,

২৭ বছরেও পূর্ণতা পায়নি দক্ষিণডিহির ‘রবীন্দ্র কমপ্লেক্স’

খুলনা ব্যুরো:  দীর্ঘ ২৭ বছরেও পূর্ণতা পায়নি বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের শ্বশুরবাড়ি ফুলতলার দক্ষিণডিহির ‘রবীন্দ্র কমপ্লেক্স’। এখানে রবীন্দ্রনাথের কর্মময় জীবনের ওপর সংগ্রহশালা কাম লাইব্রেরি এবং অডিটোরিয়ামসহ রবীন্দ্র চর্চা কেন্দ্র ও রেস্ট হাউস নির্মাণের দাবি এখনো বাস্তবায়ন হয়নি। শুধু প্রতিশ্রুতির মধ্যেই সীমাবদ্ধ রয়েছে কবির স্মৃতিবিজড়িত এই কমপ্লেক্সের উন্নয়ন কাজ।

এদিকে রবীন্দ্রনাথের ১৬১তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে দক্ষিণডিহিতে আগামী ৮ মে থেকে শুরু হচ্ছে তিন দিনব্যাপী জন্মজয়ন্তী ও লোকজমেলা।

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জন্মবার্ষিকীর কর্মসূচি : আগামী ২৫ থেকে ২৭ বৈশাখ-১৪২৯ বঙ্গাব্দ, ৮-১০ মে খুলনার ফুলতলা উপজেলার দক্ষিণডিহি রবীন্দ্র কমপ্লেক্সে খুলনা জেলা প্রশাসন তিন দিনব্যাপী অনুষ্ঠান ও লোকজমেলার আয়োজন করেছে।

২৫ বৈশাখ, ৮ মে বিকেল ৪টায় উদ্বোধন অনুষ্ঠান ও সাড়ে ৪টায় আলোচনা সভা, ৯ মে বিকেল সাড়ে ৪টায় আলোচনা সভা এবং ১০ মে বিকেল সাড়ে ৪টায় আলোচনা সভা ও সমাপনী অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হবে। প্রতিদিন সন্ধ্যা ৭টা থেকে রাত সোয়া ৯টা পর্যন্ত সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান চলবে।

এ ছাড়া রূপসা উপজেলার পিঠাভোগে তিন দিনব্যাপী অনুষ্ঠানমালার আয়োজন করা হয়েছে। ৮ মে সকাল ১০টায় উদ্বোধন অনুষ্ঠান, সাড়ে ১০টায় শিশুদের চিত্রাংকন প্রতিযোগিতা, বেলা আড়াইটায় রবীন্দ্র সংগীত প্রতিযোগিতা, বিকেল ৪টায় আলোচনা সভা ও সাড়ে ৫ টায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে।

৯ মে বেলা আড়াইটায় বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কবিতা আবৃত্তি প্রতিযোগিতা, বিকেল ৪টায় আলোচনা সভা ও সাড়ে ৫টায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। ১০ মে বেলা আড়াইটায় রবীন্দ্র সংগীতের সাথে নৃত্য প্রতিযোগিতা, বিকেল ৪টায় আলোচনা সভা ও সমাপনী অনুষ্ঠান এবং সাড়ে ৫টায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হবে।

করোনার কারণে গত ৩ বছর কোনো অনুষ্ঠান আয়োজন করতে না পারলেও এবার ঈদের পরের এই উৎসবকে ঘিরে আয়োজক ও দর্শকদের মধ্যে রয়েছে আলাদা উদ্দীপনা। সরকারি পৃষ্টপোষকতায় ইতোমধ্যে কবির স্মৃতিধন্য রবীন্দ্র কমপ্লেক্সেকে নতুনরূপে সাজনো হয়েছে।

ফুলতলা উপজেলা নির্বাহী অফিসার সাদিয়া আফরিন বলেন, তিন দিনব্যাপি অনুষ্ঠানমালার প্রস্তুতি প্রায় সম্পন্ন। সকলের সহযোগিতায় অনুষ্ঠান সুন্দর ও সুচারুভাবে সম্পন্ন হবে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ১৯৯৫ সালে খুলনা জেলার তৎকালীন জেলা প্রশাসক কাজী রিয়াজুল হক দক্ষিণডিহিতে রবীন্দ্রনাথের শ্বশুরবাড়ি অবৈধ দখলমুক্ত করার উদ্যোগ নেন। স্মৃতিবিজড়িত বাড়িটি অবৈধ দখলমুক্ত হওয়ার পর সংরক্ষণ ও সংস্কারের উদ্যোগ নেওয়া হয়। ২০০০ সালের ৮ আগস্ট বাড়িটি দেখাশোনার দায়িত্ব দেওয়া হয় প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরকে।

পরে সংশ্লিষ্ট অধিদপ্তর দক্ষিণডিহিতে পূর্ণাঙ্গ রবীন্দ্র কমপ্লেক্স নির্মাণের জন্য সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের কাছে ৪৯ লাখ টাকা চেয়ে চিঠি দেয়। মন্ত্রণালয় এ বাবদ ২২ লাখ টাকা বরাদ্দ দেয়। ওই টাকা দিয়ে ২০১২ সালের মাঝামাঝি ভবন সংস্কার, একপাশে বাউন্ডারি ওয়াল নির্মাণ, বিদ্যুৎ সংযোগসহ অন্যান্য কাজ শেষ করে।

তবে এর আগে দ্বিতলা ভবনের সামনে বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এবং তার স্ত্রী মৃণালিনী দেবীর আবক্ষ মূর্তি স্থাপন করা হয়েছিল। এ ছাড়া সেই পুরানো ছবেদা তলায় নির্মিত হয়েছিল মৃণালিনী মঞ্চ। কিন্তু বাড়িটি ঘিরে রবীন্দ্রনাথের কর্মময় জীবনের ওপর সংগ্রহশালা কাম লাইব্রেরি এবং অডিটোরিয়ামসহ রবীন্দ্র চর্চা কেন্দ্র ও রেস্ট হাউস নির্মাণের দাবি এখনো বাস্তবায়ন হয়নি। এখনো উপেক্ষিত রয়েছে পর্যটন কেন্দ্র গড়ে তোলা, পিকনিক স্পট নির্মাণ, রবীন্দ্র কমপ্লেক্সে প্রবেশের ৩টি রাস্তা প্রশস্তকরণ।

এ ছাড়া এখানে কুষ্টিয়ার শিলাইদহে প্রস্তাবিত রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি শাখা ক্যাম্পাস বা স্বতন্ত্র ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠা, বেজেরডাঙ্গা রেলস্টেশনের নাম পরিবর্তন করে দক্ষিণডিহি রেলস্টেশন এবং খুলনা-বেনাপোলগামী ট্রেনকে মৃণালিনী এক্সপ্রেস নামকরণও বাস্তবায়ন হয়নি। তবে বর্তমানে দৃশ্যমান কাজের মধ্যে শুধুমাত্র সীমানা প্রাচীর, মূল ভবনের সংস্কার ও রঙের কাজ, নিচতলায় অপূর্ণাঙ্গ লাইব্রেরি, সংগ্রহশালা ও দর্শনার্থীদের অবসর যাপনের জন্য ছাউনি তৈরী ও টয়লেট নির্মিত হয়েছে। সম্প্রতি দৃষ্টিনন্দন পার্কের কাজও সম্পন্ন হয়েছে।

অবশ্য দক্ষিণডিহিতে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের শ্বশুরবাড়ি ২০১৬ সালের ১০ মে ‘দক্ষিণডিহি রবীন্দ্র স্মৃতি যাদুঘর’ হিসেবে স্বীকৃতি পায়। তবে ২০১৫ সালের ১ এপ্রিল থেকে দেশি ও বিদেশি দর্শণার্থীদের জন্য টিকিটের প্রচলন করা হয়। দেশি দর্শণার্থীদের ২০ টাকা এবং বিদেশিদের জন্য ৫০ টাকা টিকিটের মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে।

এই বিভাগের আরও খবর