,

সরে গেল আ. লীগ, ‘কপাল খুলছে’ সেই সাত্তারের!

জেলা প্রতিনিধি, ব্রাহ্মণবাড়িয়া: আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত তিন প্রার্থী ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ (সরাইল-আশুগঞ্জ) আসনের সংসদ সদস্য নির্বাচনের মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করে নিয়েছেন। জেলা নেতাদের মাধ্যমে কেন্দ্রীয় নির্দেশনা পেয়ে শনিবার সকালে তারা মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করে নেন।

মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করা ওই তিনজন হলেন জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও জেলা ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুল বারী চৌধুরী মন্টু, জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মো. মঈন উদ্দিন মঈন, স্বাধীনতা শিক্ষক পরিষদের সাধারণ সম্পাদক ও আওয়ামী লীগ নেতা অধ্যক্ষ শাহজাহান আলম সাজু। ১৯৭৩ সালের পর এ আসনে আওয়ামী লীগের কোনো প্রার্থী সংসদ সদস্য হতে পারেননি।

প্রার্থী হিসেবে রয়ে যাওয়া পাঁচজন হলেন পাঁচবারের সাবেক সংসদ সদস্য আবদুস সাত্তার ভূঁইয়া, স্বতন্ত্র প্রার্থী ও এ আসনের জাতীয় পার্টির সাবেক সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট জিয়াউল হক মৃধা, জাতীয় পার্টির মনোনীত প্রার্থী ও জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব আবদুল হামিদ ভাসানী, স্বতন্ত্র প্রার্থী ও আশুগঞ্জ উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান এবং উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি আবু আসিফ আহমেদ, জাকের পার্টির প্রার্থী মো. জহিরুল ইসলাম। মোট ১৩ জন মনোনয়নপত্র কিনলে পাঁচজনের বাতিল হয়।

শুক্রবার জেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে প্রার্থীদের সঙ্গে হওয়া বৈঠকে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি র আ ম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক আল-মামুন সরকারসহ দলের কয়েকজন সিনিয়র নেতা উপস্থিত ছিলেন। বৈঠকে জানানো হয়, উপনির্বাচনের এক বছর পরই সেখানে হওয়া পরবর্তী নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন পেতে হলে যেন প্রার্থীরা সিদ্ধান্ত মেনে নেন।

এ অবস্থায় আসনটিতে কপাল খুলতে যাচ্ছে পদত্যাগ-পরবর্তী বহিষ্কার হওয়া বিএনপির সাবেক নেতা আব্দুস সাত্তার ভূঁইয়ার! সংসদ থেকে বিএনপির পদত্যাগকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে সাত্তারকে সরকার নির্বাচনে দাঁড় করিয়েছেন বলে দলটির পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হচ্ছিল।

জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আল-মামুন সরকার দলের সঙ্গে জড়িত প্রার্থীদের নিয়ে আলোচনা করার বিষয়টি স্বীকার করেন। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘এখানে যেহেতু দল কোনো প্রার্থী দেয়নি সে ক্ষেত্রে দলের কথা বলে কেউ প্রার্থী হতে পারেন না। তারা স্বেচ্ছায় মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করেছেন। এ সময় তাদের সঙ্গে ছিলাম।’

শনিবার বিকেলে পৃথক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘এ নির্বাচনটা হতে যাচ্ছে অনেকটা অসময়ে। সামনেই দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন। আমাদের দলের তিনজন প্রার্থী হওয়ায় বিভেদ দেখা যাওয়ার সম্ভাবনা আছে। তাই দলের ঐক্য ঠিক রাখতে এটা ভালো হয়েছে। সম্ভাব্য প্রার্থীরা এখন পরবর্তী নির্বাচনের জন্য মাঠ গোছাতে বেশ সময় পাবেন।’

একটি নির্ভরযোগ্য সূত্র মতে, মূলত আব্দুস সাত্তার ভূঁইয়াকে কেন্দ্র করেই আওয়ামী লীগ প্রার্থীদের সরে যাওয়া। এ আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ ও সুষ্ঠু নির্বাচনে আব্দুস সাত্তার কিংবা অন্য প্রার্থী জয়ী হলে সে ক্ষেত্রে দলীয় কৌশল বাস্তবায়ন হবে, যেটি কেন্দ্রীয় নির্দেশনা।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক রাজনীতিবিদ বলেন, ‘মূলত কৌশলগত কারণে এখানে প্রার্থী দেয়নি আওয়ামী লীগ। এ আসনে পরবর্তী নির্বাচনে প্রার্থী হতে পারেন বিএনপি নেত্রী রুমিন ফারহানা। আব্দুস সাত্তারের জয়লাভের মধ্য দিয়ে যেন এখানে তার ইমেজ ঠিক থাকে এর সুযোগ নিতে চায় আওয়ামী লীগ। কেননা আওয়ামী লীগ মনে করছে আব্দুস সাত্তারের চেয়ে শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী রুমি ফারহানা। পরবর্তী নির্বাচনে আব্দুস সাত্তার থাকলে আওয়ামী লীগের জন্য জয়লাভ অনেকটা সহজ হবে। এ ছাড়া বিএনপির হয়ে পাঁচবারের এমপি হওয়া ব্যক্তি ভোটে দাঁড়িয়ে পাস করানোর বিষয়টিও আলোচনায় আনা যাবে।’

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ১৯৭৩ সালের পর ওই সংসদীয় আসনে আওয়ামী লীগ দলীয় প্রার্থী সংসদ সদস্য নির্বাচিত হননি। সারা দেশে যখন আওয়ামী লীগের জোয়ার তখনো (২০১৮) জোটের মারপ্যাঁচে জাতীয় পার্টির প্রার্থীকে সমর্থন দেওয়ায় সেখানে নিজেদের প্রার্থী দেয়নি আওয়ামী লীগ। সেখানে জাতীয় পার্টির প্রার্থীর ভরাডুবি হয়। নির্বাচনে বিএনপি দলীয় প্রার্থী উকিল আব্দুস সাত্তার ভূঁইয়া জয়লাভ করেন, যিনি পাঁচবারের সংসদ সদস্য। ব্যক্তিগত ও এলাকায় দলীয় অবস্থান বিবেচনায় স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে লড়াই করে সামান্য ভোটে হেরে যান আওয়ামী লীগ নেতা মো. মঈন উদ্দিন মঈন। নির্বাচনকে কেন্দ্র করে দ্বিধাবিভক্ত হয়ে পড়ায় আওয়ামী লীগের ওই নেতা হেরে যান বলে মনে করা হয়।

ভোটের আগে বেশ আলোচনায় আসেন বিএনপি থেকে পদত্যাগ করা পাঁচবারের সংসদ সদস্য ৮৪ বছর বয়সী আব্দুস সাত্তার ভূঁইয়া। দলের কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্তে পদত্যাগ করে ক্ষোভে দল থেকে পদত্যাগ করেন। তার নামে কেনা হয় মনোনয়নপত্র। এর পরপরই তাকে দল থেকে বহিষ্কারের প্রেস বিজ্ঞপ্তি দেয় কেন্দ্রীয় বিএনপি। সর্বশেষ সরাইল ও আশুগঞ্জ উপজেলা বিএনপি তাকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করে।

এই বিভাগের আরও খবর