শেখ সাইফুল ইসলাম কবির সুন্দরবন থেকে ফিরে : সুন্দরবনে করোনা বিধি-নিষেধ না মেনে নদ-নদীতে চিংড়ির পোনা আহরণ করছেন জেলেরা । বাগেরহাটের মোংলা বন্দরকে করোনামুক্ত রাখতে জরুরী সেবা ব্যতীত সব ধরণের যন্ত্র চালিত যানবাহন চলাচলে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে।
স্থানীয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে বিভিন্ন সড়কে টহল দিচ্ছে নৌ-বাহিনী ও পুলিশ প্রশাসন। কিন্তু এখানকার লোকজন বাসায় অবস্থান করাতো দুরের কথা বাজার করতে এসেও নিরাপদ সামাজিক দূরত্বের তোয়াক্কা করছেন না। অবশ্য প্রশাসন ইতিমধ্যে কাঁচা বাজার অন্যত্র সরিয়ে খোলা জায়গায় নিয়েছে।
এ ছাড়া সরকারের বিধি-নিষেধ না মেনে সুন্দরবনের নদ-নদীতে চিংড়ির পোনা আহরণ করছেন জেলেরা। মোংলা উপজেলার চিলা ইউনিয়নের জয়মনি এলাকার প্রান্তিক জেলেরা বলছেন, পেটের দায়ে তারা মাছ ধরছেন। সামান্য ত্রাণে দু-তিন বেলার বেশি চলে না। অপরদিকে মোংলা শিলাপঞ্চলে বেশ কয়েকটি শিল্প কারখানা চালু থাকলেও সেখানেও কোন সামাজিক দূরত্ব মানা হচ্ছে না বলে খবর পাওয়া গেছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে,করোনা পরিস্থিতিতে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা ও মানুষকে ঘরে রাখতে বিভিন্ন কর্মকান্ড চালিয়ে যাচ্ছেন উপজেলা প্রশাসন। সচেতনতা মূলক প্রচারণা, ভ্রাম্যমান আদালত, পুলিশ ও নৌ বাহিনীর টহল অব্যাহত রয়েছে। শহর, গ্রাম, পাড়া, মহল্লায় যাচ্ছেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন সংস্থা, জন প্রতিনিধি ও স্থানীয় সরকারের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকেও বিভিন্ন প্রচার প্রচারণা চালানো হচ্ছে ঘরে থাকার জন্য। সরকারি ও বেসরকারি ভাবে কর্মহীন মানুষের ঘরে ঘরে পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে খাদ্য সামগ্রী। তারপরও মানুষ ঘরে থাকছে না।
সরেজমিনে দেখা গেছে, মোংলা বন্দরশহরসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানে ও হাট-বাজারে সামাজিক দূরত্ব মানছেন না অনেকেই। মোংলা বাজারে কয়েকজন ক্রেতা-বিক্রেতার সঙ্গে আলাপ করলে তারা জানান, তারা সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার বিষয়ে জানেন। কিন্তু বিক্রি ও কেনাকাটা করতে এসে ঠিক মত সে দূরত্ব রক্ষা করতে পারছেন না। আবার বিক্রেতারা দূরত্ব বজায় রাখার কথা বললেও ক্রেতা সমাগম বেশি থাকায় একে অপরের সঙ্গে দূরত্ব মানছেন না। দিনের বেলা বিশেষ করে সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত মাংস, মাছ ও কাঁচা বাজারে এসে লোকজন একে অপরের পাশে গাঁ ঘেষে দাঁড়িয়ে বাজার করছেন অবাধে। অবশ্য কাঁচা বাজারের কিছু অংশ প্রশাসন অন্যত্র খোলা জায়গায় সরিয়ে নিয়েছে। তবে বিকেল ৫টার পর শহরের দোকান ও নিত্য পণ্যের দোকান বন্ধ থাকায় সামাজিক দূরত্ব বজায় থাকছে।
এদিকে করোনা সংক্রমণ রোধে সরকারের বিধি-নিষেধ না মেনে মোংলার নদ-নদীতে চিংড়ির পোনা আহরণ করছেন জেলেরা। উপজেলার চিলা ইউনিয়নের জয়মনি এলাকার প্রান্তিক জেলেরা বলছেন, পেটের দায়ে তারা মাছ ধরছেন। সামান্য ত্রাণে দু-তিন বেলার বেশি চলে না।কয়েকশ নারী পুরুষ দল বেঁধে নিষিদ্ধ নেট জাল দিয়ে নদীতে চিংড়ির পোনা আহরণ করছেন। জেলেরা জানান, করোনা নিয়ে তাদের চিন্তা নাই, তাদের চিন্তা শুধু খাদ্যের জোগান নিয়ে।
এক জেলে বলেন, পেটে যদি না মানে, মৃত্যুর ভয় করে লাভ আছে? মৃত্যু তো একদিন হবে। ঘরে চাল নাই, ছেলেমেয়েদের খাবার কে দেবে? তাই নদীতে নেমে পড়েছি। আরেকজন জেলে বলেন,আজ মাছ না ধরলে, কাল না খেয়ে মরে যাব, ত্রাণ হিসেবে যে দুই কেজি চাল, দুই কেজি আলু আর ডাল পাচ্ছি, তা দিয়ে দুবেলা চলবে, তারপর কী হবে? চিলা ইউনিয়ন পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান মো.নজরুল ইসলাম জানান, জেলেদের কোনোভাবেই বোঝানো যাচ্ছে না। সুন্দরবনের নিষিদ্ধ ঘোষিত যে খাল বা নদীতে জেলেরা অবাধে মাছ ধরছেন, সেখানে সংশ্লিষ্টদের কঠোর হওয়ার পরামর্শ দেন পশুর রিভার ওয়াটার কিপার ও বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) মোংলার সমন্বয়কারী মো. নুর আলম শেখ।
মোংলা জয়মনি নৌ থানার মাত্র আধা কিলোমিটারের মধ্যে নারী পুরুষদের পোনা আহরণ প্রসঙ্গে নৌথানার ওসি মো. আবুল হোসেন শরিফ বলেন, এখানকার জেলেরা খুব গরিব। পেটের দায়ে, অভাবে স্বভাব নষ্ট হয়েছে। তাদের কী করবো বলেন? তারপরও এসব ঠেকাতে মাঝে মধ্যে আমরা অভিযান চালাচ্ছি।
অপরদিকে, মোংলার স্থায়ী বন্দরের শিল্পাঞ্চল এলাকায় কয়েকটি সিমেন্ট ফ্যাক্টরীসহ বেশ কিছু শিল্প কারখানা চালু থাকলেও এখানেও সামাজিক দূরত্ব ও স্বাস্থ্য বিধি মানা হচ্ছে না বলে খবর পাওয়া গেছে।
এ ব্যাপারে মোংলা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ রাহাত মান্নান জানান, এখানকার মানুষের মধ্যে সচেতনতা তৈরী করতে স্থানীয় প্রশাসন কাজ করে যাচ্ছে। সামাজিক দূরত্ব না মানাসহ অকারণে মানুষ বাইরে থাকায় প্রায় শতাধিক ব্যক্তিকে জরিমানা করা হয়েছে। তার পরও কেউ কেউ সরকারী নির্দেশ উপেক্ষা করলে তাদের উপর আইন অনুযায়ী আরো কঠোর ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।