,

আশা জাগিয়েও হারল বাংলাদেশ

ক্রীড়া প্রতিবেদক: শুরুতেই গোল হজম করে ধাক্কা খায় বাংলাদেশ, কিন্তু ঘুরে দাঁড়াতে লাগেনি বেশি সময়। এরপর চলতে থাকা আক্রমণ-পাল্টা আক্রমণ। দ্বিতীয়ার্ধে একই গতিতে চলতে থাকে লড়াই কিন্তু সুযোগ কাজে লাগিয়ে আবারও এগিয়ে যায় তুর্কমেনিস্তান। শেষদিকে সমতায় ফেরার সুবর্ণ সুযোগ নষ্ট করে হার নিয়ে মাঠ ছাড়ে বাংলাদেশ।

শনিবার এশিয়ান কাপ বাছাইয়ে দ্বিতীয় ম্যাচে কুয়ালালামপুরের বুকিত জলিল স্টেডিয়ামে তুর্কমেনিস্তানের কাছে ২-১ ব্যবধানে হেরেছে বাংলাদেশ। তুর্কমেনিস্তানের হয়ে গোল করেছেন আলতিমিরাত ও আমানোভ। বাংলাদেশকে সমতায় ফেরান মোহাম্মদ ইব্রাহিম।

নিজেদের প্রথম ম্যাচে বাহরাইনের কাছে ২-০ ব্যবধানে হেরেছিল বাংলাদেশ। মালয়েশিয়ার কাছে তুর্কমেনিস্তান হেরেছিল ৩-১ ব্যবধানে। আসরে টিকে থাকতে এই ম্যাচে জয়ের বিকল্প ছিল না দুই দলের সামনে কিন্তু সুযোগ তৈরি করেও কাজে লাগাতে ব্যর্থ বাংলাদেশ। আক্রমণের পসরা সাজিয়েও একটির বেশি গোল করতে পারেনি হাভিয়ের কাবরেরার দল।

ফিফা র‍্যাংকিংয়ে ৫৪ ধাপ এগিয়ে থাকা দলটির বিপক্ষে শুরুর ৪৫ মিনিট দুর্দান্ত পারফরম্যান্স উপহার দেয় জামাল ভুঁইয়ারা। দ্বিতীয় মিনিটে কর্নারের পর ডি-বক্সে বল পেয়ে যায় আনমার্কড থাকা জাফর বাবাজানোভ। কিন্তু তার শট ক্রসবারের উপর দিয়ে যায়। সাত মিনিটের মধ্যে চারটি কর্নার পাওয়া তুর্কমেনিস্তান এগিয়ে যায় চতুর্থটি কাজে লাগিয়ে। কর্নারে আন্নাদুরদিয়েভ আলতিমিরাতের কোনাকুনি প্লেসিং শট আটকানোর কোন পথ জানা ছিল না জিকোর। গড়িয়ে গড়িয়ে দূরের পোস্টে বল জড়িয়ে যায়।

দ্বাদশ মিনিটে ঘুরে দাঁড়ায় বাংলাদেশ। বিশ্বনাথের লম্বা থ্রো ইনে রাকিব হাসানের ব্যাক হেড গোলরক্ষক লাফিয়ে উঠে আটকালেও পুরোপুরি বিপদমুক্ত করতে পারেননি, হেডেই সমতা ফেরান মোহাম্মদ ইব্রাহিম। ম্যাচের ফিরে আসার পর একের পর এক সুযোগ তৈরি করে বাংলাদেশ। বার বার হানা দেয় তুর্কমেনিস্তানের রক্ষণে।

২০ মিনিটে বল নিয়ে সাজ্জাদ বক্সে ঢুকে পড়লেও শেষ পর্যন্ত গায়ের সঙ্গে সেঁটে থাকা ডিফেন্ডারের সঙ্গে পেরে ওঠেননি। ভারসাম্য হারিয়ে পড়ে যান এই ফরোয়ার্ড। ২৩ মিনিটে দলীয় আক্রমণে যায় বাংলাদেশ। কিন্তু বক্সের মধ্যে তালগোল পাকিয়ে ফেলে ফরোয়ার্ডরা। নষ্ট হয় সুযোগ। ৩৬ মিনিটে আবারও তুর্কমেনিস্তানের রক্ষণ কাঁপায় বাংলাদেশ। বিশ্বনাথের লম্বা করে নেওয়া থ্রো ইন সাজ্জাদের ব্যাক হেড গোল মুখে ইয়াসিন আরাফাত মাথা লাগানোর চেষ্টা করলে তাঁর আগে প্রতিপক্ষের এক ডিফেন্ডার বল বাইরে পাঠিয়ে দেন। সুযোগ এসেছিল তুর্কমেনিস্তানেরও। ৪০ মিনিটে বাংলাদেশকে রক্ষা করেন আনিসুর রহমান জিকো। খালমামমেদোভের কোনাকুনি শট পোস্ট ছেড়ে এসে আটকে দেন জিকো।

৪৩ মিনিটে আনাগুলিয়েভের দুর্দান্ত দক্ষতায় গোল পাওয়া হয়নি বাংলাদেশের। গোছানো আক্রমণে উঠে ডান প্রান্ত থেকে রাকিব বল পাঠান অপর প্রান্তে থাকা সাজ্জাদের দিকে কিন্তু তাঁর আগেই দারুণ স্লাইডিংয়ে আক্রমণ নষ্ট করে দেন আনাগুলিয়েভে।

প্রথমার্ধের মত দ্বিতীয়ার্ধেও সমান তালে লড়াই করে দুই দল। বাংলাদেশের চেয়ে ৫৪ ধাপ এগিয়ে তুর্কমেনিস্তান, মাঠের খেলায় তাঁর ছিলনা কোনো প্রভাব। চোখে চোখে রাঙিয়ে লড়াই করা বাংলাদেশকে নিখুঁত ফিনিংশের অভাবটা বড্ড ভুগিয়েছে। দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতেই সহজ সুযোগ নষ্ট হয় বাংলাদেশের। বাম প্রান্ত দিয়ে বল নিয়ে উপরে উঠে অপর প্রান্তে ফাকায় থাকা সাজ্জাদের দিকে ঠেলে দেন রাকিব। তার সামনে ছিল শুধুই গোলকিপার কিন্তু সময় মত নিয়ন্ত্রণ নিতে পারেননি সাজ্জাদ। ফলে নষ্ট হয় সুযোগ।

৫৪ মিনিটে আরো একটি সুযোগ নষ্ট করেন সাজ্জাদ। ডান প্রান্ত থেকে ইব্রাহিমের মাপা ক্রস বক্সের ভেতর ঠিক ঠাক মাথা ছোঁয়াতে পারেননি এই ফরোয়ার্ড। ৫৮ মিনিটে জামালের কর্নারে বল জালে জড়ানোর সুযোগ পান ইয়াসিন আরাফাত কিন্তু বল মারেন আকাশে। ৭৩ মিনিটে সহজ সুযোগ গোলে পরিণত করতে পারেননি বদলি নামা ফয়সাল আহমেদ ফাহিম। সামনে ছিল শুধুই গোলকিপার কিন্তু দূরের পোস্টে না মেরে গোলকিপারের সোজা মারেন তিনি। এত এত সুযোগ নষ্ট বিপদ ডেকে আনে বাংলাদেশকে।

৭৭ মিনিটে বাংলাদেশের রক্ষণের ভুলের সুযোগ কাজে লাগিয়ে এগিয়ে যায় তুর্কমেনিস্তান। বাম প্রান্ত থেকে আন্নাদুরদিয়েভ আলতিমিরাতের পাসে গোলমুখে পা লাগিয়ে বল জালে পাঠান বদলি নামা আমানোভ। তার গায়ের সঙ্গে সেঁটে থেকেও আটকাতে পারেননি ইয়াসিন আরাফাত।

সমতায় ফেরার সুবর্ণ সুযোগটা নষ্ট করেন ডিফেন্ডার টুটুল হোসেন বাদশা। ৯০ মিনিটে জামালের ফ্রিকিক দুরের পোস্টে অরক্ষিত থাকা বাদশা ঠিকঠাক পা লাগালেই পেতে পারতেন গোলের দেখা কিন্তু তাঁর শট চলে যায় পোস্টের উপর দিয়ে। ফলে আশা জাগিয়েও হার নিয়ে মাঠ ছাড়ে বাংলাদেশ।

দুই ম্যাচে দুই হারে বাছাই পেরোনোর স্বপ্ন শেষ বাংলাদেশের। শেষ ম্যাচে আগামী ১৪ জুন স্বাগতিক মালয়েশিয়ার বিপক্ষে খেলবে কাবরেরার দল।

এই বিভাগের আরও খবর