ক্রীড়া প্রতিবেদক : ব্রেন্ডন মাভুতার একটু লাফিয়ে ওঠা বলটা লাগল মাহমুদউল্লাহর মাঝ ব্যাটে। দুই ফিল্ডারের মাঝ দিয়ে বল বেরিয়ে গেল কভারে। প্রান্ত বদল মাহমুদউল্লাহর। ৯৯ থেকে মাহমুদউল্লাহ পৌঁছে গেলেন তিন অঙ্কে। আহ এমন মুহূর্তের জন্য কতদিনের অপেক্ষার অবসান!
পাক্কা আট বছর পর টেস্টে মাহমুদউল্লাহ পেলেন সেঞ্চুরি। ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় সেঞ্চুরি পেতে এতটা অপেক্ষা করতে হয়েছে কজনের? বাংলাদেশের কোনো ক্রিকেটারের নেই। তবে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে এর থেকেও বেশি সময় অপেক্ষা করতে হয়েছে। এদের মধ্যে রয়েছে হ্যামিলটন মাসাকাদজার নামও।
২০০১ সালে অভিষেক টেস্টে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ১১৯ রান করার পর দ্বিতীয় টেস্ট সেঞ্চুরি পেতে তাকে ১০ বছর অপেক্ষা করতে হয়। বাংলাদেশের বিপক্ষে তার দ্বিতীয় সেঞ্চুরি ১০৪ রানের। তবে সবচেয়ে লম্বা সময় অপেক্ষা করত হয় অস্ট্রেলিয়ার ওয়ারেন বার্ডলিকে। ১৯১২ সালে লর্ডসে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে তিনি করেছিলেন ১৬৪ রান। প্রায় ১৪ বছর পর ১৯২৬ সালে লর্ডসেই তিনি দ্বিতীয় সেঞ্চুরিটি হাঁকান ইংল্যান্ডের বিপক্ষে। ১৯৩ রানে নট আউট ছিলেন তিনি।
নিদাহাস ট্রফির ডু অর ডাই ম্যাচে ছক্কা মেরে দলকে ফাইনালে তুলে মাহমুদউল্লাহ যে লাফ দিয়েছিলেন, যেভাবে উদযাপন করেছিলেন, তা আবারো ফিরিয়ে আনলেন মিরপুরে। এবার তার সঙ্গে পুরো হোম ক্রাউড। উদযাপনে নতুন কিছু যোগও করেছেন। সেঞ্চুরি সন্তানকে উৎসর্গ করেছেন, তা স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছিল। আর সবশেষে করেছেন সিজদাহ। তার উদযাপনে শামিল হন সঙ্গে থাকা মেহেদী হাসান মিরাজও।
টপ অর্ডার ব্যর্থ হওয়ায় সেঞ্চুরির সুযোগটি আসে মাহমুদউল্লাহর। ২১৮ রানের লিড নিয়ে ব্যাটিংয়ে নেমে আবারো ব্যাটিং বিপর্যয়। ২৫ রান তুলতেই বাংলাদেশের ৪ ব্যাটসম্যান সাজঘরে। পঞ্চম উইকেটে মিথুনকে নিয়ে জুটি বাঁধলেন মাহমুদউল্লাহ। দুজনের জুটিতে দল বিপর্যয় সামলে নেয় ভালোভাবেই। এ সময়ে দুজনই তুলে নেন হাফ সেঞ্চুরি।
ক্যারিয়ারের প্রথম হাফ সেঞ্চুরি তুলে মিথুন সাজঘরে ফিরলেও মাহমুদউল্লাহ টিকে ছিলেন। তাকে সঙ্গ দিতে পারেননি আরিফুল। কিন্তু মিরাজ হতাশ করেননি। ৭৩ রানের অবিচ্ছিন্ন জুটিতে মাহমুদউল্লাহ পেয়ে যান ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় সেঞ্চুরি।
৭০ বলে পঞ্চাশ ছোঁয়া মাহমুদউল্লাহ পরের ৫২ বলে তোলেন সেঞ্চুরি। ৪ চার ও ২ ছক্কায় সাজান ইনিংসটি। ৪১ টেস্টে ৭৮ ইনিংসে ২২৩৭ রান এসেছে মাহমুদউল্লাহর ব্যাট থেকে। ২ সেঞ্চুরির পাশাপাশি রয়েছে ১৫ হাফ সেঞ্চুরি। প্রথম সেঞ্চুরিটি পেয়েছিলেন ২০১০ সালে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে।
এরপর ৬৮ ইনিংসে ছিল না কোনো সেঞ্চুরি। ভাগ্যদেবী সঙ্গে থাকায় আজ আবার সেঞ্চুরির মুখ দেখলেন বাংলাদেশ অধিনায়ক। আজকের সেঞ্চুরি অনেক আরাধ্য, অনেক কাঙ্খিত। তাইতো সেঞ্চুরির উদযাপনও ছিল আকর্ষণীয়, চিত্তাকর্ষক।