,

কাশিয়ানীতে পাঁচ হাজার জেলে পরিবারে দূর্দিন

লিয়াকত হোসেন লিংকন: ভরা বর্ষা মৌসুমেও কাশিয়ানী উপজেলার বিলাঞ্চলে দেখা নেই দেশি প্রজাতির মাছের। খাল-বিল ও জলাশয়ে বর্ষা মৌসুমে পর্যাপ্ত পানি না থাকায় দেশি মাছ শূন্য হয়ে পড়েছে এসব এলাকা।

এছাড়া নিষিদ্ধ কারেন্ট জালের অবাধ ব্যবহার, মাছের অভয়াশ্রম ধ্বংস, শুষ্ক মৌসুমে শ্যালো মেশিনের সাহায্যে পানি সেচে মাছ ধরার অবাধ প্রবণতা, কৃষি জমিতে মাত্রারিক্ত রাসায়নিক সার ও কীটনাশক প্রয়োগ, প্রজনন মৌসুমে পোনা মাছ নিধন এবং মৎস্য আইনের যথাযথ প্রয়োগ না থাকায় এ অঞ্চলের অন্যতম মৎস্য সম্পদ দিন দিন বিলুপ্তি হয়ে যাচ্ছে।

ফলে জেলে ও আড়তদারদের মাঝে চরম হতাশা বিরাজ করছে। মাছ শূন্য হওয়ায় অধিকাংশ জেলে পরিবার কষ্টে দিন কাটাচ্ছেন। আবার অনেকে পেশা পরিবর্তন করে অন্য পেশায় চলে যাচ্ছেন। জেলেদের টাকা দাদন দিয়ে লোকসানের আশংকা করছেন স্থানীয় আড়তদাররা।

বিল অধ্যুষিত কাশিয়ানী উপজেলা মৎস্য খ্যাত হিসেবে বেশ পরিচিত। এখানকার মানুষের প্রধান পেশা কৃষি হলেও জনসংখ্যার একটি বড় অংশ মৎস্য সম্পদের উপর নির্ভরশীল। সরকারি হিসাব মতে কাশিয়ানী উপজেলায় ২ হাজার ৩৯০ জন জেলে এই পেশার সাথে জড়িত থাকলেও বেসরকারি হিসেবে প্রায় পাঁচ হাজারের মতো লোক এ পেশার সাথে জড়িত রয়েছে।

এক সময় এ অঞ্চলের নদী-নালা, খাল-বিল ও পুকুর-ডোবায় নানা প্রজাতির প্রচুর দেশীয় মাছ পাওয়া যেতো। কিন্তু এ বছর বর্ষা মৌসুমে খাল-বিল ও জলাশয়ে পর্যাপ্ত পানি না থাকায় দেশী মাছের দেখা নেই। দেশি মাছ শূন্য হয়ে পড়েছে কাশিয়ানীর হাট-বাজারগুলো।

সরেজমিন উপজেলার কয়েকটি হাট-বাজার ঘুরে দেখা গেছে, দেশী মাছের পরিবর্তে পুকুরে চাষ করা রুই, কাতলা, সিলভার কার্প, বিদেশি মাগুর, ঝাটকা ইলিশ, পাঙ্গাস, বিদেশী কৈ ও তেলাপিয়াসহ বিভিন্ন ধরণের মাছ বিক্রি হচ্ছে। মাঝে মধ্যে বাজারে দেশী মাছের দেখা মিললেও দাম অনেকটা নিম্নবিত্ত ও মধ্যবিত্তদের ক্রয় ক্ষমতার বাইরে।

এদিকে, বর্ষা মৌসুমকে ঘিরে স্থানীয় আড়তদাররা জেলেদের লাখ লাখ টাকা দাদন দিয়েছেন। কিন্তু এ বছর পানির অভাবে মাছশূন্য হয়ে পড়ায় আড়তদার ও জেলেদের মাঝে দেখা দিয়েছে চরম হতাশা।

স্থানীয় জেলে স্বপন মোল্যা বলেন, ‘মাছ না পাওয়ায় আমরা খুব কষ্টে আছি। সংসার চালাতে খুব হিমশিম খেতে হচ্ছে। সামনের দিনগুলোতে ছেলে-মেয়ে নিয়ে কিভাবে চলবো চিন্তায় আছি।’

আড়তদার কৃষ্ণ বিশ^াস জানান, ‘লাখ লাখ টাকা বিনিয়োগ করে আশায় বুক বেঁধে আছি। প্রতি বছর বর্ষার শুরুতেই আড়তে প্রচুর মাছ আসে। এবারও সেই আশায় ছিলাম। কিন্তু এ বছর মাছের দেখা নেই। তাই ব্যবসা নিয়ে চরম শঙ্কায় আছি।’

উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা শাহ জাহান সিরাজ দেশি মাছ সংকটের কথা স্বীকার করে বলেন, ‘জমিতে মাত্রারিক্ত কীটনাশক প্রয়োগ, শুষ্ক মৌসুমে খাল-বিল, পুকুর-জলাশয় ভরাট ও সেচে মাছ ধরার প্রবণতা, নির্বিচারে ছোট মাছ নিধনসহ নানা কারণে দেশী প্রজাতির মাছ বিপন্ন হয়ে যাচ্ছে।’

এই বিভাগের আরও খবর