আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, আগামী জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে বিএনপি জামায়াতের সহিংসতা ও নাশকতার পরিকল্পনা অমূলক নয়। তিনি বলেন, ‘জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নামে সাম্প্রদায়িক অপশক্তি ঐক্যবদ্ধ হয়েছে। তাদের লক্ষ্য যে কোন মূল্যে আওয়ামী লীগকে এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ক্ষমতা থেকে হটানো। তাই নির্বাচন নিয়ে অনেক ষড়যন্ত্র হবে ও নাশকতার পরিকল্পনা হবে।’ ওবায়দুল কাদের আজ দুপুরে রাজধানীর ধানমন্ডিস্থ আওয়ামী লীগ সভাপতি এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার রাজনৈতিক কার্যালয়ে দলের সম্পাদকমন্ডলীর সভা শেষে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলেন।
এ সময় আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক ডা. দীপুমনি এমপি, এডভোকেট জাহাঙ্গীর কবির নানক এমপি, সাংগঠনিক সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম এমপি, বিএম মোজাম্মেল হক এমপি, দপ্তর সম্পাদক ড. আবদুস সোবহান গোলাপ, তথ্য ও গবেষনা সম্পাদক এডভোকেট আফজাল হোসেন, ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক সুজিত রায় নন্দী, বন ও পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন, বিজ্ঞাণ ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক ইঞ্জিনিয়ার আব্দুস সবুর, উপ-প্রচার সম্পাদক আমিনুল ইসলাম আমিন, উপ-দপ্তর সম্পাদক ব্যরিস্টার বিপ্লব বড়–য়া, কেন্দ্রীয় কার্য নির্বাহী সংসদের সদস্য এস এম কামাল হোসেন ও মারুফা আক্তার পপি প্রমূখ উপস্থিত ছিলেন।
জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের সংলাপের দাবীর বিষয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, নির্বাচন কমিশন ইতোমধ্যে ঘোষণা করেছে আগামী মাসের প্রথম সপ্তাহে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফশিল ঘোষণা করা হবে। সে অনুযায়ী নির্বাচনের আর মাত্র দুই সপ্তাহ সময় রয়েছে। তিনি বলেন, নির্বাচনের আগে সংলাপ অনুষ্ঠানের জন্য যেমন সময়ও নেই, তেমনি সংলাপ অনুষ্ঠানের বাস্তব কোন কারণও নেই। আর জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট সাম্প্রদায়িক অশুভ শক্তির অ্যালায়েন্স। তাই আওয়ামী লীগ নীতিগতভাবে তাদের সঙ্গে কোন সংলাপে যেতে রাজী নয়।
জাতীয় ঐক্যফ্রন্টকে আওয়ামী লীগ ভয় পাচ্ছে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যরিস্টার মওদুদ আহমেদের এমন বক্তব্যের জবাবে কাদের বলেন, তারা (ঐক্যফ্রন্ট) প্রথমে জনগনের কাছে না গিয়ে বিদেশীদের কাছে গেছে। তারা নির্বাচনে জয়ী হলে কে প্রধানমন্ত্রী হবেন তা তারা নিজেরাও জানেন না। কোনটাই তাদের কাছে পরিষ্কার নয়। আর তাই জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের ভবিষ্যতও পরিষ্কার নয়।
আগামী জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে বিএনপির ভাঙ্গার কোন সম্ভাবনা রয়েছে কিনা জানতে চাইলে সেতুমন্ত্রী কাদের বলেন, আওয়ামী লীগ কোন দল ভাঙ্গার নীতিতে বিশ্বাস করে না। লাইক মাইন্ডেড দল নিয়েই আমরা আগামী জাতীয় নির্বাচন মোকাবেলা করতে পারব। আগামী জাতীয় নির্বাচনের সামনে দেশের বড় কোন দলের ভাঙ্গার সম্ভাবনা রয়েছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, আর তাই কোন দল ভাঙ্গার বিষয়ে আমাদের কোন হাত থাকবে না। আর তা আমাদের প্রয়োজনও নেই। জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট নিয়ে আমাদের ভয় পাওয়া বা বিচলিত হওয়ার কোন কারণ নেই। কারণ গত দশ বছরে যারা আন্দোলন করতে পারেনি, তারা একমাসেও তা পারবে না। তিনি বলেন, ইতোমধ্যে বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোট থেকে দু’টি দল বেরিয়ে গেছে। আর যখন তাদের আসন ভাগাভাগি শুরু হবে তখন আরো অনেকেই বেরিয়ে যাবে।
কাদের বলেন, আমরা আগামী জাতীয় নির্বাচনের জন্য পুরোপুরি প্রস্তুত রয়েছি। আমাদের শক্তির উৎস দেশের জনগন। দেশের মাটি ও মানুষের মধ্যে আমাদের শিকড় প্রথিত। তাই কাউকে দেখে আমাদের বিচলিত ও ভয় পাওয়ার কোন কারণ নেই। জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের সিলেট হযরত শাহ জালাল (র.)’র মাজার জিয়ারতের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, হযরত শাহ জালাল (র.)’র মাজার জিয়ারত করে নির্বাচনী প্রচার শুরু করা আমাদের দেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতি হয়ে দাড়িয়েছে। তাই তারা যেতেই পারেন। এ বিষয়ে কারো আপত্তি করার কথা নয়। এ বিষয়ে তিনি বলেন, তবে মাজার জিয়ারত শেষে সমাবেশের নামে তারা কোন ধরনের সহিংসতা ও নাশকতার চেষ্টা করলে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা উদ্ভূত পরিস্থিতি প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করবে।
জাতীয়পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের বক্তব্য সম্পর্কে জানতে চাইলে ওবায়দুল কাদের বলেন, জাতীয়পার্টি বর্তমান সংসদের বিরোধীদল। বিরোধীদল হিসেবে তারা তাদের বক্তব্য রাখবেন সেটাই স্বাভাবিক। আর তারা আওয়ামী লীগের সঙ্গে নিজেদের বিলিয়েও দেন নি। তাই তাদের নিজস্ব বক্তব্য থাকবেই। তিনি বলেন, তারা আওয়ামী লীগের সঙ্গে মহাজোটে থেকেও নির্বাচন করতে পারেন, আবার এককভাবে নির্বাচন করতে পারেন। তা আগামী কয়েকদিনের মধ্যেই পরিষ্কার হয়ে যাবে।
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক কাদের বলেন, রাজধানীসহ সারাদেশে আওয়ামী লীগের গণসংযোগ কর্মসূচী উৎসবমূখর পরিবেশের সৃষ্টি হয়েছে। সনাতন ধর্মাবলম্বীদের বৃহত্তম ধর্মীয় উৎসব দূর্গাপূজার জন্য তা স্থগিত রাখা হয়েছিল। আবার তা সারাদেশে ব্যাপক ভাবে শুরু করা হবে। আগামী জাতীয় নির্বাচন পর্যন্ত তা অব্যাহত থাকবে। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ সভাপতি এবং বঙ্গবন্ধুর কন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে স্মার্ট ও সুসংগঠিত দল হিসেবে আমরা আগামী জাতীয় নির্বাচনে অংশ নেব। সে লক্ষ্যে গণসংযোগ কর্মসূচীকে আরো জোরদার করব। দলের কেন্দ্রীয় কার্য নির্বাহী কমিটির সভার পর গণসংযোগ কর্মসূচী ভিন্নমাত্রা লাভ করবে।
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের সনাতন ধর্মাবলম্বীদের দূর্গাপূজা কোন ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা ছাড়া সুন্দরভাবে সম্পন্ন হওয়ায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ধন্যবাদ জানান। ব্যরিস্টার মইনুল হোসেনের বিশিস্ট সাংবাদিক মাসুদা ভাট্টি সম্পর্কে কুরুচিকর মন্তব্য করায় তার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানান এবং তারা বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহনের বিষয়ে নারী সাংবাদিকদের সঙ্গে একমত পোষন করেন।