,

আবার অশান্ত হচ্ছে লক্ষ্মীপুর

জেলা প্রতিনিধি, লক্ষ্মীপুর: যুবলীগ নেতা আলাউদ্দিন পাটওয়ারীয়কে গুলি করে হত্যার ঘটনায় একে অপরকে দায়ী করছে আওয়ামী লীগ-বিএনপি। ক্ষমতাসীন দলের নেতাদের দাবি, রাজনৈতিক পরিবেশ ঘোলাটে করতে বিএনপির লোকজন একের পর পরিকল্পিতভাবে আওয়ামী লীগ নেতাদের হত্যা করছে। এসব হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে বিএনপির লোকজন জড়িত।

বিএনপি নেতাদের দাবি, আধিপত্য বিস্তার-অভ্যন্তরীণ কোন্দল ও দুই গ্রুপের ভাগ-বাঁটোয়ারা নিয়েই এসব হত্যাকাণ্ড। বিএনপির নেতা-কর্মীদের এসব মামলায় জড়িয়ে হয়রানি করা হচ্ছে।

পুলিশ বলছে, আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আছে। অপরাধ দমনে পুলিশ তৎপর। প্রত্যেকটি ঘটনার সঠিক তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। কেউ আইনের ঊর্ধ্বে নয়। সন্ত্রাসীদের অস্তিত্ব বেশি দিন থাকবে না।

দলীয় ও এলাকাবাসী সূত্রে জানা যায়, গত ৩০ সেপ্টেম্বর রাতে সদর উপজেলার বশিকপুর ইউনিয়নের পদ্মা দীঘিরপাড়ে ইউনিয়ন যুবলীগের সহসভাপতি মো. আলাউদ্দিন পাটওয়ারীকে গুলি করে হত্যা করা হয়। পরের দিন যুবদল ও বিএনপির নেতা-কর্মীদের আসামি করে থানায় মামলা করেন নিহত ব্যক্তির ছেলে।

এর আগে ৩০ জুলাই রাতে সদর উপজেলায় বশিকপুর ইউনিয়নের কাশিমপুর এলাকায় রুবেল হোসেন নামে এক সৌদিপ্রবাসীকে গুলি করে ও কুপিয়ে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। এ ছাড়া ২০১৯ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর রাতে আলাদাতপুর এলাকায় স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা ও ইউপি সদস্য খোরশেদ আলম মিলনকে গুলি করে হত্যা করা হয়।

অপরদিকে চলতি বছরের ৯ এপ্রিল জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সামনে ইকোনো কোম্পানির একটি বাসের ভেতরে যুবদল নেতা রিয়াদ হোসেন লিটনকে কুপিয়ে হত্যা করে সন্ত্রাসীরা। ২৮ সেপ্টেম্বর রাতে চন্দ্রগঞ্জের দেওপাড়া এলাকায় শওকত ইসলাম নামে এক বিএনপির সমর্থককে গলা কেটে হত্যার চেষ্টা করে সন্ত্রাসীরা।

১৭ এপ্রিলে দিনের বেলায় জেলা স্টেডিয়াম এলাকায় শহরবানু নামে এক গৃহবধূকে জবাই করে হত্যা করা হয়। ১৮ আগস্ট রায়পুরে এক গৃহবধূকে ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়। ২৯ আগস্ট রাতে রামগঞ্জে আহমদ শাহ নামে চার বছরের শিশুকে হত্যা করা হয় শ্বাসরোধ করে। জানুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত এ জেলায় পারিবারিক কলহ, জমি-সংক্রান্ত বিরোধসহ নানা অপরাধে আরও খুন হন ১৫ জন।

এসব ঘটনা মামলা হলে গ্রেপ্তার হয় বেশির ভাগ আসামি। তবে এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে।

এলাকাবাসী মনে করছে, এগুলো সবই লক্ষ্মীপুর আবারও অশান্ত হয়ে ওঠার লক্ষণ।

অনেক ঘটনাতেই আওয়ামী লীগ ও বিএনপির নেতা-কর্মীরা পরস্পরকে দায়ী করছেন।

জেলা পুলিশের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৫ সাল থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত ১০৪টি এলজি, ২৮টি পাইপগান, ১০টি বিদেশি পিস্তল, ৪২টি দেশীয় বন্দুকসহ ২৬২টি অস্ত্র ও প্রায় হাজার রাউন্ড গুলি উদ্ধার হয়েছে। এসব ঘটনায় মামলা হয়েছে ১৭২টি। গ্রেপ্তার হয়েছে ২৩৭ জন।

এলাকাবাসীর দাবি, প্রশাসনের তৎপরতায় এসব বাহিনীপ্রধানদের কেউ কেউ নির্মূল হলেও অনেক বাহিনীর প্রধান ও সদস্যরা অক্ষত রয়ে গেছেন। উদ্ধার হয়নি তাদের ব্যবহৃত অবৈধ অস্ত্রও। এতদিন তারা গা-ঢাকা দিয়ে থাকলেও বর্তমানে এলাকায় তাদের আনাগোনা শুরু হয়েছে। এতে করে আবারও উত্তপ্ত হচ্ছে রাজনীতির মাঠ। ফলে সামনে নির্বাচনকে কেন্দ্র করে আবারও অশান্ত হচ্ছে লক্ষ্মীপুর। দ্রুত কঠোর হাতে নিয়ন্ত্রণ না করলে পরিস্থিতির অবনতির আশঙ্কা করছেন স্থানীয় লোকজন।

জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও লক্ষ্মীপুর-২ আসনের সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট নুরউদ্দিন চৌধুরী নয়ন বলেন, ‘রাজনৈতিক পরিবেশ ঘোলাটে করতে বিএনপির সন্ত্রাসীরা একের পর পরিকল্পিতভাবে আওয়ামী লীগ নেতাদের হত্যা করছে।

‘এসব হত্যাকাণ্ডের সাথে বিএনপির সন্ত্রাসীরা জড়িত। সামনে জাতীয় নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতে চায় বিএনপি। এ ঘটনার প্রতিবাদ ও জড়িতদের গ্রেপ্তারের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল ও মানববন্ধনসহ নানা কর্মসূচি পালন অব্যাহত রয়েছে।’

এদিকে জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট হাসিবুর রহমান হাসিব বলেন, ‘আধিপত্য বিস্তার, অভ্যন্তরীণ কোন্দল ও দুই গ্রুপের ভাগ-বাঁটোয়ারা নিয়েই এসব হত্যাকাণ্ড ঘটাচ্ছে আওয়ামী লীগ। বরং বিএনপির নেতা-কর্মীদের পরিকল্পিতভাবে হত্যা করে তারা ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করতে চায়।’

পুলিশ সুপার মো. মাহফুজ্জামান আশরাফ বলেন, রাজনৈতিক অভিযোগের বিষয়টি আমলে না নিয়ে এসব হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদঘাটন করাই এখন বড় চ্যালেঞ্জ। যুবলীগ নেতা আলাউদ্দিন হত্যা মামলায় এখন পর্যন্ত চারজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এ ছাড়া প্রতিটি ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

এই বিভাগের আরও খবর