,

হেমন্তের মাঠে কৃষকের হাসি

কৃষি ডেস্ক: চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে নবান্নের মৌ মৌ ঘ্রাণ, কার্তিকের সোনা ধানে ভরে যায় গোলা। শীতের হিম হিম ভাব যেন শীতের আগাম বার্তা বহন করছে। ভোরের শিশিরে ঘাসের ওপর সোনা রোদ, এ যেন প্রকৃতির অপরূপ এক খেলা। চলছে হেমন্ত কাল। কিছুদিন পরই আসবে শীত। শীতের আগে হেমন্ত যেন প্রকৃতিকে সাজিয়েছে নবরূপে। হেমন্তের মাঠে মাঠে তাই কৃষকের হাসি। ষড়ঋতুর হেমন্তকে নিয়ে লিখেছেন মরিয়ম আক্তার-

বাংলাদেশ ষড়ঋতুর দেশ। ছয়টি ঋতুর সংমিশ্রণে প্রকৃতি ছয়বার সাজে নবরূপে। প্রকৃতি বন্দনায় লোকালয়ও যেন থেমে থাকে না। ঋতুচক্রের ঋতুরানি শরতের পর আসে হেমন্তের প্রাণপ্রবাহ। হিমের ঘন ঘোমটায় সুখ ডেকে এসে উপস্থিত হয় হেমন্ত। প্রকৃতি যেন সদ্যস্নাত তরুণীর মূর্তি পরিগ্রহ করে দেখা দেয় অপরূপ মহিমায়। হেমন্তের মূর্তিতে নিহিত রয়েছে একটি পরিতৃপ্তির হাসি।

ঋতুনাট্যের চতুর্থ কুশীলব হেমন্তকাল। হেমন্তে আছে সুদূর ব্যাপ্ত এক বৈরাগ্যের বিষণ্নতা। সে যেন ফসল ফলাবার সাধনায় থাকে নিমগ্ন। মাঠে মাঠে, রাশি রাশি সোনালি ফসল কাটার গান। চারদিকে কৃষকদের ফসল নিয়ে কর্মব্যস্ততা। ঘরে ঘরে নবান্ন উৎসব। নতুন চালের পিঠাপুলিতে চারদিক মুখরিত করে তোলে। আত্মীয়-স্বজনকে পিঠাপুলির নিমন্ত্রণ যেন এক বৈচিত্রময় উৎসব।

হেমন্তে আকাশজুড়ে ছড়িয়ে পড়ে এক অপরূপ লাবণ্য। তাই তো হেমন্তকে নিয়ে কবি সুফিয়া কামাল লিখেছিলেন, ‘সবুজ পাতার খামের ভেতর হলুদ গাঁদা চিঠি লেখে/কোন পাথারের ওপার থেকে/আনল ডেকে হেমন্তকে/আনল ডেকে মটরশুঁটি, খেসারি আর কলাই ফুলে/আনল ডেকে কুয়াশাকে/সাঁঝ সকালে নদীর কূলে।’

ধূসরতাই হেমন্তের বর্ণ, কিন্তু সে ধূসরতায় রিক্ততা নেই- আছে স্নিগ্ধতা। হেমন্তের পরিপূর্ণতায় মানুষের প্রাণে জাগে এক অজানা আনন্দের আভাস, জাগে এক অজানা আনন্দের শিহরণ। হেমন্তের দূর্বাঘাসের ওপরে শিশির বিন্দুগুলো মুক্তোর মত উজ্জ্বল হয়ে ওঠে। হেমন্তের জীবন ত্যাগের মহিমায় প্রজ্জ্বল। ঘরে ঘরে ফসলের সওগাত বিলিয়ে দেওয়ার জন্য তার আগমন। নিজেকে উজার করে দেওয়াই যেন তার ব্রত। নিজেকে নিঃশেষ করে দেওয়াই তার সার্থকতা।

হেমন্ত নতুন শাক-সবজির পসরা বহন করে আনে মানুষের দুয়ারে। এ সময়টাতে গ্রামের প্রকৃতি সাজে নবরূপে। কৃষাণী বধূ ঘরে ধান তোলার যত আয়োজন আছে সব সেরে ফেলে। তবে গ্রামের মাঠগুলোতে এখনো দেখা মেলে সবুজের মাঝে সোনা রোদের খেলা। ক্ষেতে দেখা মেলে বিভিন্ন শাক-সবজির। বিশেষ করে ফুলকপি, বাঁধাকপি- আরো কত কী।

হেমন্তের গল্প মায়ের মুখে খুব শুনেছি। তখন নববধূরা সারা বছর অপেক্ষায় থাকতেন, কবে হেমন্ত আসবে, কবে নতুন ধান আসবে, কবে নোলক কেনা হবে। আরো কত কী! যদি রবীন্দ্রনাথের কবিতার মত বলি- তবে বলতে হয়, ‘আজ ধানের ক্ষেতে রোদ্রছায়ার লুকোচুরি/খেলা রে ভাই, লুকোচুরি খেলা।/নীল আকাশে কে ভাসালো সাদা মেঘের/ভেলা রে ভাই, লুকোচুরি খেলা।’

বাংলাদেশের হেমন্তকাল রূপ-লাবণ্যে বরাবরই অনন্য। বাংলা সাহিত্য-সংস্কৃতি, চিন্তা-চেতনা, জীবন যাপনে হেমন্তের উপস্থিতি আলোকময়। তবে ইদানিং মহাকালের হেমন্ত, বাংলার হেমন্তকাল, নবান্ন গ্রাম ছাড়িয়ে শহুরে রূপ নিয়েছে। প্রতিবছর এখন শহরে নবান্ন উৎসব হয়। এখন গ্রামকে স্মরণ করতে, অতীতকে মনে করিয়ে দিতে শহরে বেশ জানান দিয়েই নবান্ন উৎসব পালিত হয়।

লেখক: শিক্ষার্থী, কড়ৈতলী উচ্চ বিদ্যালয়, চাঁদপুর।

এই বিভাগের আরও খবর