,

সালমান শাহকে কেউ হত্যা করেননি : পিবিআই

চিত্রনায়ক সালমান শাহ (ফাইল ফটো)

 নিজস্ব প্রতিবেদক: দুই যুগ আগের তুমুল জনপ্রিয় চিত্রনায়ক সালমান শাহ হত্যার শিকার হননি, তিনি আত্মহত্যা করেছিলেন বলে আবারও প্রতিবেদন দাখিল করতে যাচ্ছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। এ নিয়ে এটি তৃতীয় দফা তদন্ত প্রতিবেদন। আগের দুটি তদন্ত প্রতিবেদনেও তাকে হত্যার অভিযোগের প্রমাণ মেলেনি।

সোমবার (২৪ ফেব্রুয়ারি) রাজধানীর ধানমন্ডিতে পিবিআই সদর দপ্তরে এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানায় সংস্থাটি।

সংবাদ সম্মেলনে পিবিআইয়ের মহাপরিচালক বনজ কুমার মজুমদার জানান, চিত্রনায়িকা শাবনূরের সঙ্গে অতিরিক্ত ঘনিষ্ঠতার কারণে সালমান শাহের পরিবারে কলহ সৃষ্টি হয়। অপরদিকে স্ত্রী সামিরার কারণে তিনি তার মাকে ছেড়ে দূরে ছিলেন। এতে মানসিক যন্ত্রণা তাকে ঘিরে ধরে। এসব থেকে বাঁচতে অভিমানী সালমান আত্মহত্যার পথ বেছে নেন। এ নায়কের আত্মহত্যার কারণ হিসেবে এগুলোই দায়ী বলে মনে করে সংস্থাটি।

চিত্রনায়ক সালমান শাহের রহস্যজনক মৃত্যুর ২৩ বছর পেরিয়ে গেছে। ১৯৯৬ সালের ৬ সেপ্টেম্বর মৃত্যুর পর দীর্ঘ এই সময়েও বাংলা সিনেমার অমর নায়কের মৃত্যুর রহস্য উদঘাটন হয়নি।

আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কয়েক দফা তদন্তে সালমানের মৃত্যুকে আত্মহত্যা বলে উল্লেখ করা হলেও তা অদ্যাবধি মেনে নিতে পারেনি তার পরিবার, সুহৃদ ও অগুনিত ভক্ত।

সর্বশেষ তিন বছর আগে ২০১৬ সালের শেষ দিকে পিবিআইকে নতুন করে তদন্তভার দেওয়া হয়।

সেই তদন্তের সূত্র ধরেই সোমবার পিবিআই সদর দপ্তরে সালমান শাহর হত্যার রহস্য নিয়ে কথা বলে সংস্থাটি।

এর আগে ২০১৯ সালের ১ সেপ্টেম্বর পিবিআই সালমান শাহর রহস্যজনক মৃত্যু নিয়ে আদালতে মামলার ‘তদন্ত অগ্রগতি’ প্রতিবেদন জমা দেয়। তবে সেই প্রতিবেদনে ‘উল্লেখযোগ্য অগ্রগতির’ কোনো তথ্য দেয়নি।

দীর্ঘদিন ধরে তদন্তাধীন এ মামলার অনেক সাক্ষী ও আলামত নষ্ট হয়ে যাওয়ার ফলে মৃত্যুরহস্য উদঘাটনে খোদ তদন্ত সংস্থাই হিমশিম খাচ্ছে।

চিত্রনায়ক চৌধুরী মোহাম্মদ শাহরিয়ার (ইমন) ওরফে সালমান শাহ ১৯৯৬ সালের ৬ সেপ্টেম্বর মারা যান। সে সময় এ বিষয়ে অপমৃত্যুর মামলা দায়ের করেছিলেন তার বাবা প্রয়াত কমরউদ্দিন আহমদ চৌধুরী।

পরে সালমান শাহর বাবা ১৯৯৭ সালের ২৪ জুলাই অপমৃত্যুর মামলাটিকে হত্যা মামলায় রূপান্তরিত করার আবেদন জানান। আদালত সিআইডিকে অপমৃত্যু মামলার সঙ্গে হত্যাকাণ্ডের অভিযোগের বিষয়টি একসঙ্গে তদন্ত করতে নির্দেশ দেন।

পরে সিআইডি গত ৩ নভেম্বর আদালতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন জমা দেয়। সেখানে সালমান শাহর মৃত্যুকে আত্মহত্যা বলে উল্লেখ করা হয়। ঢাকার সিএমএম আদালতে ২৫ নভেম্বর উক্ত চূড়ান্ত প্রতিবেদন গৃহীত হয়। সিআইডির প্রতিবেদন প্রত্যাখ্যান করে তার বাবা কমরউদ্দিন আহমদ চৌধুরী রিভিশন মামলা দায়ের করেন।

আদালত ২০০৩ সালের ১৯ মে মামলাটি বিচার বিভাগীয় তদন্তে পাঠায়। এরপর প্রায় ১৫ বছর মামলাটি বিচার বিভাগীয় তদন্তে ছিল। ২০১৪ সালের ৩ আগস্ট ঢাকার সিএমএম আদালতের বিচারক বিকাশ কুমার সাহার কাছে বিচার বিভাগীয় তদন্তের প্রতিবেদন দাখিল করেন মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট ইমদাদুল হক। এ প্রতিবেদনে সালমান শাহর মৃত্যুকে অপমৃত্যু হিসেবে উল্লেখ করা হয়।

২০১৪ সালের ২১ ডিসেম্বর সালমান শাহের মা নীলা চৌধুরী ছেলের মৃত্যুতে বিচার বিভাগীয় তদন্ত প্রতিবেদন প্রত্যাখ্যান এবং ওই প্রতিবেদনের বিরুদ্ধে নারাজি দেবেন বলে আবেদন করেন।

২০১৫ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি নীলা চৌধুরী ঢাকা মহানগর হাকিম জাহাঙ্গীর হোসেনের আদালতে বিচার বিভাগীয় তদন্ত প্রতিবেদনের বিষয়ে নারাজির আবেদন দাখিল করেন।

নারাজি আবেদনে উল্লেখ করা হয়, আজিজ মোহাম্মদ ভাইসহ ১১ জন তার ছেলে সালমান শাহর হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকতে পারেন।

মামলাটি র‌্যাবকে তদন্ত দেওয়ার আদেশের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষ গত বছরের ১৯ এপ্রিল মহানগর দায়রা জজ আদালতে একটি রিভিশন মামলা করে।

২০১৬ সালের ২১ আগস্ট ঢাকার বিশেষ জজ ৬-এর বিচারক ইমরুল কায়েস রাষ্ট্রপক্ষের রিভিশনটি মঞ্জুর করেন এবং র‌্যাবকে মামলাটি আরও তদন্ত করার আদেশ দেন।

এই বিভাগের আরও খবর