,

শিক্ষকের জন্য ভালোবাসা

গোপালগঞ্জ প্রতিনিধি: সারা দেশে শিক্ষকদের নিয়ে যখন নানা আলোচনা আর সমালোচনা ঠিক তখন গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়ায় এক প্রাথমিক শিক্ষককে অন্যত্র বদলি করায় এক হৃদয় বিদারক ঘটনা ঘটেছে। আর এ হৃদয় স্পর্শী ঘটনাটি ঘটেছে কোটালীপাড়া উপজেলার ৬৩ নং দক্ষিণ হিরণ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে।

প্রিয় শিক্ষিকা মৌমিতার অন্যত্র বদলি হওয়ার খবর শুনে স্কুলের কোমলমতি শিক্ষার্থীরা কান্নায় ভেঙে পড়েন। প্রিয় শিক্ষিকাকে চোখের পানিতে বিদায় দেয় বিদ্যালয়ের কোমলমতি শিক্ষার্থীরা। মমতাময়ী শিক্ষকও চোখের জল ফেলতে ফেলতে বিদায় নেন। আর শিক্ষার্থীরা ও তাকে হাত নাড়িয়ে একে অপরকে বিদায় দেন।

এর আগে শিক্ষিকা মৌমিতা শিক্ষার্থীদের বুকে জড়িয়ে ধরে আদর করে। বিদায়ের প্রাক্কালে ছোট ছোট ছেলে-মেয়েদের কান্নায় ভেঙে পড়া দেখে সেখানে যারা উপস্থিত ছিলেন তারাও তাদের কান্না ধরে রাখতে পারেননি। এসব দৃশ্য যে কোনোভাবে ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ে। যা ইতোমধ্যে সোস্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়েছে।

‘গোপালগঞ্জের ফেরিওয়ালা’ নামে একটি ফেসবুক গ্রুপ থেকে মুন্সি তুহিন এ ঘটনার একটি ভিডিও ও একটি ছবি পোস্ট করেছেন। মঙ্গলবার ৭ টার দিকে ভিডিও এবং একটি ছবি পোস্ট করা হয়। এরপরই ভাইরাল হতে শুরু করে তার পোস্ট। একের পর এক লাইক-কমেন্টস ও শেয়ার হতে থাকে ভিডিওসহ পোস্টটি। তার পোস্টটি হুবহু তুলে ধরা হলো ‘গোপালগঞ্জ জেলার কোটালীপাড়া উপজেলাধীন ৬৩ নং দক্ষিণ হিরণ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষিকা মৌমিতার অন্যত্রে বদলি হওয়ার খবর শুনে স্কুলের কোমলমতি শিক্ষার্থীরা কান্নায় ভেঙে পড়েন। চোখের জলে বিদায় জানালেন প্রিয় ম্যাড্যাম কে! শিক্ষকের প্রতি শিক্ষার্থীদের এমন ভালোবাসা বাংলাদেশের প্রতিটি স্কুলে সৃষ্টি হোক এমনটা প্রত্যাশা করি।’

কমেন্টে অনেকেই সংশ্লিষ্ট শিক্ষা অফিসারের দৃষ্টি আকর্ষণ করে লিখেছেন এই বিষয়টি তদন্ত করে ওই শিক্ষিকাকে বদলি না করার জন্য সুদৃষ্টি কামনা করেছেন।

জুয়েল রানা তার মন্তব্যে লিখেছেন, মমতাময়ী শিক্ষিকা। আপনার মতো শিক্ষিকা যদি ১ লাখ ৩৪ হাজার ১ শত ৪৭ টা প্রাথমিক বিদ্যালয়ে থাকতো। তাহলে ছাত্র-ছাত্রীরা শ্রেণি কক্ষে তার মায়ের শাসন ও ভালোবাসা খুঁজে পেত।

প্রসেজিৎ বিশ্বাস লেখেছেন, এই শিক্ষিকার শিক্ষকতা জীবন ধন্য। আসলে শিক্ষকতা যে একটা মহৎ পেশা এটা তিনি প্রমাণ করে গেলেন। নিঃসন্দেহে এটা (ছোট ছোট বাচ্চাদের ভালোবাসা) পাওয়া আসলে একটা বিরাট ব্যাপার। যা সবাই পায় না।

কমলেশ কমল লিখেছেন, এই রকম শিক্ষিকা কয় জনে হতে পারেন। আমার জীবনে প্রথম বার দেখলাম। শিক্ষিকার প্রতি ছাত্র ছাত্রীদের এতো ভালোবাসা। আপা মনির জীবন সার্থক। তিনি এমন একজন শিক্ষিকা হতে পেরেছেন। আমি চাই বাংলার প্রত্যেকটা স্কুলে যেন এরকম শিক্ষিকা জন্ম হোক।

কোটালীপাড়া উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার রুবাইয়া ইয়াসমীন সাংবাদিকদের জানান, এই আধুনিক যুগে অনেকে মনে করেন শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের সম্পর্ক আগেই ভালো ছিল। এখন আর সে অবস্থা খুঁজে পাওয়া যায় না।

এ ধারনা সঠিক নয় বলে তিনি উল্লেখ করে বলেন, এখন কিছুটা অবস্থা পাল্টালেও ফিফটি ফিফটি অবস্থা রয়েছে। এখনো শিক্ষার্থী ও শিক্ষকরা একে অপরের সাথে এমন সুসম্পর্ক রয়েছে।

এই বিভাগের আরও খবর