কাশিয়ানী (গোপালগঞ্জ) প্রতিনিধি: করোনাভাইরাস সংক্রমণ প্রতিরোধে জনসাধারণকে নিরাপদে নিজ ঘরে অবস্থানের নির্দেশে অবরুদ্ধ হয়ে পড়েছে গোটা কাশিয়ানী উপজেলা। কাঁচাবাজার ও ওষুধের দোকান ছাড়া অধিকাংশ দোকানপাট বন্ধ রয়েছে। সড়ক-মহাসড়কগুলো ফাঁকা হয়ে গেছে। প্রয়োজন ছাড়া কেউ ঘর থেকে বের হচ্ছে না।
এমন অবস্থায় বিপাকে পড়েছে উপজেলার প্রায় ১০ হাজার শ্রমজীবি নি¤œ আয়ের মানুষ। কাজ করতে না পেরে খাদ্যের অভাবে মানবেতর জীবনযাপন করছেন তারা। আবার অনেক ভ্যানচালক, দিনমজুরকে পেটের তাগিদে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে পথে নামতে দেখা গেছে। যদিও সব সময় তারা থাকছে পুলিশ আতঙ্কে।
ভ্যান চালক সামাদ মোল্যা (৩৫) বলেন, ‘পেটের দায়ে জীবনের ঝুঁকি ভ্যান চালাতে বের হয়েছি। রাস্তা-ঘাটে কোন যাত্রী নেই। সারাদিন ধরেও এক-দেড় শ’ টাকা রোজগার করতে পারি না। কিভাবে ছেলে-মেয়ে নিয়ে সংসার চলাবো বুঝতে পারছি না।’
এদিকে, কাশিয়ানী উপজেলা প্রশাসন কর্মহীন মানুষের মাঝে খাদ্যসামগ্রী বিতরণ কার্যক্রম শুরু করেছে। গত শনিবার সকাল থেকে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ সাব্বির আহমেদ উপজেলা সদরসহ বেশ কিছু এলাকায় কর্মহীন মানুষের বাড়ি বাড়ি গিয়ে খাদ্য সামগ্রী পৌঁছে দিচ্ছেন। তিনি উপজেলা চেয়ারম্যান, ওসি, ইউপি চেয়ারম্যান, সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী, স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও গণ্যমান্য ব্যক্তিদের সাথে নিয়ে খাদ্যসামগ্রী পৌঁছে দিতে ছুটে যাচ্ছেন দরিদ্র মানুষের কাছে। রাত-দিন সার্বক্ষণিক মুঠোফোন ও ফেসবুকের মাধ্যমে গোটা উপজেলার সকল শ্রেণি-পেশার মানুষের সাথে যোগাযোগ রক্ষা করছেন। খোঁজ-খবর নিচ্ছেন। রাত-দিন বলে তাঁর কাছে কোন কথা নেই। করোনা সংক্রমণ প্রতিরোধে দিনরাত চষে বেড়াচ্ছেন উপজেলার ১৪ ইউনিয়নের প্রতিটি রাস্তা-ঘাট, হাট-বাজারসহ প্রত্যন্ত এলাকা। সরকারের সেবা জনগণের দৌড়গোড়ায় পৌঁছে দিতে এবং মানবিক সমাজ গঠনে নিরলস কাজ করছেন ইউএনও সাব্বির আহমেদ।
এ সময় ইউএনও সাব্বির আহমেদ বলেন, ‘সরকারিভাবে প্রাপ্ত মানবিক খাদ্য সহায়তা থেকে ৩৫০ পরিবারকে খাদ্য সামগ্রী দেয়া হয়েছে। ইউনিয়ন পর্যায়ে কমিটি করা হয়েছে। পর্যায়েক্রমে প্রতিটি ইউনিয়নের নিম্ন আয়ের মানুষদের কাছে তালিকা অনুযায়ী সরকারিভাবে খাদ্য সামগ্রী ঘরে পৌছে দেয়া হবে। দু’একদিনের মধ্যে এ কার্যক্রম আরো জোরালো করা হবে। যাতে কোন কর্মজীবী দরিদ্র মানুষ খাদ্যের অভাবে বুভূক্ষ অবস্থায় না থাকেন। সে জন্যই এই কার্যক্রম জোরদার করা হবে।’
তিনি বলেন, ‘খাদ্য সামগ্রীর মধ্যে রয়েছে ২০ কেজি চাল, দুই কেজি ডাল, দুই কেজি আলু, এক লিটার ভোজ্য তেল, এক কেজি পেঁয়াজ, এক কেজি লবন ও ৫০ গ্রাম শুকনা মরিচ। এছাড়াও এসব মানুষের মাঝে সাবান, হ্যান্ড স্যানিটাইজার সামগ্রী বিতরণ করা হচ্ছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘হোম কোয়ারেন্টিন নিশ্চিত করতে এবং দোকানপাটগুলোতে ক্রেতাদের নির্দিষ্ট দূরত্ব বজায় রাখতে বিভিন্ন হাট-বাজারে পুলিশ, আনসার, গ্রাম পুলিশ ও সশস্ত্র বাহিনীর টহল জোরদার করা হয়েছে।’