,

‘যত সমালোচনা আমি শুনেছি, খুব কম ক্রিকেটারই তা শুনেছে’

স্পোর্টস ডেস্ক‘যত সমালোচনা আমি শুনেছি, খুব কম ক্রিকেটারই তা শুনেছে’

‘মানুষ মরে গেলে পচে যায়। বেঁচে থাকলে বদলায়। কারণে, অকারণে…।’

একদমই নাটক-সিনেমার অনুরক্ত নন বলে নাটকের বিখ্যাত এই সংলাপ তামিম ইকবালের জানার কথা নয়। তবু অজান্তে হলেও এর মূল সুরই যেন বাংলাদেশের ওয়ানডে অধিনায়কের ক্রিকেট জীবনের বাস্তবতা।

বিশেষ করে সমালোচনায় বিদ্ধ হওয়ার ক্ষেত্রে নিজেকে কারণ আর অকারণের মাঝামাঝিই আবিষ্কার করেন এই বাঁহাতি ওপেনার, ‘যত সমালোচনা আমি শুনেছি, বাংলাদেশের খুব কম ক্রিকেটারই তত শুনেছে। আমার সঙ্গে সব সময়ই এটি হয়। কারণে হয় কিছু, অকারণেও কিছু হয়।’

এমন নয় যে অন্য কারো ক্ষেত্রেও তা হয় না। অন্য অনেকের কাছে এটি গা সওয়া ব্যাপার হয়ে গেলেও আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে এক যুগেরও বেশি সময় পার করে দেওয়া তামিমের বেলায় ব্যাপারটি তা নয়। অনেক সময়ই তিনি সইতে পারেন না। সমালোচনায় আক্রান্ত হন খুব। যা তাঁর মাঠের পারফরম্যান্সকেও কখনো কখনো ভীষণ প্রভাবিত করে বলে বিশ্বাস আছে এমনকি বাংলাদেশ শিবিরেও। দেয়ালের কান হয়ে যা বাইরে আসতেও সময় লাগেনি।

বিষয়টি ধরতে সময় লাগেনি বাংলাদেশ দলের হেড কোচ রাসেল ডমিঙ্গোরও। আগের দিনের ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে তাই এই দক্ষিণ আফ্রিকানকে বলতে শোনা গিয়েছে, ‘ওর পারফরম্যান্স আর নেতৃত্ব নিয়ে যে অনেক কাটাছেঁড়া হচ্ছে, সে বিষয়ে তামিম বেশ ভালোভাবেই অবগত।’ বাইরের দুনিয়ার সে খবর মাথায় নিয়ে না আবার অধিনায়কত্ব অধ্যায়ের শুরুতেই অযাচিত চাপ নিয়ে ফেলেন তামিম, সেই সংশয়ও থাকছেই।

যদিও তামিমের সামনে সমালোচনা গায়ে না মেখে সফল হওয়ার উদাহরণ হয়ে আছেন তাঁরই কয়েকজন সতীর্থ। ধরা যাক, সাকিব আল হাসানের কথাই। বাইরের সমালোচনায় কান দেওয়ার সময়ই যেন তাঁর নেই! মাঠের পারফরম্যান্সই এই অলরাউন্ডারের প্রভাবিত না হওয়ার সাক্ষ্য দিয়ে এসেছে সব সময়। নানা সময়ে সমালোচিত দেশের সফলতম ওয়ানডে অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজারও ছিল সমালোচনাকে সহজভাবে নেওয়ার মানসিকতা। তাই মাঠে নামার সময় বাড়তি চাপ তাঁর সঙ্গী হয়ে যেত না।

চাপ এড়ানোর চেষ্টায় কখনো কখনো মাশরাফি সমালোচকদের তীরে নির্বিবাদে বুকও পেতে দিতেন। ‘বিশ্বকাপে এক উইকেট পাওয়ার পর নিশ্চয়ই আমি দলে থাকার আশা করতে পারি না’—একবার তো সংবাদ সম্মেলনে এমন কথা বলায় পারফরম্যান্স নিয়ে জোর সমালোচনায় ভাটাও পড়েছিল। তামিম অবশ্য ব্যতিক্রম। তিনি বরং সমালোচনার হাওয়া আরো গরমই করে এসেছেন। পাল্টা বক্তব্যে সমালোচনাকে দিয়েছেন স্থায়িত্বও। কিছুদিন আগে যেমন তাঁর স্ট্রাইক রেট নিয়ে প্রশ্ন করাকে ‘ট্রেন্ড’ বলে চালিয়ে দিতে চাইলেন।

আজ নিয়মিত অধিনায়ক হিসেবে শুরুর আগেও কালকের ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে একই প্রসঙ্গে তাঁর ঝাঁজালো প্রতিক্রিয়া, ‘বারবার একই প্রশ্নের উত্তর দেওয়াটা আমি উপভোগ করছি না।’ নেতৃত্ব নিয়ে এমন মন্তব্যকেও তাই সম্ভাব্য সমালোচনার আগাম ঢাল বলে মনে হওয়া স্বাভাবিক, ‘আমি উপভোগ করছি কি না, সেটিই হলো আসল। চার মাস পর এমনও হতে পারে যে দল ভালো করছে কিন্তু আমি উপভোগ করছি না।’

একই সঙ্গে অধিনায়ক হিসেবে সুদূরের ছবিতেও নিজেকে দেখতে চাইলেন, ‘ধারাবাহিকতা দলের জন্যই ভালো। এটি কয়েকজন খেলোয়াড় কিংবা নেতৃত্বের ক্ষেত্রেও হতে পারে। যদি আমি ভালো করি, দলও ভালো করে, তাহলে ২০২৩ বিশ্বকাপে আমার অধিনায়কত্ব করতে না পারার কোনো কারণ দেখি না।’ নিজের নেতৃত্বের অধ্যায় অত দূর বিস্তৃত করতে পারবেন কি না, সে কথা সময়ই বলবে। এর আগে আজ থেকে নতুন শুরুতে সমালোচনার প্রভাবমুক্ত থেকে মাঠে নামতে পারবেন তো তামিম?

জিজ্ঞাসাটা ছিল তাঁর কাছেই। প্রশ্নে তাঁর সমালোচনায় আক্রান্ত হয়ে মাঠের পারফরম্যান্সকে ক্ষতিগ্রস্ত করার প্রসঙ্গও বাদ গেল না। তামিম প্রতিবাদ না করে বললেন, ‘সেদিক (সমালোচনা) থেকে আমি এবার যথেষ্ট প্রস্তুত। নেতৃত্ব যখন নিয়েছি, এর সঙ্গে অনেক কিছু আসবে। আমি সতর্ক আছি। সমালোচনা আসবে, প্রশংসাও আসবে।’

নিজেকে দেওয়া এ প্রতিশ্রুতি রাখলেও অকারণ চাপটা এড়িয়ে যেতে পারেন তামিম!

এই বিভাগের আরও খবর