবাড়ী শহর রক্ষা প্রকল্পের প্রথম পর্যায়ের কাজ ২০০৮ সালে শুরু হয়ে শেষ হয়েছিল ২০১২ সালে। এবারের বর্ষা মৌসুমে পদ্মা নদীর ডান তীরে প্রচন্ড স্রোত ও বিআইডব্লিউটিএ কর্তৃক নদীতে ড্রেজিং করার কারণে প্রতিরক্ষাকারী বাঁধের প্রায় ১ কিলোমিটার ধসে গেছে। এ ভাঙন স্থানের কাজ পুনরায় করতে ১৫ থেকে ২০ কোটি টাকা প্রয়োজন হবে। এছাড়া শহর রক্ষা প্রকল্পের দ্বিতীয় পর্যায়ের কাজ শুরু হয়েছে।
রাজবাড়ীর জেলা প্রশাসক মো. শওকত আলী জানান, জেলার হাবাসপুর থেকে দৌলতদিয়া পর্যন্ত ৮৫ কিলোমিটার এলাকায় পদ্মা নদী বিস্তৃত। রাজবাড়ী স্থায়ী প্রতিরক্ষা বাঁধটি এ বছরের বর্ষার নদীর পানিতে ঘূর্ণন থাকার কারণে আড়াই কিলোমিটারের ৮টি স্থান ব্যাপকভাবে ভাঙন হয়েছে। এতে প্রায় ১ কিলোমিটার এলাকা নদী গর্ভে চলে গেছে। ভাঙনস্থান গুলোতে বালুর বস্তা ফেলে ভাঙনের হাত থেকে রক্ষা করেছেন। দৌলতদিয়া থেকে পাংশার হাবাসপুর পর্যন্ত এ বছর ১ লাখ ৩০ হাজার বালুর বস্তা ফেলেছেন। ভাঙনের পর পরই মন্ত্রিপরিষদ বিভাগকে এ বিষয়ে চিঠি দিয়েছেন এবং মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ এটি পানিসম্পদ বিভাগকে জানিয়েছে।