,

কবিতা ll ভালোবাসার প্রতিদান

ভালোবাসার প্রতিদান

-রেজাউল করিম

তখন ক্লাস নাইনের ছাত্র। বয়সটি
একটু এলো-মেলো। নবম,দশম,
একাদশ এই তিনটি বছর নাকি ছাত্রজীবনে অধিকতর বিপদজনক।
বিপদজনকভাবে চলাফেরায়
অনেকের ছাত্রজীবনের
সমাপ্তির গল্প আকাশে বাতাসে ভাসে
এখনো। অষ্টম হতে বয়ঃসন্ধিতে নানা
জটিলতার সৃষ্টি হয় ছেলে-মেয়েদের।
তবে জীবনঘনিষ্ঠ জটিলতা বলে বাধ্য হয়ে সবাইকেই মেনে নিতে হয় বটে।সদ্য
যৌবনে পদার্পণে যৌবন দীপ্তে নিজেদের
উদ্ভাসন স্পৃহা তাড়না করে প্রতিনিয়তই।
তারই ধারা বাহিকাতায় এক বন্ধু তার
সহপাঠীকে বলে ফেলেছিলো আমি তোমাকে ভালোবাসি। মেয়েটি কিছু
সময় তাকিয়ে ছিলো বন্ধুর দিকে। আমি
একটু দুরে দাঁড়িয়ে অবস্থা দেখে ভয়ে
কাঁপতে ছিলাম।
মেয়েটি মুহূর্তে কেঁদে ফেললো।তার পর
দু বন্ধুরই বই খাতা ফেলে পালায়নের
চেষ্টা।কপালেরফের ভাগ্যের গগনে
কালো মেঘের হাতছানি।মুহুর্তে ঝড়ের
তান্ডব। তছনছ করে দিলো ভালোবাসা!
দুবন্ধু কট খেয়ে গেলাম আতিয়ার
ভাইয়ের হাতে। সারা স্কুল আগুনের
মতো ছেয়েগেলো নীল বেদনায়। হেডস্যারের জোড়া বেতের খিরদই
লেপ্টে গেলো পিঠে। প্রচন্ড ব্যথা বিষে
জ্বর এসে গেলো। বাড়ি এলাম কোনো মতে। সাত দিন পরে গোসল করাতে
যেয়ে মা দেখে পিঠ কেটে রক্ত জমাট
হয়ে আছে।জানতে চাইলো এ কি
হয়েছে। কেঁদে ফেলে ছিলাম।কিন্ত
ভয়ে সেদিনও মায়ের কাছে বলতে
পারিনি ভয়াবহ দুর্ঘটনার কথা।
এর পর ভালোবাসা জীবন থেকে
মুছতে চেষ্টা দুই বন্ধুর। পারিনি মুছে ফেলতে ভালোবাসা। ভালোবাসাই
একদিন ফিরে এলো নির্মল বাতাসে।
তবে ভালোবাসার উপদ্রব শেষ হইনি
আজও। যার কারণে সেদিন দুবন্ধু
মার খেয়েছিলাম জ্বরের কথা আজও
ভুলিনা সেই বান্ধবী একদিন তার প্রিয়
স্বামী সারথি নিয়ে ভ্যানে আসছিলেন
বাবার বাড়িতে। ভাগ্যের পরিক্রমায়
আমরা দুবন্ধু হাঁটছিলাম বিকাল বেলা।
নানা স্মৃতি রোমন্থনে ফুলকুড়িদের
মিলনমেলায় আমরা যেনো প্রধান
অতিথি হয়েছি তখন! সে-কি আনন্দ
আহা! হঠাৎই একটি ধুম শব্দ কর্ণকুহরে
প্রবিষ্ট হলো। তাকিয়েই দেখতে পাই
একটি ভ্যান রাস্তার খাদে। তিন জন
তিন দিকে। কি সুন্দর সাজানো পোষাকের কোট টাই পরা ভদ্র মানুষটির
বুকের উপর ভ্যান চিত হয়ে আছে।
ভ্যান সরিয়ে আমরা দৌড়ে ধরতে গেলাম
ভদ্র লোকটিকে। কিন্ত লোকটি উহঃআহঃ
কন্ঠে আমাদের বললেন ভাই আমাকে
তুলতে হবে না আপনারা আমার স্ত্রীকে
তোলেন। আমরা দুবন্ধু তার স্ত্রীর দিকে
তাকালাম।ততক্ষণে পা ভেঙ্গে দুভাগ
হয়েগেছে। আমাদের জড়িয়ে ধরলো
ভদ্র মহিলা। আমরাও যত্নে জড়িয়ে
ধরে আরেকটি অটোরিকশায় তুললাম।
নিয়ে গেলাম হাসপাতালে। চিকিৎসা
চালাতে সার্বিক সহযোগীতা করলাম।
আমাদের কাছ থেকে দেখে লজ্জা
পেলো বেশ। মার খাইয়েছিলো সে
কথা হয়তো সেও মনে রেখেছিলো।
হয়তো মনের অজান্তেই স্মৃতিপটে
ভেসে উঠিছিলো সে কথা।
নিজেকে সামলে
কাছে বসিয়ে রেখেছিলো অনেকক্ষন।
নীল বেদনা মুছে গেলো হৃদয় হতে।
আমাদের আসতে দিতে চাচ্ছিলনা
মোটে।তবুওতো চলেই আসতে হবে।
আমাদের ঘরেওতো ভালোবাসা আছে।
আসার সময় বলে এলাম শুধু
আমরা তোমাকে ভালোবাসি আজও ভালোবাসি..
ভালো থেকো চিরদিন চিরকাল বন্ধু।

এই বিভাগের আরও খবর