,

৮ ঘণ্টা পর ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় রেল যোগাযোগ স্বাভাবিক

জেলা প্রতিনিধি, ব্রাহ্মণবাড়িয়া: ৮ ঘণ্টা বন্ধ থাকার পর ঢাকা-সিলেট, ঢাকা-নোয়াখালী ও ঢাকা-চট্টগ্রাম রেলপথে ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক হয়েছে।

শুক্রবার দিবাগত রাত সাড়ে ১২টার দিকে ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক হয়েছে। রেলের এসব পথের বিভিন্ন স্টেশনে সাতটি ট্রেন আটকা পড়েছিল বলে জানা গেছে।

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ঢাকায় সফরকে কেন্দ্র করে মাদ্রাসাছাত্রদের তাণ্ডবে উত্তপ্ত হয়ে উঠে ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহর। শুক্রবার দুপুর আড়াইটায় শহরের প্রধান সড়ক টিএ রোডে মাদ্রাসায় ব্যাপক বিক্ষোভ প্রদর্শন করে। সিগন্যাল বক্স ভেঙে ফেলায় ঢাকার সঙ্গে সিলেট ও চট্টগ্রামের ট্রেন চলাচল বন্ধ হয়ে পড়ে।

স্টেশনের সিগন্যাল প্যানেলসহ সবকিছু আগুনে পুড়িয়ে দেওয়ায় বিকাল সাড়ে ৪টার পর থেকে ঢাকা-সিলেট ও ঢাকা-চট্টগ্রাম রেলপথে ট্রেন চলাচল বন্ধ থাকে। তাদের হামলায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ব্রাহ্মণবাড়িয়া রেলওয়ে স্টেশন।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া রেলস্টেশনের স্টেশনমাস্টার সোহেব আহমেদ বলেন, মাদ্রাসাছাত্ররা স্টেশনের সবকিছু পুড়িয়ে ফেলেছেন। এ কারণে বিকাল সাড়ে ৪টার পর থেকে ট্রেন চলাচল বন্ধ ছিল। রাত সাড়ে ১২ টার দিকে ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক হয়।

স্টেশন সূত্রে জানা গেছে, সিলেট থেকে ঢাকাগামী পারাবত এক্সপ্রেস ব্রাহ্মণবাড়িয়ার হরষপুর রেলওয়ে স্টেশন ও জয়ন্তিকা এক্সপ্রেস ট্রেন ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিজয়নগরের আজমপুর রেলওয়ে স্টেশন, চট্টগ্রাম থেকে ঢাকাগামী কর্ণফুলী এক্সপ্রেস ব্রাহ্মণবাড়িয়া রেলওয়ে স্টেশনের আউটারে ভাদুঘর এলাকায়, চট্টগ্রাম থেকে ছেড়ে আসা মহানগর এক্সপ্রেস আখাউড়া রেলওয়ে জংশন স্টেশনে ও মহানগর গোধূলি কসবা রেলওয়ে স্টেশনে আটকা পড়েছিল।

আর ঢাকা থেকে ছেড়ে আসা চট্টগ্রামগামী আন্তনগর সুবর্ণ এক্সপ্রেস ট্রেন দৌলতকান্দি রেলওয়ে স্টেশন, নোয়াখালীগামী উপকূল এক্সপ্রেস নরসিংদীর মেথিকান্দায় আটকা পড়েছিল।

সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার পর ফায়ার সার্ভিসের দল ঘটনাস্থল ব্রাহ্মণবাড়িয়া রেলওয়ে স্টেশনে পৌঁছে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনার কাজ করে। আর রাতে আখাউড়া থেকে রেলওয়ের লোকজন ও পুলিশ এসে রেললাইন পরিষ্কার ও মেরামতের কাজ করে।

জানা গেছে, মোদিবিরোধী বিক্ষোভকে কেন্দ্র করে মাদ্রাসাছাত্রদের তাণ্ডবের সময় শহরের দাতিয়ারা এলাকার সাগর মিয়ার ছেলে মো. আশিক (২০) নামের এক তরুণ নিহত হয়েছেন। তবে ওই তরুণ কীভাবে বা কার হামলায় আহত হয়ে মারা গেছেন, তা নিশ্চিত করতে পারেনি কেউ।

এসময় প্রধান সড়কে যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে পড়ে। বিক্ষুব্ধরা সড়কের বিভিন্ন স্থানে টায়ার পুড়িয়ে বিক্ষোভ করতে থাকে। পরে রেলস্টেশনে বিক্ষোভ করে আগুন ধরিয়ে দেয়। রেল স্টেশনের সিগন্যাল, মাস্টার রুম, কন্ট্রোল রুম, টিকিট কাউন্টার, প্যানেল বোর্ডসহ অন্যান্য কর্মকর্তাদের কক্ষ ব্যাপক ভাংচুর করা হয়েছে।

ঢাকাগামী কর্ণফুলী এক্সপ্রেস ট্রেন ব্রাহ্মণবাড়িয়া রেলস্টেশনে প্রবেশ করার সময় বিক্ষুব্ধরা পাথর নিক্ষেপ করলে ট্রেনটি ফিরে যায়। জেলা পরিষদ কার্যালয় বিকেল সোয়া ৫টায় ব্যাপক হামলা চালানো হয়।

শহরের কাউতলী, ভাদুঘরে ব্যাপক চালানো হয়। সড়কে আগুন ধরিয়ে রাস্তায় অবরোধ করা হয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ আনতে পুলিশের ছোড়া টিয়ারসেল ও রাবার বুলেটে আটজন আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।

ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের বিশ্বরোড, কুমিল্লা-সিলেট মহাসড়কের ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সুহিলপুর, নন্দনপুর, মজলিশপুর, ঘাটুরাসহ বিভিন্ন স্থানে সড়কে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করা হয়।

এ ঘটনায় ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সঙ্গে দেশের বিভিন্ন স্থানে দূরপাল্লা সব যানবাহন বন্ধ রয়েছে। শহরের জেলা পরিষদ, পৌর মুক্ত মঞ্চ, পৌর মার্কেটসহ বিভিন্ন স্থানে বঙ্গবন্ধুর ম্যুরাল ভেঙে ফেলে।

স্বাধীনতা সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে বিভিন্ন স্থানে আলোকসজ্জা ও সড়ক সজ্জিতকরণ ব্যানার ফেস্টুন ভেঙে আগুন ধরিয়ে দেয় বিক্ষুব্ধরা।

এই বিভাগের আরও খবর