জেলা প্রতিনিধি, কিশোরগঞ্জ: কিশোরগঞ্জে মুক্তিযোদ্ধাদের নামের তালিকা থেকে চিহ্নিত রাজাকারদের নাম উঠার অভিযোগ পাওয়া গেছে।
মুক্তিযোদ্ধাদের পক্ষ থেকে সংবাদ সম্মেলন করে অভিযোগ করা হয়েছে, সদর উপজেলায় মুক্তিযোদ্ধাদের যে তালিকা রয়েছে সেখানে চিহ্নিত চার জন রাজাকারের নাম রয়েছে। এদের মু্ক্তিযোদ্ধা সনদ বাতিল, জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল (জামুকা) বিলুপ্ত ও অবিলম্বে মুক্তিযোদ্ধা সংসদ নির্বাচনের দাবি জানান তারা।
বৃহস্পতিবার দুপুরে মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কার্যালয়ে এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে কিশোরগঞ্জ সদর উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক নেতারা।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য উপস্থাপন করেন সদর উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার ভূপাল চন্দ্র নন্দী।
লিখিত বক্তব্যে তিনি জানান, রশিদাবাদ গ্রামের বাসিন্দা মো. রফিক, পাড়া পরমানন্দ গ্রামের বাসিন্দা মহরম আলী মোল্লা, জালুয়াপাড়া গ্রামের বাসিন্দা আজিম উদ্দিন ও নীলগঞ্জ গ্রামের মৃত সুলতান আহম্মদ সেনা- এ চারজন চিহ্নিত রাজাকার।
তাদের মধ্যে মহরম আলী মোল্লা মুক্তিযুদ্ধের সময় মুক্তিযোদ্ধা আজিম উদ্দিন দারগা গ্রুপের কাছে আত্মসমর্পণ করেছিলেন এবং মুক্তিযোদ্ধা মাহতাব উদ্দিনের গ্রুপের সদস্যরা রাজাকার আজিম উদ্দিনকে অস্ত্রসহ গ্রেপ্তার করেছিলেন।
অবশ্য যোগাযোগ করা হলে মহরম আলী মোল্লা এই অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তিনি বলেন, ‘আমি মুক্তিযুদ্ধ করেছি। যারা অভিযোগ করেছেন তারা মূলত টাকা-পয়সার জন্য এমন অভিযোগ তুলেছেন।’
মহরম আলীর শ্রবণ শক্তি কম। অনেকক্ষণ চেষ্টার পর এই কথাগুলো বলা গেছে। তার কমান্ডার কে ছিলেন, তিনি কোথায় যুদ্ধ করেছেন- এসব প্রশ্নের জবাব আর পাওয়া যায়নি।
মো. রফিকের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘আমি ১১ নং সেক্টরে যুদ্ধ করেছি। এর যাবতীয় প্রমাণ আছে।’
আপনার কমান্ডার কে- জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘শুক্কুর মাহমুদ কমান্ডারের নেতৃত্বে যুদ্ধ করেছি। তিনি জীবিত নাই।’
আপনার সঙ্গে যুদ্ধ এমন কেউ জীবিত আছেন কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘সবাই মারা গেছে।’
রফিক দাবি করেন, তার বিরুদ্ধে সংবাদ সম্মেলন করার কারণ অন্য। তিনি বলেন, ‘ভূপাল চন্দ্র নন্দী আমার কাছে কিছুদিন পর পর সংগঠনের নামে টাকা চাইতেন। দুই বছর আমার কাছে ৩০ হাজার টাকা চেয়েছিল। আমি দিতে না পারায় আমার বিরুদ্ধে রাজাকারের অভিযোগ তুলতে শুরু করেন।
‘১৯৯৬ সাল থেকে আমি ভাতা পেয়ে আসছি। তাদের দুষ্টমির জন্য গত ১৩ মাস ভাতা পাচ্ছি না।’
সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোহাম্মদ আলী সিদ্দিকী বলেন, ‘বীর মুক্তিযোদ্ধাদের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে উল্লেখিত চার জনের ভাতা বন্ধ রয়েছে।’
সংবাদ সম্মেলনে আরও বলা হয়, যাচাই বাছাইয়ের সময় উপযুক্ত প্রমাণসহ জামুকা ও মুক্তিযোদ্ধা বিষয়ক মন্ত্রীর কাছে এ চার জনের বিষয়ে কাগজ পাঠানো হলেও তাদেরকে মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে তালিকাভুক্ত করা হয়।
এতে করে মুক্তিযোদ্ধা ও বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে অবমাননা করা হয়েছে বলেও উল্লেখ করেন ভূপাল চন্দ্র নন্দী।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘জামুকার প্রতি এখন আর মুক্তিযোদ্ধাদের কোন আস্থা নেই।’ জামুকাকে তিনি ‘জাল মুক্তিযোদ্ধা তৈরির কারখানা’ উল্লেখ করে সংস্থাটিকে বিলুপ্ত করার দাবি জানান।
মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যে শৃঙ্খলা ও গণতান্ত্রিক পরিবেশ ফিরিয়ে আনার লক্ষ্যে অবিলম্বে মুক্তিযোদ্ধা সংসদ নির্বাচনের দাবিও জানানো হয় সংবাদ সম্মেলনে।
মুক্তিযোদ্ধা সংসদ সদর উপজেলা কমান্ডের সাবেক সাংগঠনিক কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা আজিম উদ্দিন বলেন, ‘আমাদের কষ্ট লাগে যখন দেখি মুক্তিযুদ্ধের সময় যারা আমাদের বিপক্ষে অবস্থান নিয়ে যুদ্ধ করেছে, তাদের নামও আমাদের তালিকাতেই অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
‘আমরা নিজের জীবন বাজি রেখে যুদ্ধ করে যে সম্মান পাচ্ছি তারা সে সময় বিরোধিতা করেও সমপরিমাণ সম্মান পাচ্ছে। এ সময় নিজেকে খুব ছোট মনে হয়।’
জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার এ বি সিদ্দিক, সহকারী কমান্ডার নূরুল হক, জয়নাল আবেদীন, মনিন্দ্র চন্দ্র সরকার, শামছুজ্জামান, নজরুল ইসলাম, মতিউল ইসলাম, হাসিদুর রহমান, হাবিবুর রহমান, হাবিবুর রহমান মুক্তু, মতিউর রহমান, আব্দুল হাই, হাবিবুর রহমান বুলবুল, রুকুন উদ্দিনও সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন।