,

গোপালগঞ্জসহ তিন জেলায় ব্রি-৭ ধানের বাম্পার ফলন

জেলা প্রতিনিধি, গোপালগঞ্জ:  বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের (ব্রি) গোপালগঞ্জ আঞ্চলিক কার্যালয় গোপালগঞ্জ, বাগেরহাট ও নড়াইল জেলার ধানের উৎপাদন বৃদ্ধিতে কাজ করছে।

গোপালগঞ্জ আঞ্চলিক কার্যালয় ২০১৮ সাল থেকে এসবজেলায় ব্রি উদ্ভাবিত উচ্চ ফলনশীল ও হাইব্রিড জাতের ধানের চাষাবাদে কৃষককে উৎসাহিত করা হচ্ছে। ব্রি’র উচ্চ ফলনশীল ও হাইব্রিড জাতের ধানের আবাদ করে কৃষক বাম্পার ফলন পেয়ে লাভবান হচ্ছেন। এভাবে গোপালগঞ্জ আঞ্চলিক কার্যালয় ব্রি উদ্ভাবিত ধানের জাত ৩ জেলার কৃষকদের মাঝে ছড়িয়ে দিচ্ছে।

চলতি আউশ মৌসুমে ব্রি, গোপালগঞ্জ আঞ্চলিক কার্যালয়ের সহযোগিতায় গোপালগঞ্জ, বাগেরহাট ও নড়াইল জেলার কৃষক ব্রি হাইব্রিড ধান-৭ চাষাবাদ করে বাম্পার ফলন পেয়েছে। এ জাতের ধান প্রতি হেক্টরে ৭ টন ফলন দিয়েছে। স্বল্প জীবকাল সম্পন্ন এ জাতের ধান চাষ করে কৃষক একই জমিতে বছরে অন্তত ৩ টি ফসল ফলাতে পারছেন। এতে ফসলের নিবিড়তা বৃদ্ধি পাচ্ছে। কৃষকের আয় বাড়ছে কয়েকগুন। এ কারণে তাদের আর্থ সামাজিক অবস্থার পরিবর্তন ঘটছে।

ব্রি, গোপালগঞ্জ আঞ্চলিক কার্যালয়ের সিনিয়র সাইন্টিফিক অফিসার ও প্রধান ড. মোহাম্মদ জাহিদুল ইসলাম বলেন, ‘আউশ মৌসুমে আমার ২ হাজার কেজি ব্রি হাইব্রিড ধানের বীজ বিনামূল্যে বিতরণ করেছি। এরমধ্যে গোপালগঞ্জ জেলায় ১ হাজার কেজি, বাগেরহাট জেলায় ৬০০ কেজি ও নড়াইল জেলায় ৪০০ কেজি ধান বীজ বিতরণ করি। ২ হাজার কেজি ধান বীজ দিয়ে ৩ জেলার কৃষক ৩০০ একর জমি চাষাবাদ করেন। প্রতি হেক্টরে এ ধান ৭ টনেরও বেশি ফলন দিয়েছে। এ জাতটি আউশ মৌসুমের একটি জনপ্রিয় জাত। এ জাতের জীবনকাল মাত্র ১১৫ দিন। এ ধান কাটার পর কৃষক জমিতে আমন ধানের আবাদ করতে পারেন। ক্ষেত থেকে আমন ধান কাটার পর সরিষা বা বোরো ধান করতে পারেন। এতে কৃষক বছরে একটি জমি থেকে ৩টি ফসল পেয়ে লাভবান হচ্ছে। একদিকে যেমন ফসলের নীবিড়তা বৃদ্ধি পাচ্ছে, অন্যদিকে কৃষকের আর্থসামাজিক অবস্থার পরিবর্তন ঘটছে। এতে দেশের খাদ্য উৎপাদন বাড়ছে।’

বাগেরহাট জেলার শরণখোলা উপজেলার মধ্য খোন্তাকাটা গ্রামের কৃষক ফারুক জোমাদ্দার ও হালিম হাওলাদার বলেন, ‘গত বছর আমরা ১০০ বিঘা জমিতে এ ধানের আবাদ করেছিলাম। ধানের ভাল ফলন পেয়ে এ বছর আমরা ১৫০ বিঘা জমিতে এ ধানের আবাদ করেছি। ব্রি হাইব্রিড ধান-৭ চাষ করে হেক্টরে এ বছর ৭ টন ফলন পেয়েছি। স্বল্প জীবনকাল সম্পন্ন এ জাতটি চাষাবাদ করে একই জমি থেকে বছরে ৩টি ফসল উৎপাদন করতে পারছি। আগে যেখানে মাত্র ১টি ফসল করতে পারতাম, এখন সেখানে ৩টি ফসল করে অধিক ফসল ফলাতে পারছি। এতে আমাদের লাভ হচ্ছে। আমাদের আর্থসামাজিক অবস্থার পরিবর্তন ঘটেছে। এ কৃতিত্ব ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের গোপালগঞ্জ আঞ্চলিক কার্যালয়ের।

শরণখোলা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা দেবব্রত সরকার বলেন, ‘আমার উপজেলার কৃষকদের কাছে ব্রি হাইব্রিড ধান-৭ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। গত বছর তারা ১০০ বিঘা জমিতে এ ধানের চাষ করেছিল। ফলন ভাল পেয়ে এ বছর ১৫০ হেক্টর জমিতে এ ধানের চাষাবাদ করেছেন। এ জাতের ধান আবাদে কৃষকের আগ্রহ বাড়ছে। একই জমিতে বছরে তিনটি ফসল করতে পারায় কৃষকরা উপকৃত হচ্ছেন।’

ব্রি, গোপালগঞ্জ আঞ্চলিক কার্যালয়ের সাইন্টিফিক অফিসার খালিদ হাসান তারেক বলেন, ‘আমরা দেশের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে চাই । সেই সাথে খাদ্য উৎপাদন বৃদ্ধি ও কৃষকরে আয় দ্বিগুন করে দিতে আমরা কাজ করছি। খোরপোষের কৃষিকে আমরা বাণিজ্যিক কৃষিতে রূপান্তর করছি। সে জন্যই তিন জেলায় ব্রি উদ্ভাবিত ধানের জাত আমরা কৃষকের মাঝে ছড়িয়ে দিচ্ছি। এক ফসলী জমিকে আমরা দুই ফসলী এবং দুই ফসলি জমিকে আমরা ৩ ফসলি জমিতে পরিণত করছি।’

এই বিভাগের আরও খবর